মিয়ানমারের পক্ষে চীন ও ভারত

চীন-ও-ভারতের পতাকা- সংগৃহীত -

  • আলফাজ আনাম
  • ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২২:১০

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমসহ সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে তৃতীয়বারের মতো জাতিসংঘে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনের সামাজিক, মানবিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক কমিটিতে বিপুল ভোটে প্রস্তাবটি পাস হয়। এবারের প্রস্তাবে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বিভিন্ন উপায়ের সঙ্গে মিয়ানমারকে কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই প্রস্তাব জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে সুস্পষ্ট পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে, যা নিরাপত্তা পরিষদের ওপর সরাসরি চাপ সৃষ্টি করবে।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ব্যর্থতার জন্য মিয়ানমারকে দায়ী করে সুস্পষ্ট রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রদর্শন ও প্রত্যাবর্তনের উপযোগী পরিবেশ তৈরিসহ সুনির্দিষ্ট ১০টি বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।

প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে ১৪০টি দেশ। বিপক্ষে ভোট দিয়েছে চীন, রাশিয়াসহ নয়টি দেশ। ভোট দেয়া থেকে বিরত ছিল ৩২টি দেশ। এরমধ্যে ভারতও রয়েছে। প্রস্তাবটি ভোটে যাওয়ার আগে এর পক্ষে যৌক্তিকতা তুলে ধরে বক্তব্য দেন ফিনল্যান্ড, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, সৌদি আরব ও সুইজারল্যান্ডের প্রতিনিধিরা। তৃতীয় কমিটিতে গৃহীত এই প্রস্তাব আগামী মাসে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্লেনারিতে উপস্থাপিত হবে। ওআইসি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পক্ষে প্রস্তাবটি উপস্থাপন করে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ফিনল্যান্ড।
জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শুরু থেকেই এই প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ, উপস্থাপন ও গ্রহণের ক্ষেত্রে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে মিশন। প্রস্তাবটি পাস হওয়ায় জাতিসংঘ ও এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। মিয়ানমারে সেনা নিপীড়নের মুখে ২০১৭ সালের আগস্টে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার পর ওই বছরই এই কমিটিতে প্রথম প্রস্তাব পাস হয়। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই প্রস্তাব মিয়ানমারকে বিচারের আওতায় আনা ও অবরোধ আরোপের ক্ষেত্রে চাপ সৃষ্টি করবে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীন ও ভারতের সহযোগিতা চাইছে বাংলাদেশ। কিন্তু দেশ দুটি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মিয়ানমারকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। চীনের পাশাপাশি ভারত এখন মিয়ানমারে অস্ত্র সরবরাহ করছে।

এদিকে জাতিসংঘের বিচারিক আদালতে রোহিঙ্গা গণহত্যার দায়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার মামলা ও আর্ন্তজাতিক অপরাধ আদালতে রোহিঙ্গা নিপীড়নের পূর্ণ তদন্ত শুলুরু সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশসহ বিশে^র আরো অনেক দেশ।

হেগে অবস্থিত জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে আলাদা একটি মামলা করে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। এর পরপরই মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংসতার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত অনুমোদন করে আইসিসি। ৫৭ জাতির ইসলামিক সহযোগিতা সংগঠন অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের বা ওআইসির পক্ষে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ আনে গাম্বিয়া। এ অভিযোগের প্রথম শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে ডিসেম্বরে। অপরদিকে আর্জেন্টিনায় মামলা করা হয়েছে মিয়ানমারের বেশকিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। তার মধ্যে রয়েছেন বেসামরিক নেত্রী ও নোবেল পুরস্কারবিজয়ী অং সান সুচি। রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়ে এই প্রথম শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী সুচিকে কোনো আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে আনা হলো।

‘ইউনিভার্সাল জুরিসডিকশন’ বা সর্বজনীন বিচারের আওতায় মামলা করেছে মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলো। ইউনিভার্সাল জুরিসডিকশন হলো এমন একটি আইনি মূলনীতি যার অধীনে অত্যন্ত ভয়াবহ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিচার করা যায়, তা যেখানেই ঘটুক না কেন। এই মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে বেসামরিক নেত্রী অং সান সুচি, সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং সহ আরো কয়েকজনকে। রোহিঙ্গারা তাদের অস্তিতের বিরুদ্ধে যে হুমকি মোকাবিলা করছে তার জন্য এসব নেতাকে বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে। এমন মামলা আর্জেন্টিনার আদালত অতীতেও গ্রহণ করেছে।