ড্রোন লেজার ও হাইপারসনিক যুদ্ধাস্ত্রের প্রয়োগ বাড়ছে

-

  • আহমাদ আব্দুল্লাহ
  • ০৮ জানুয়ারি ২০২১, ০৮:৫২

দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে যুদ্ধে আগামী দিনে লেজার সমরাস্ত্র, সাবমেরিন নিয়ন্ত্রিত ড্রোন এবং হাইপারসনিক মিসাইলের ব্যবহার বাড়তে পারে। এ বাস্তবতাকে সামনে রেখে নতুন বছরের শুরুতে মার্কিন নৌবাহিনী নতুন করে নজরদারি, টহল এবং শত্রুপক্ষের স্থাপনা লক্ষ্য করে আগামী দিনের নৌ যুদ্ধের পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। দ্য ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট পত্রিকা সম্প্রতি এরকম একটি খবর প্রকাশ করেছে।

যুদ্ধ জাহাজ থেকে নিক্ষেপণযোগ্য এনার্জি উইপনস এবং দ্রুতগতিতে ধাবমান নানা অস্ত্র তৈরি করাকেই মার্কিন নৌবাহিনী এখন বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছে বলে মার্কিন নৌবাহিনীর প্রধান এডমিরাল মাইকেল গিল্ড জানিয়েছেন।

সি-পাওয়ার ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, মার্কিন নৌবাহিনী খুব শীঘ্রই নতুন করে বেশ কয়েকটি সাবমেরিন ক্রয় করবে। পাশাপাশি, হাইপারসনিক মিসাইল এবং লেজার অস্ত্র কিনবে, যার জন্য দেশটি এরই মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলার বাজেট বরাদ্দ করেছে। মার্কিন প্রশাসন উভচর ধরনের সাবমেরিন, যুদ্ধ জাহাজ, বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজে আক্রমণাত্মক ও রক্ষণাত্মক ধরনের লেজার অস্ত্র তৈরির কাজও শুরু করেছে।

লেজার শুধুমাত্র আড়াল থেকে কাজ করে না। এগুলো অনেক বেশি যথার্থ এবং অব্যর্থভাবে আক্রমণ পরিচালনা করতে পারে। লেজার ব্যান্ডকে কাজে লাগিয়ে যেকোনো বাহিনী তাদের সামরিক আক্রমণকে শাণিত করতে পারে। একইসঙ্গে প্রতিপক্ষের সামরিক স্থাপনাগুলোকে পুরোপুরি ধ্বংস না করলেও অকার্যকর করে দিতে পারে।

লেজার অস্ত্রগুলো নৌবাহিনীকে উড়ন্ত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার সক্ষমতা দান করবে। মার্কিন কর্তৃপক্ষ একটি শক্তিশালী মিসাইল ডিফেন্স এজেন্সি গড়ে তোলারও চেষ্টা করছে, যাতে জাহাজ থেকে উচ্চ মাত্রার ব্যালিস্টিক মিসাইলগুলোকে ভালোভাবে প্রতিরোধ করা যায়। এ বিষয়গুলো সম্ভব হবে কেননা মোবাইল, বৈদ্যুতিক পাওয়ারের একীভূত প্রয়োগ এবং জাহাজগুলোতে তৈরি বিদ্যুতের আউটপুট প্রয়োগ করা হয়েছে। মার্কিন নৌ জাহাজগুলোতে লেজার প্রযুক্তি বিগত অনেক বছর ধরেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

মার্কিন নৌবাহিনী আগামী দিনগুলোতে স্নেক হেড’ নামের বৃহত্তম আন্ডারওয়াটার ড্রোন ব্যবহার করে শত্রুদের টার্গেট করার পরিকল্পনা করেছে। পানির নীচ দিয়ে নিউক্লিয়ার সাবমেরিন দিয়ে চালিয়ে এর মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে। মার্কিন নৌ বাহিনীর এ ড্রোনগুলোর অপরিহার্যতা খুব বেশি। মার্কিন বাহিনী ড্রোন ও সাবমেরিনগুলোকে আগামীতে ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার প্লাটফর্মকে শক্তিশালী করার জন্য পরিকল্পনা করেছে।

এই ড্রোনগুলো ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক স্পেকট্রামকে ব্যবহার করে শত্রুপক্ষের যুদ্ধাস্ত্রকে বাঁধা দিতে পারবে। আধুনিক যুদ্ধের ক্ষেত্রে এ ধরনের সমরাস্ত্রই আগামীতে নিয়ন্ত্রকের আসনে চলে যাবে। স্নেক হেড’ ড্রোনগুলো যুক্ত হলে মার্কিন নৌ বাহিনীতে এর স্থায়ীত্ব, দুরত্ব এবং সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। আন্ডারওয়াটার এ নৌযানগুলো একইসাথে যুদ্ধজাহাজ, ভার্জিনিয়া ক্লাস নিউক্লিয়ার চালিত সাবমেরিন এবং ওহিয়ো ক্লাস মিসাইল সাবমেরিনকে সনাক্ত করে তাদের প্রতিরোধ করতে পারবে। এ নৌ যানগুলোকে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে গোয়েন্দাবৃত্তি, নজরদারি করতে সক্ষম হবে।

শুধু আমেরিকা নয়, জাপানও নতুন করে স্বয়ংক্রিয় যুদ্ধবিমান তৈরির কাজ শুরু করেছে যা ২০৩৫ সালের মধ্যেই অপারেশনে চলে আসবে। চীন যেভাবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আগ্রাসী নীতি বিস্তৃত করছে তা প্রতিরোধের একটি অংশ হিসেবেই জাপান এ উদ্যেগ নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বর্তমানে টোকিও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এফ-এক্স এবং এফ থ্রি যুদ্ধবিমান নির্মাণ করছে। নতুন এ স্বয়ংক্রিয় বিমানটি এই বিমানগুলোরই পরবর্তী সংস্করন।

জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় মনুষ্যবিহীন যুদ্ধবিমানগুলোকে তিনটি স্তরে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করেছে। প্রথম ধাপে তারা রিমোট কন্ট্রোল পরিচালিত ড্রোন নির্মাণ করবে। পরবর্তীতে তারা একক পাইলট দ্বারা পরিচালিত বিমান নিয়ে আসবে। যেগুলো একগুচ্ছ ইউএভি ড্রোন নিয়ন্ত্রন করবে আর তৃতীয় ধাপে সম্পুর্ন স্বয়ংক্রিয় এবং মনুষ্যবিহীন বিমানও তারা অপারেশনে নিয়ে আসবে। নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জাপান ২০৩৫ সালের মধ্যে স্বয়ংক্রিয় ড্রোন নিয়ে আসবে। একইসময়ে তারা এফ-এক্স যুদ্ধবিমানও তৈরি করবে। জাপান বর্তমানে এফ টু যুদ্ধবিমান ব্যবহার করছে, যা এরই মধ্যে বেশ পুরনো হয়ে গেছে। জাপান ২০৩০ থেকে ২০৪০ সালের মধ্যে এসব বিমানকে প্রতিস্থাপিত করার চেষ্টা করছে।

জাপানের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে সুবারু, মিতশুবিশি হেভি ইন্ডাস্ট্রি এবং মিতশুবিশি ইলেক্ট্রিক এরই মধ্যে মনুষ্যবিহীন যুদ্ধাস্ত্র তৈরির কার্যক্রম শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ২৪ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছে রিমোট এবং ফ্লাইট কন্ট্রোল টেকনোলোজি খাতে। এছাড়া ২০০ মিলিয়ন ইয়েন আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তি সংযোজনের জন্য বরাদ্দ করেছে। মনুষ্যবিহীন বিমান পরিচালনার জন্য ককপিটের প্রয়োজন হয় না। ফলে এ বিমানগুলোর নির্মান ব্যয় অনেকটা কমে যায়।

জাপান ২০২৪ সালের মধ্যে মনুষ্যবিহীন স্বয়ংক্রিয় ড্রোনের বিষয়ে গবেষণা সমাপ্ত করতে চায়। অন্যদিকে, দেশটি ২০২৫ সালের মধ্যে একটি ছোট ধরনের প্রোটোটাইপ বিমানের পরীক্ষা শুরু করতে চায়। নতুন এ যুদ্ধবিমানগুলোতে শত্রু বিমান সনাক্তকরন এবং মিসাইল বহন ও নিক্ষেপ করার সক্ষমতা থাকবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চীনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নতুন করে নতুন করে টানাপোড়েনের মধ্যে পড়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি আইনে সাক্ষর করেছেন। এতে বলা হয়েছে, যদি চীন আগামীতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের শীর্ষ নেতা দালাইলামা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করে তাহলে যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর অবরোধও আরোপ করতে পারে। মার্কিন কংগ্রেস তিব্বতীয় নীতিমালাকে সমর্থন করেছে। বর্তমান দালাইলামার বয়স ৮৫ বছর এবং আগামীতে তার উত্তরাধিকারী নির্বাচনের ক্ষেত্রে বেইজিং হস্তক্ষেপ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তিব্বতীয় আইন ও নীতিমালাকে মার্কিন কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান উভয় দলই সমর্থন করেছে। এই নীতিমালার আওতায় দালাইলামা বাছাই, নির্ধারণ ও চূড়ান্ত মনোনয়নের কাজটি একটি আধ্যাত্মিক বিষয় এবং তিব্বতীয় বৌদ্ধদের ঐতিহ্যের আলোকেই এ বিষয়গুলো নির্ধারিত হবে। চীনের যেসব কর্মকর্তারা ভবিষ্যতে দালাইলামা নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করবেন, তাদের ওপরও অবরোধ আরোপ করা হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরো বলছে তিব্বতের রাজধানী লাসায় যুক্তরাষ্ট্রকে কনসুলেট খোলার অনুমতি না দিলে চীনে আর নতুন করে কোনো কনসুলেট চালু করবে না।

ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেইন ফর তিবেত মূলত দালাইলামার পক্ষে বিশ্বজুড়ে ক্যাম্পেইন করে যাচ্ছে। তারা মার্কিন কংগ্রেসের তিব্বতপন্থী এ আইনের ভুয়ষী প্রশংসা করেছে। তারা দালাইলামার বাছাই প্রক্রিয়ায় চীনের হস্তক্ষেপ এবং তিব্বতে চীনের মানবাধিকার লংঘনের তীব্র নিন্দা করেছে। বর্তমানে চতুর্দশ দালাইলামা দায়িত্ব পালন করেছেন। বয়সের কারণে তিনি নানা ধরনের অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং সে কারণে তিনি বিদেশ ভ্রমণেও অপারগ হয়ে পড়েছেন।

এবার জানাবো রাশিয়ার নতুন ধরনের ট্যাংকের খবর । রাশিয়ান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্প্রতি টি-ফোরটিন আরমাটা মেইন ব্যাটল ট্যাংক তথা এমবিটি এবং টি-ফিফটিন ট্র্যাকড আর্মোড ইনফ্যান্ট্রি ফাইটিং ভেইকেল নির্মানের ঘোষণা দিয়েছে। টি-ফোরটিন আরমাটা হলো পরবর্তী প্রজন্মের ট্যাংক যা আর্মাটা ইউনিভার্সাল কমব্যাট প্লাটফর্মের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত হবে। ভবিষ্যতে এ প্লাটফর্ম থেকে ইনফ্যান্ট্রি যুদ্ধযান, আর্মোড পারসোনাল ক্যারিয়ার এবং অন্যন্য অস্ত্রও তৈরি করা হবে।

২০১৫ সালের মে মাসে মস্কোতে ভিক্টোরি ডে প্যারেডে এ অত্যাধুনিক ট্যাংকগুলোর নকশা প্রদর্শন করা হয়েছিলো। এ ট্যাংকগুলো একেবারে ডিজিটাল পদ্ধতিতে কাজ করবে। এতে মনুষ্যবিহীন ড্রাইভিং পরিচালনার সুযোগ থাকবে। সেই সাথে ক্রুদের জন্য আর্মোড ক্যাপসুলও বরাদ্দ থাকবে। ১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এম ওয়ান আবরাম তৃতীয় প্রজন্মের যুদ্ধট্যাংকগুলো ৩৭টি সেভিয়েত প্রনীত টি-সেভেনটি টু ট্যাংক ধ্বংস করেছিল। সেই বিপর্যয়ের জবাব হিসেবে রাশিয়া এই আর্মাটা ট্যাংকগুলোর নির্মান শুরু করেছে।

যতগুলো পরীক্ষামূলক যুদ্ধাস্ত্র রাশিয়ার হাতে রয়েছে এগুলোর পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগেই রাশিয়া জোরেশোরে টি-ফোরটিন আরমাটা মেইন ব্যাটল ট্যাংক নির্মান শুরু করবে। টি-ফিফটিন ট্র্যাকড আর্মোড ইনফ্যান্ট্রি ফাইটিং ভেইকেল তৈরির কাজও একইসাথে শুরু হবে।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সম্ভাব্য নতুন অস্ত্রগুলোর সরবরাহ ত্বরান্বিত করার জন্য এসব অস্ত্রকে অপারেশনে নিয়ে আসা হবে।