ইরাক ও আফগানিস্তান থেকে সেনা কমাল যুক্তরাষ্ট্র; ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের মহড়া চালিয়েছে ইরান; আকিঞ্চি ড্রোনের পরীক্ষা চালিয়েছে তুরস্ক; তেজাস ফাইটার বানাবে ভারত

আকিঞ্চি ড্রোনের পরীক্ষা চালিয়েছে তুরস্ক - সংগৃহীত

  • আহমেদ বায়েজীদ
  • ১৯ জানুয়ারি ২০২১, ১৪:১২

পরিকল্পনামতো আফগানিস্তান ও ইরাক থেকে সৈন্য কমিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার দেশটির প্রতিরক্ষা সদর দফতর পেন্টাগন জানিয়েছে, দুই দেশে অবস্থানরত মার্কিন সৈন্য সংখ্যা আড়াই হাজারে নামিয়ে আনার টার্গেট পূরণ হয়েছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী ক্রিস মিলার এক বিবৃতিতে বলেছেন, এই সৈন্য কমানোর ফলে আফগানিস্তানে এখন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের উপস্থিতি যে কোন সময়ের চেয়ে কম। আর ইরাকে সৈন্য কমানো প্রমাণ করে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সক্ষমতা বেড়েছে।

ক্রিস মিলার আরো বলেন, আজ আমরা দুই দশকের আফগান যুদ্ধের অবসান ও আফগানদের দেশ পরিচালনার ভার গ্রহণের একেবারে দ্বারপ্রান্তে। যে আড়াই হাজার সেনা রয়েছে তারা ন্যাটো মিত্রদের পাশাপাশি দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও সামরিক সহযোগিতা দেবে। পাশাপাশি তারা আমেরিকার জনগন ও জাতীয় স্বার্থের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

পেন্টাগনের পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে আফগান যুদ্ধের শুরু থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে ২ হাজার চারশো মার্কিন সেনা নিহত ও ২০ হাজারের বেশি আহত হয়েছে। অন্য দিকে ইরাকে মার্কিন সেনা নিহত হয়েছে সাড়ে চার হাজার আর আহত হয়েছে ৩২ হাজার।

গত নভেম্বরেই যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আদেশ দিয়েছেন ইরাক ও আফগানিস্তান থেকে সেনা কমাতে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে তালেবানদের যে শান্তি আলোচনা শুরু হয়েছে তার প্রধান শর্তই ছিলো আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা কমানো। সে অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র ২০২১ সালের মে মাসের মধ্যে দেশটি থেকে তার সব সেনাদের ফিরিয়ে নেয়ার অঙ্গীকার করেছে। তবে জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর দেশ দুটির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কী হবে সেটির ওপর নির্ভর করছ ইরাক ও আফগানিস্তানের ভবিষ্যত।


ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের মহড়া চালিয়েছে ইরান

যুক্তরাষ্ট্রের সাথে উত্তেজনার মধ্যেই নতুন করে দূরপাল্লার মিসাইল ও ড্রোনের মহড়া চালিয়েছে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী। নতুন বছরের দুই সপ্তাহের মধ্যে এটি দেশটির টানা চতুর্থ সামরিক শক্তির প্রদর্শনী। সর্বশেষ এই মহড়ায় সমুদ্র ও স্থল টার্গেটের ওপর ব্যালেস্টিক মিসাইল ও ড্রোন দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে।

ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী যে দূর পাল্লার ব্যালেস্টিক মিসাইলের মহড়া চালিয়েছে সেটি এক হাজার ৮০০ কিলোমিটার দূরে ভারত মহাসাগরের উত্তরাংশে একটি কৃত্রিম টার্গেটে গিয়ে আঘাত হেনেছে। ইরানি সেনাবাহিনীর চীফ অব স্টাফ মোহাম্মাদ বাঘেরি বলেছেন, সমুদের টার্গেটে দূর পাল্লার মিসাইল হামলা প্রমাণ করেছে ইসলামিক রিপাবলিকের শত্রুরা যদি আমাদের জাতীয় স্বার্থ, নৌ রুট কিংবা ভূখণ্ডে কোন ধরনের হামলা করে- তারা আমাদের মিসাইলের আঘাতে ধ্বংস হয়ে যাবে।

এর আগে বিপ্লবী গার্ড বাহিনী একটি অজ্ঞাত মরু এলাকা থেকে কয়েক ডজন নেক্সট জেনারেশন মিসাইল উৎক্ষেপণ করেছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেলে প্রচারিত ভিডিওতে দেখা গেছে মিসাইলগুলো সফলভাবে স্থল টার্গেটে আঘাত হেনেছে।

মিসাইল উৎক্ষেপণ কেন্দ্রের সামনে দাড়িয়ে রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেলের এক সাংবাদিক বলেন, এগুলো বিপ্লবী গার্ডের বিশাল সংখ্যক ব্যালেস্টিক মিসাইলের গর্জন। যেগুলো বিচ্ছিন্ন হতে সক্ষম এমন ওয়ারহেড যুক্ত এবং পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে যেতে সক্ষম।

ব্যালেস্টিক মিসাইল উৎক্ষেপণের পর পৃথিবীর বায়ুমণ্ডের বাইরে গিয়ে এর ওয়ারহেডটি অন্যান্য অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয় এবং আছড়ে পড়ে টার্গেটের ওপর। এই রিপোর্টের সময় ওই সাংবাদিকের পেছনে একের পর এক মিসাইল উৎক্ষেপণের দৃশ্য দেখা যায়। এর কিছুক্ষণ পর ইরানের এই এলিট ফোর্স আত্মঘাতি ড্রোনের মহড়া চালায়, যেগুলো বিস্ফোরক বোঝাই হয়ে আঘাত হানে টার্গেটের ওপর।

এছাড়া ওমান সাগরে দুইদিন ব্যাপী একটি মহড়া চালিয়েছে ইরানের নৌ বাহিনী। এ সময় তারা দেশটির সবচেয়ে বড় নৌ জাহাজ যুক্ত করেছে বহরে। ২২৮ মিটার লম্বা মাকরান নামের জাহাজটি নিজেরাই তৈরি করেছে ইরান। হেলিকপ্টারপ্যাডসহ এই জাহাজটি একটি লজিস্টিকস জাহাজ।সমুদ্র ভাসমান যুদ্ধ জাহাজগুলোকে যেকোন ধরনের তাৎক্ষণিক সহযোগিতাসহ তথ্য সংগ্রহের কাজ করবে জাহাজটি।

নিজস্ব নির্মিত সাবমেরিন থেকে টর্পেডো ছোড়া ও বিশেষ বাহিনীর অভিযানের মহড়া চালিয়েছে এদিন নৌ সেনারা। উৎক্ষেপণ করা হয়েছে কিছু স্বল্প পাল্লার ক্রুজ মিসাইল।


আকিঞ্চি ড্রোনের পরীক্ষা চালিয়েছে তুরস্ক

তুরস্কের কমব্যাট ড্রোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বেকার এর প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা সেলচুক বেরাকতার সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টেলিগ্রামে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন যাতে দেখা গেছে প্রতিষ্ঠানটির নির্মিত বেরাকতার আকিঞ্চি ড্রোনের তৃতীয় প্রোটোটাইপের সফল পরীক্ষার দৃশ্য।

শীঘ্রই আকিঞ্চি পিটি-থ্রি ড্রোনটি ডেলিভারি দেয়ার পরিকল্পনা করছে কোম্পানিটি। গত আগস্টে দ্বিতীয় পরীক্ষায় তুরস্কের নিজস্ব উৎপাদিত এই অ্যাটাক ড্রোনটি সফলভাবে ২০ হাজার ফুট উচ্চতা দিয়ে উড়েছে। এটির প্রথম পরীক্ষা চালানো হয়েছে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে।

১ হাজার ৩৫০ কেজি পর্যন্ত ওজন বহনে সক্ষম নতুন এই ড্রোনটি ৪০ হাজার ফুট উচ্চতায় একটানা উড়তে পারবে ২৪ ঘণ্টা। এতে ব্যবহৃত অন্যান্য প্রযুক্তিও তুরস্কের নিজস্ব উদ্ভাবিত। এতে থাকবে অ্যাক্টিক ইলেক্ট্রোনিক্যালি স্ক্যানেড অ্যারে রাডার, এয়ার টু এয়ার মিসাইল গোকদোগান ও বোজদোগান। এছাড়া আরো কয়েক ধরনের ক্রুজ মিসাইল ছুড়তে পারবে এই ড্রোনটি।

এতে থাকবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন ছয়টি কম্পিউটার, যেগুলোর সহায়তায় ড্রোনটি তার ক্যামেরা ও সেন্সরের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে পারবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে ড্রোনটি এমন টার্গেটও সনাক্ত করতে পারবে যা মানুষের চোখে ধরা পড়ে না। জিপিএস সিস্টেম ছাড়া উড়ে যাওয়া টার্গেটও একে ফাঁকি দিতে পারবে না।


তেজাস ফাইটার বানাবে ভারত

নিজস্বভাবে তেজাস ফাইটার জেট উৎপাদনের জন্য ছয় দশমিক ৫ বিলিয়ন বা সাড়ে ছয়শো কোটি মার্কিন ডলারের একটি বিলের অনুমোদন দিয়েছে ভারত সরকার। দেশটির নিজস্ব উৎপাদিত প্রতিরক্ষা খাতে এটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বাজেট। ভারত সরকারের ক্যাবিনেট কমিটি অব সিকিউটির এই বিলের অনুমোদন দিয়েছে । দেশটির নিরাপত্তা বিষয়ক শীর্ষ এই কমিটির চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই অর্থ দিয়ে ভারত সরকারের মালিকানাধীন হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড ৭৩টি তেজাস ফাইটার ও ১০টি তেজাস ট্রেনিং এয়ারক্রাফট বানাবে বলে জানিয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং এ বিষয়ে বলেছেন, ভারতের প্রতিরক্ষা শিল্পে স্বনির্ভরতার প্রশ্নে এই উদ্যোগটি হবে গেম চেঞ্জার। আমাদের অভ্যন্তরীণ বিমান শিল্পের জন্যও এটি প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে। তিনি বলেন, আসছে বছরগুলোতে এলসিএ-তেজাস হতে যাচ্ছে ভারতীয় বিমান বাহিনীর ফাইটার বহরের মেরুদণ্ড।

ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, আত্মনির্ভর ভারত অভিযান প্রকল্পের অধীনে সরকার নিজস্ব নকশা, উন্নয়ন ও নির্মাণে প্রতিরক্ষা সেক্টরকে আরো অগ্রসর করতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। হিন্দুস্তান অ্যারোটিক্স লিমিটেডের সাথে এই প্রকল্পে প্রায় ৫০০ ছোট বড় কোম্পানি কাজ করবে।

আর নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান রামাকৃষ্ণান মাধভান বলেছেন, তেজাস নির্মাণ প্রকল্পে পূর্বের যে কোন প্রকল্পের চেয়ে বেশি স্থানীয় শ্রম ও মেধা যুক্ত থাকবে। হিন্দুস্তান অ্যারোটিক্স লিমিটেডের এক নির্বাহী জানিয়েছেন, তেজাসের পাখা নির্মাণ কররবে লারসেন এন্ড টারবো, বিমানের বডির সামনের অংশ নির্মিত হবে ডায়নামিক টেকনোলজিক কোম্পানিতে এবং মূল বডি নির্মাণ করবে ভিইএম টেকনোলজিস। এর সবগুলোই ভারতীয় প্রতিষ্ঠান।

তেজাসের এবারের সংস্করণটিকেআরো উন্নত করে তৈরি করার পরিকল্পনা নিয়েছে ভারত। কমব্যাট ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি, ইলেট্রনিক রাডার যুক্ত করা, মাঝ আকাশে জ¦ালানি গ্রহণসহ এর মিসাইল ক্ষমতাও আরো উন্নত করা হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। সিঙ্গেল ইঞ্জিনের প্রতিটি ফাইটার জেট নির্মাণে খরচ হবে৭৮ দশমিক ৫ মিলিয়ন বা ৭ কোটি ৮৫ লাখ মার্কিন ডলার। আগামী মাসে বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিতব্য অ্যারো ইন্ডিয়া এয়ার শো’তে এ বিষয়ে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সাথে আনুষ্ঠানিক চুক্তি করবে ভারতীয় বিমান বাহিনী। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বিমানগুলো ডেলিভারি শুরু হবে, যা শেষ হবে ২০২৮ সালের ডিসেম্বরে।

চতুর্থ প্রজন্মের তেজাস ফাইটার ভারতীয় বিমান বাহিনীতে প্রথম যুক্ত হয় ২০১৫ সালে। বর্তমানে এর ৩৪টি বিমান রয়েছে ভারতের কাছে।