প্রযুক্তি ক্ষেত্রে মার্কিন আধিপত্য খর্ব করতে মহাপরিকল্পনা চীনের

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পতাকা- সংগৃহীত -

  • মেহেদী হাসান
  • ২৪ জানুয়ারি ২০২০, ২৩:১৬

প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিশ্বে মার্কিন আধিপত্য খর্ব করতে মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে চীন। এ জন্য গ্রহণ করা হয়েছে ১৪ তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। এ লক্ষ্যে গবেষণা ও উন্নয়ন বাজেট খাতে ১১০ বিলিয়ন ডলার বা ৯ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকার প্রাথমিক বাজেট ধরা হয়েছে। তবে আগামী ৫ বছরে যখন পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে চীন তখন তাতে যে পরিমান অর্থ ব্যয় হবে তার তুলনায় এ বরাদ্দ তেমন কিছূই না বলে জানানো হয়েছে।


চীন মনে করে আগামীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যুদ্ধের মূল ক্ষেত্র হবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাত। এ ক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তারে যাবতীয় প্রস্ততি গ্রহন শুরু করেছে চীন। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন ইতোমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ঠান্ডা লড়াই শুরু হয়ে গেছে। চীনের টেলিকম জায়ান্ট হুয়াওয়েরকে ব্ল্যাক লিস্ট করার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র তার প্রথম গোলাটি ছুড়েছে। নজরদারি গ্রুপ হিকাভিশন এবং দাহুয়ার সাথে হুয়াওয়েকে যুক্তরাষ্ট্র তার জাতীয় স্বার্থের জন্য হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর হুয়াওয়ের বিক্রি হওয়া ৪ লাখ বেজ স্টেশনের চার ভাগের তিন ভাগ বন্ধ হয়ে গেছে।


প্রযুক্তি খাতে আধিপত্য বিস্তারে যেসব খাত চিহ্নিত করা হয়েছে তার প্রথমেই থাকবে উচ্চ প্রযুক্তি। এ বিষয়ক পন্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান আধুনিকায়নের জন্য গত নভেম্বর মাসে ২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ১ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে।


বেইিজংয়ের চায়না ইনস্টিটিউট অব কনটেম্পোর‌্যারি ইন্টারন্যাশাল রিলেশনস এর লি ঝেন বলেন, ২০২০ সালে চীনের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত সম্পর্ক আরো জটিল বিষয় হিসেবে দাড়াবে । প্রযুক্তি ক্ষেত্রে চীনের উত্থান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হুমকি হিসেবে দেখছে। দুই দেশের মধ্যে প্রযুক্তি, তথ্য, মূলধন, বাজার এবং মেধা বিনিময়ে তারা আইনি এবং প্রশাসনিক বাধা সৃষ্টি করছে। ট্রাম্প প্রশাসন এ ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।


অনেক বিশেজ্ঞের মতে প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে আগামী দশ বছরে এ দুই দেশ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় চলে যেতে পারে। আর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি হবে দুই বৃহত শক্তির বড় ধরনের একটি যুদ্ধ ক্ষেত্র। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তারের জন্য চীন ছয়টি ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট করেছে। এর মধ্যে রয়েছে শক্তি, তথ্যপ্রযুক্তি, ম্যানফ্যাকচারিং এবং বায়োফার্মা।


পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনার খসড়া তৈরির আগে শিল্প ক্ষেত্রে বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে তাদের প্রয়োজনীয় চাহিদা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হবে। হুয়াওয়ে এবং জেটিএসের পাশাপাশি আলিবাবা, টেনসেন্ট এবং বাইদু বা বিএটি গ্রুপ থাকবে এর মধ্যে। আর এর সাথে থাকবে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান।
সরকারি বিনিয়োগের উপযুক্ত খাত বা ক্ষেত্রেগুলো চিহ্নিত করতে আগামী কয়েক মাস পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট শি জিনিপিং প্রশাসনের প্রতিটি বিভাগ এ প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত থাকবে। চীন উদীয়মান প্রযুক্তিগত সুবিধা অর্জনের মাধ্যমে দেশের বাইরে তাদের প্রতিষ্ঠান গুলোকে আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করবে। এর মাধ্যমে চীন লাভ করবে ব্যাপক অর্থনৈতিক অগ্রগতি।

পিপলস লিবারেশন আর্মির সাবেক কর্মকতা রেন জেংফি প্রতিষ্ঠিত হুয়াওয়ে বর্তমানে বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহৎ স্মার্টফোন নির্মাত প্রতিষ্ঠান। যদিও এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অচ্ছুত করে রাখা হয়েছে কিন্তু এটা পশ্চিমা এরিকসন এবং নোকিয়ার সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে। ৫জি নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠানটির ৬৫টি ব্যবসায়িক চুক্তির অর্ধেকই এখন ইউরোপীয় ক্রেতাদের সাথে।


চীন প্রযুক্তি ক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তারের যে লড়াই বর্তমানে শুরু করেছে তার অংশ হিসেবে তারা টেলিমক সংস্থাকে বিশেষ সহায়তা দেবে। টেলিকম সংস্থার উন্নয়ন এবং টিকে থাকার জন্য চীন সরকার রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের সাথে আর্থিক সহায়তা করবে ।


রাষ্ট্রীয় সমর্থনের ফলে অনেক টেলিকম প্রতিষ্ঠান নতুন অনেক বাজারে প্রবেশ করতে পারছে। কম দামে ক্রেতাদের কাছে পন্য বিক্রি করতে পারছে। অপর দিকে এরিকসন ও নোকিয়ার মত প্রতিষ্ঠানের সাথে সহজে প্রতিযোগিতায় আবির্ভূত হতে পারছে চীনের টেলিকম সংস্থাগুলি। গত বছর হুয়াওয়ের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার বৈরি আচরনের কারনে এ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সরাসরি দাড়ায় হয় চীন সরকার।