কত দ্রুত হেরে গেল ইসরায়েল!

হামাসের স্নাইপাররা - সংগৃহীত

  • ফারজানা তানিয়া
  • ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৯:২৪

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার কয়েকজন মন্ত্রী বেশ বড় গলায় বলেছিলেন, হামাসকে ধ্বংস করেই পণবন্দিদের উদ্ধার করবেন তারা। তাদের পরিকল্পনা ছিল- গাজা উপত্যকাকে ইসরায়েলের অংশ করে নেবেন। ফিলিস্তিনিদের বিতাড়িত করে সেখানে ইহুদি বসতি হবে; ভূমধ্যসাগরের পাড়ে নয়নাভিরাম পর্যটনকেন্দ্র গড়ে উঠবে। অল্পদিনের ব্যবধানে সেই স্বপ্নগুলো ধূলোয় মিশিয়ে দিয়েছেন ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ যোদ্ধারা। ফিলিস্তিন, লেবানন, সিরিয়া, ইরাক এবং ইয়েমেন থেকে ইসরায়েল এবং তার প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যে সমন্বিত হামলা হচ্ছে, তাতে পশ্চিমা এবং ইসরায়েলিরা নিশ্চিত, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনকে পরাজিত করা সহজ নয়। গাজায় যে ইসরায়েল পরাজয়ের মুখে পড়েছে, তা অকপটে স্বীকার করছেন বিশ্লেষকরা।

এখন গাজা উপত্যকার উত্তরে গাজাসিটিতে পুলিশ বাহিনী মোতায়েন এবং কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে হামাস। মার্কিন সংবাদ সংস্থা এপি এ-সপ্তাহে বলেছে, উত্তরের যে-এলাকাগুলো থেকে ইসরায়েলি সেনারা পালিয়েছেন, সেখানে এই প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরুর কাজে মনোনিবেশ করেছে গাজার শাসক-গোষ্ঠী। খবরে বলা হয়, চার মাস ধরে ইসরায়েলের ভয়াবহ বিমানহামলা এবং নৃশংস স্থলহামলার পরও গাজার বৃহত্তম শহরে হামাসের এই স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরে আসা তাদের দৃঢ় অবস্থান এবং মনোবলকে নির্দেশ করছে। গাজার কয়েকজন বাসিন্দা এপি-কে বলেছেন, উপত্যকার বৃহত্তম মেডিকেল ফ্যাসিলিটি শিফা হাসপাতাল, পুলিশ সদরদপ্তর এবং অন্য সরকারি অফিসগুলোর কাছে ইউনিফর্মধারী এবং সাদা-পোশাকের পুলিশ কর্মকর্তাদের মোতায়েন করা হয়েছে। হামাসের স্থানীয় এক কর্মকর্তা বলেছেন, সংগঠনের নেতারা উত্তরের বিভিন্ন অংশে ফের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। বিশেষত, ইসরায়েলি নির্দেশনায় যারা বাড়িঘর ছেড়ে দক্ষিণাঞ্চলে চলে গিয়েছিলেন, তাদের পরিত্যক্ত দোকানপাট এবং বাড়িঘরের মালামাল রক্ষায় মনোযোগ দিতে বলেছেন তারা।

গাজার উত্তরে শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি মধ্য ও দক্ষিণ গাজায় সপ্তাহের ৭ দিনই ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনগুলো বিভিন্ন ডিরেকশনে ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে তীব্র লড়াই করেছে। ট্যাঙ্ক-বিধ্বংসী ইয়াসিন আরপিজির মাধ্যমে তারা বহু ইসরায়েলি মারকাভা ট্যাঙ্ক এবং ডি-নাইন বুলডোজার ধ্বংস করেছেন। ইসরায়েলি সেনাদের দুর্গ হিসেবে ব্যবহার করা বহু আবাসিক ভবন অ্যান্টি-ফর্টিফিকেশন টিবিজি শেল দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছেন। দখলদার বাহিনীর আশ্রয় নেওয়া কিংবা লুকিয়ে অবস্থান করা বহু ভবনেও হামলা হয়েছে। এতে বিপুল ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন। প্রতিরোধ যোদ্ধাদের স্নাইপাররাও বেশ কয়েকজন ইসরায়েলি সেনাকে হত্যা করেন। এমন কোনো খবর পাওয়া যায়নি, যেখানে প্রতিরোধ যোদ্ধারা পিছু হটেছেন; সর্বত্র তাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে। শুধু আল-কাসসাম নয়, আল-আকসা মার্টারস ব্রিগেডস, মুজাহিদিন ব্রিগেডস, আল-কুদস ব্রিগেডস, মার্টার ওমর আল-কাসেম ফোর্সেস-সহ সব প্রতিরোধ গ্রুপই দুর্দান্ত অভিযান চালিয়েছেন। এই সপ্তাহে ইসরায়েলের ভেতরে এবং গাজায় দখলদার সেনাদের লক্ষ্য করে বিপুল রকেট নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটেছে।

একদিকে হামলা, অন্যদিকে যুদ্ধবিরতি নিয়েও ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠনগুলো। যুক্তরাষ্ট্র, কাতার এবং মিসরের মধ্যস্থতাকারীরা হামাস-নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় যোগাযোগ করেছেন। হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া এবং ইসলামিক জিহাদ আন্দোলনের প্রধান জিয়াদ আল-নাখালা এ-নিয়ে বৈঠক করেন। তারা জোর দিয়ে বলেন, যুদ্ধবিরতি এবং বন্দিবিমিনয় সংক্রান্ত যে-কোনো আলোচনায় তাদের অংশগ্রহণের একমাত্র ভিত্তি হচ্ছে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন পুরোপুরি বন্ধ করা। দুই নেতা উল্লেখ করেন, তাদের বাকি শর্তগুলো হচ্ছে- গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহার, ২০০৭ সাল থেকে চলা অবরোধ প্রত্যাহার, গাজা পুনর্গঠন, ফিলিস্তিনিদের জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় সব পণ্যের অবাধ প্রবেশ এবং অবশেষে একটি ব্যাপকভিত্তিক বন্দিবিনিময়। মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে হামাস। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, এই প্রতিক্রিয়ায় একটি সমন্বিত এবং পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতির কথা বলা হয়েছে, যা মূল প্রস্তাবে ছিল না। মধ্যস্থতাকারীদের কাছে পেশ করা এই প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ, ত্রাণ-আশ্রয়-পুনর্গঠন নিশ্চিত করা, গাজা উপত্যকা থেকে অবরোধ প্রত্যাহার এবং বন্দিবিনিময়ের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরা হয়েছে। এ-প্রসঙ্গে হামাসের সিনিয়র নেতা মাহমুদ মারদাওয়ি বলেন, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ছাড়া আমরা কোনো চুক্তিতে যাব না। ইসলামিক জিহাদের উপ-মহাসচিব মোহাম্মদ আল-হিন্দি বলেছেন, তার সংগঠনসহ গাজার সব প্রতিরোধ সংগঠনের সঙ্গে সমন্বয় করে হামাস এই জবাব দিয়েছে। তিনি বলেন, গাজায় আগ্রাসন সম্পূর্ণ বন্ধ করে দখলদার সেনাদের ফিরিয়ে নিতে হবে এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত উপত্যকার পুনর্গঠন শুরু করতে হবে।

যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যে ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্রকে চাপে রাখতে ইয়েমেনের হুথি আনসার-আল্লাহ আন্দোলন হামলার গতি আরও তীব্র করেছে। ইয়েমেনের মাটিতে মার্কিন-ব্রিটিশ যৌথ হামলার পর তারা যে কঠোর প্রতিশোধের হুমকি দিয়েছিলেন, বাস্তবে তা দেখা গেছে। হুথি-সমর্থিত সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি মঙ্গলবার জানিয়েছেন, লোহিত সাগরে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের মালিকানাধীন দুটি জাহাজকে লক্ষ্য করে সামরিক অভিযান পরিচালনা করেছেন তারা। প্রথম অপারেশনটি হয় মার্কিন জাহাজ ‘স্টার সাসিয়া’-র বিরুদ্ধে; অন্যটি ব্রিটিশ জাহাজ ‘মর্নিং টাইড’-এর বিরুদ্ধে। মিসাইলগুলো সরাসরি এবং যথাযথভাবে জাহাজদুটিকে আঘাত হানে। ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান আমব্রে হুথিদের হামলায় ব্রিটিশ জাহাজের ক্ষয়ক্ষতির খবর দিয়ে বলেছে, হামলার পর জাহাজটি গতি বাড়িয়ে দেয় এবং এটি বাব-আল-মান্দেব প্রণালি ধরে দক্ষিণে চলে যায়। এদিকে, মঙ্গলবার লোহিত সাগর এবং এডেন উপসাগরে বিভিন্ন জাহাজকে লক্ষ্য করে ৬টি ব্যালিস্টিক মিসাইল ছুড়েছেন হুথিরা। এতে গ্রিক-মালিকানাধীন জাহাজ এমভি স্টার নাসিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে জানিয়েছে মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড। জাহাজটিকে ৩টি ব্যালিস্টিক মিসাইল আঘাত করে বলে জানায় সেন্টকম।

হুথিদের শক্তিশালী অবস্থানের চিত্র ফুটে উঠেছে বিবিসি ভেরিফাইয়ের এক অনুসন্ধানে। সোমবার এ-নিয়ে বিশাল প্রতিবেদন করেছে বিবিসি। এতে বলা হয়, ইয়েমেনে অনবরত বিমান হামলার পরও হুথিদের হামলার তীব্রতা কমাতে ব্যর্থ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত তিন সপ্তাহে অঞ্চলটিতে যাতায়াত করা জাহাজ লক্ষ্য করে ৯টি হামলা হয়েছে, যেখানে আগের তিন সপ্তাহে হামলা হয়েছিল ৬টি। অর্থাৎ মার্কিন-ব্রিটিশ হামলার পর হুথিদের হামলার সংখ্যা আরও বেড়েছে। বিবিসি ভেরিফাই বলেছে, নভেম্বরে হামলা শুরুর পর থেকে অন্তত ৩০টি জাহাজে হামলা করেছেন হুথিরা। জাহাজ ট্র্যাকিং ফার্ম লয়েডস লিস্ট ইন্টেলিজেন্সের মতে, হুথিদের হামলা শুরুর পর থেকে লোহিত সাগরের রুট ব্যবহার করে চলাচলকারী বাণিজ্যিক জাহাজের সংখ্যা ৫০ শতাংশ কমে গেছে। মিসরীয় সম্প্রচারমাধ্যম ওএন জানিয়েছে, লোহিত সাগরে হুথিদের হামলার কারণে মিসরের সুয়েজ খালের আয়ে ধস নেমেছে। এই খালের মাধ্যমে মিসরের রাজস্ব আয় এ-বছরের জানুয়ারিতে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৬ শতাংশ কমেছে। গত বছরের জানুয়ারিতে রাজস্ব এসেছিল ৮০৪ মিলিয়ন ডলার; গত মাসে এটি নেমে দাঁড়িয়েছে ৪২৮ মিলিয়ন ডলারে।

ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে লোহিত সাগরে ইসরায়েল এবং তার মিত্রদের কোণঠাসা করার পাশাপাশি এই সপ্তাহে দক্ষিণ ইসরায়েলের উম-আল-রাশরাশের সামরিক অবস্থানগুলোতে বেশ কয়েকটি মিসাইল নিক্ষেপ করেছে হুথি আনসার-আল্লাহ। তাদের সামরিক মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াহিয়া সারি ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি তাদের ধর্মীয়, নৈতিক এবং মানবিক দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ইসরায়েল-সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে হামলা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

এদিকে, সিরিয়া এবং ইরাকে মার্কিন হামলার শক্ত জবাব দিয়েছে ফিলিস্তিনের বন্ধু ইসলামিক রেজিস্ট্যান্স ইন ইরাক। এই সপ্তাহে সিরিয়ার মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে বড় হামলা চালিয়েছে ইরাকি প্রতিরোধ সংগঠনগুলোর এই আমব্রেলা গ্রুপ। সিরিয়ায় সবচেয়ে বড় মার্কিন ঘাঁটিতে সোমবারের ড্রোন হামলায় ওয়াশিংটনের মিত্র কুর্দি বাহিনীর অন্তত ৬ যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। কুর্দি-নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস বা এসডিএফ জানিয়েছে, সোমবার মধ্যরাতে পূর্বাঞ্চলীয় দেইর এজ্জোর প্রদেশের আল-ওমর তেলক্ষেত্রে তাদের কমান্ডো একাডেমিতে হামলা হয়। তাদের অভিযোগ, সামরিক ঘাঁটির অদূরে সিরিয়ার সরকারি বাহিনী-নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে ড্রোন পাঠিয়ে এই হামলা চালান ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র যোদ্ধারা। জর্ডানে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলায় তিন মার্কিন সেনা নিহত হওয়ার পর গত সপ্তাহে ইরাক এবং সিরিয়ায় ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর অবস্থান লক্ষ্য করে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এরপর মধ্যপ্রাচ্যে সোমবার দ্বিতীয়বারের মতো কোনো মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার ঘটনা ঘটল। এর আগে শনিবার সিরিয়ায় তাদের দুটি ঘাঁটিতে রকেট হামলা চালানো হয়। এ-দিন সিরিয়ার পাশাপাশি পশ্চিম ইরাকের আল-আনবার প্রদেশে মার্কিন বিমানঘাঁটি আইন-আল-আসাদে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইসলামিক রেজিস্ট্যান্স ইন ইরাক।

লেবাননের প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহ এ-সপ্তাহেও অবিরাম হামলার মাধ্যমে ইসরায়েলের নাভিশ^াস তুলেছে। উত্তর ইসরায়েলের বিভিন্ন সেনা অবস্থান এবং ব্যারাক লক্ষ্য করে দিন-রাত হামলা চালিয়েছেন প্রতিরোধ যোদ্ধারা। তাদের হামলায় কয়েকজন ইসরায়েলি সেনার প্রাণহানির খবর দিয়েছে আল-মায়াদিন। হিজবুল্লাহর হামলায় উত্তর ইসরায়েল এখন স্থবির। শিল্প, কৃষি, ব্যবসা, শিক্ষা- কিছুই ঠিকমতো চলছে না। নিউইয়র্কে ইসরায়েলের সাবেক কনসাল ইয়াকি দায়ান বলেছেন, লেবাননে যুদ্ধের আরেকটি ফ্রন্ট খোলা প্রতিরোধ করতে কাজ করে যাচ্ছে ওয়াশিংটন। তিনি জানান, এই ফ্রন্ট নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে মার্কিন প্রশাসন। তিনি বলেন, ওয়াশিংটন ইরান-সমর্থিত অন্য গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া বিবেচনা করলেও আঞ্চলিক যুদ্ধ এড়াতে হিজবুল্লাহর বিষয়টি সাবধানতার সঙ্গে বিবেচনা করছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম এক্সিওস মঙ্গলবার বলেছে, হিজবুল্লাহর অব্যাহত হামলার মুখে ইসরায়েল এবং প্রতিরোধ সংগঠনটিকে সমঝোতায় আনতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ওয়াশিংটন এবং তার ৪ ইউরোপীয় অংশীদার। সূত্রের বরাতে সংবাদমাধ্যমটি বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি এবং ইতালি এ-লক্ষ্যে নিবিড়ভাবে কাজ করছে। খবরে বলা হয়, ওয়াশিংটন বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছে, ইসরায়েলের পক্ষে একইসঙ্গে দুই ফ্রন্টে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।

এই পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনের পক্ষে সৌদি আরবের দৃঢ় অবস্থান উল্লেখ করার মতো। বুধবার দেশটি স্পষ্ট করে জানিয়েছে, স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি না দেওয়া পর্যন্ত ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক হবে না এবং এই বক্তব্য তারা যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়ে দিয়েছেন। এর আগে মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কারবি বলেন, সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সৌদি আরব ও ইসরায়েল আগ্রহী বলে তারা জানতে পেরেছেন। এরপর সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, কারবির ওই বক্তব্যের পর ফিলিস্তিনের বিষয়ে নিজেদের দৃঢ় অবস্থানের কথা ওয়াশিংটনকে পরিষ্কার করতেই এই বিবৃতি দেওয়া হলো। সম্প্রতি মার্কিন মধ্যস্থতায় সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আলোচনা জোরালো হয়। এই প্রক্রিয়া বেশ এগোলেও রিয়াদ বারবার বলেছে, ফিলিস্তিনি ইস্যুর সমাধান ছাড়া তারা তেলআবিবের সঙ্গে সম্পর্কে যাবেন না। এর মধ্যে ইসরায়েল গাজায় হামলা করলে এই সম্পর্কের সম্ভাবনা আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।

চারদিক থেকেই চাপে পড়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। দেশটির জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গাভির এবং অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ হুমকি দিচ্ছেন, হাজার হাজার ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দিয়ে ইসরায়েলিদের জন্য প্রতিকূল কোনো চুক্তি হলে তারা সরকার ছেড়ে যাবেন। বিরোধী নেতা বেনি গান্তজ বলেছেন, নেতানিয়াহু যদি উগ্রডানপন্থীদের গুহা থেকে বের না হন, তাহলে জরুরি সরকার থেকে পদত্যাগ করবেন তিনি। অন্য বিরোধী নেতা ইয়ার লাপিদ বলেছেন, বন্দিদের ফিরিয়ে আনার চুক্তির কারণে উগ্রডানপন্থীরা যদি সরকার ত্যাগ করেন, তার দল নেতানিয়াহুকে নিরাপত্তা বেষ্টনী দেওয়ার পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। মার্কিন পক্ষের পাশাপাশি বন্দিদের স্বজনদের পক্ষ থেকেও নেতানিয়াহু চাপের মধ্যে আছেন। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নাকি নেতানিয়াহুকে খুব খারাপ শব্দ ব্যবহার করে গালি দিয়েছেন। ব্যক্তিগত আলাপে বাইডেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীকে ‘ফাকিং গাই’ অভিহিত করেছেন বলে জানিয়েছে পলিটিকো।

এখন যুদ্ধবিরতি নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করছে যুক্তরাষ্ট্র। স্পষ্টত, ইসরায়েলকে আরও ভয়াবহ অবস্থা থেকে রক্ষার জন্যই এই প্রচেষ্টা। এই খেলায় যুক্তরাষ্ট্রকে জিততে দেবেন না ফিলিস্তিনের যোদ্ধারা। তাদের অবস্থান স্পষ্ট, যুদ্ধ পুরোপুরি বন্ধ না হওয়া ছাড়া কোনো চুক্তিতে যাবেন না তারা।