রাশিয়াকে টেক্কা দিতে বেপরোয়া ভারত

টেক্কা দিতে চাইছে ভারত - ইন্টারনেট

  • আহমাদ আবদুল্লাহ
  • ২২ নভেম্বর ২০২০, ১৪:৪৩

লাদাখ সীমান্তে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি ভিটি ফোর লাইট ট্যাংক মোতায়েন নিয়ে সমরাস্ত্র অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা চলছে। সবাই দেখতে চাইছে ভারত এ নিয়ে কী প্রতিক্রিয়া দেখায়। ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা ডিআরডিও তাদের নিজেদের তৈরি হালকা মানের ট্যাংকগুলোকে সীমান্তে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে। পাশাপাশি, তারা বিদেশী অস্ত্র নির্মাতা দেশগুলোর কাছেও লাইট ট্যাংক পাওয়ার জন্য চাহিদা প্রকাশ করেছে।

লাইট ট্যাংক সংগ্রহের ক্ষেত্রে ভারতের প্রথম পছন্দ রাশিয়ার স্পুরুট-এসডি লাইট ট্যাংক। এই ট্যাংকগুলোতে ১২৫ এমএম বন্দুক থাকে। যা দিয়ে শত্রæপক্ষের ভারী নিরাপত্তা কাঠামোকে ধ্বংস করে দেয়া যায়। বর্তমানে টি-সেভেনটি টু, টি নাইনটি এবং সর্বাধুনিক টি-ফোরটিন আর্মাতা ট্যাংকগুলোর মতোই লাইট ট্যাংকগুলোর গুলি করার ক্ষমতাও খুবই উচ্চমানের।

পাশাপাশি এগুলোকে উভচর ট্যাংক ধ্বংসাত্মক হিসেবেও গণ্য করা হয়। পশ্চিমা দেশগুলোতে স্ট্রাইকার মোবাইল গান সিস্টেমের মতো পারদর্শিতাও এ লাইট ট্যাংক দিয়ে অর্জন করা সম্ভব। স্পুরুট লাইট ট্যাংকগুলো এখন রাশিয়ার এয়ারবর্ন ইউনিটগুলোতে ব্যবহার করা হয়। সাবেক সেভিয়েত আমলের আইসিভি, বিএমপি এবং বিটিআর জাতীয় ট্যাংকের উন্নত সংস্করণ হলো স্পুরুট। স্পুরুট ট্যাংকটির ওজন ১৮ টন- যা ওজনের দিক থেকে চীনাদের ভিটি-ফাইভের অর্ধেক। এছাড়া ভিটি ফাইভে হান্ড্রেড এন্ড ফাইভ এম এম বন্দুক ব্যবহার করা হয় যা স্পুরুটের বন্দুকের তুলনায় কম ক্ষমতা সম্পন্ন। ওজনে হালকা এবং গুলি নিক্ষেপে দ্বিগুন পারদর্শিতা থাকায় স্পুরুট দিয়ে যুদ্ধের ময়দানে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়। যেহেতু ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে উন্নত টি-সেভেনটি টু, অজয়া এবং টি-নাইনটির মতো ট্যাংক আছে তাই স্পুরুট চলে আসলে ভারত ট্যাংকের দিক থেকে চীনের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে যাবে।

ভারতীয় বাহিনীর এ ট্যাংক নিভর্রতা হয়তো অনেককেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা মনে করিয়ে দেবে। কারণ তখনও এ্যান্টি ট্যাংক আর্টিলারি ব্যবহার করেই শত্রুপক্ষকে দুর্বল করে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। স্পুরুট এক্ষেত্রে ভারতীয় পছন্দের তালিকার শীর্ষে উঠে এসেছে।

রাশিয়ার তৈরি হালকা ট্যাংকগুলোর একটি বাড়তি সুবিধা হলো এ ট্যাংকগুলো ভূমি ও পানি উভয়স্থানেই চলতে খুবই পারদর্শী। যুদ্ধক্ষেত্রে এ ধরনের ট্যাংক হাতে থাকলে কমব্যাট ইঞ্জিনিয়াররা অনেক বেশি স্বস্তি পায়। কারণ অনেক সময় ছোট ছোট জলাধারের কারণে ট্যাংককে শত্রু এলাকায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। যদি ট্যাংকগুলো উভচর ধরনের হয়, তাহলে তা দিয়ে শত্রুর তৈরি যেকোনো স্থলজ বা জলজ প্রতিবন্ধকতাকেই গুড়িয়ে দেয়া যায়।

মূল বাহিনীর পাশাপাশি এ লাইট ট্যাংকগুলো থাকলে একদিকে যেমন পদাতিক বাহিনীর এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়। অন্যদিকে সেনা সদস্যদের নিরাপত্তাও অনেকটা নিশ্চিত হয়। স্পুরুট গানগুলোতে অটো লোডার অপশন আছে। ফলে এ ট্যাংকগুলো থেকে প্রতি মিনিটে ৬-৮ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করা সম্ভব। তাছাড়া এর গুলি নিয়ন্ত্রন প্রক্রিয়ায় স্ট্যাবিলাইজেশন টুলস, লেজার রেঞ্জফাইন্ডার এবং ব্যালিস্টিক কম্পিউটারকেও সংযোজন করা হয়েছে। ফলে, প্রতিনিয়ত লক্ষ্যবস্তু সম্পর্কে তথ্য পাওয়া এবং সে অনুযায়ী টার্গেট নির্ধারণ করার সুযোগ রয়েছে। রাশিয়া থেকে যদি ভারতীয় বাহিনী তার প্রত্যাশা অনুযায়ী স্পুরুট ট্যাংক হাতে পেয়ে যায় তাহলে ভারতের লাইট ট্যাংকের চাহিদা পূরণ কবে। ভারতীয় বাহিনী তার প্রয়োজনমতো গুলিবর্ষণ করা এবং সব বাঁধাকে ধ্বংস করে ট্যাংক নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও অনেক সুবিধা পাবে।

শুধু পদাতিক বাহিনীর জন্য ট্যাংক সংগ্রহ করা নিয়েই ভারত বসে নেই। ভারতের নৌ বাহিনীও নানা প্রক্রিয়ায় সমৃদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছে। ভারত মহাসাগরে চীন যেন কোনো অবস্থাতেই তার আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে ভারতীয় নৌ বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। এমনিতেও ভারতের নৌ বাহিনীকে বিশ্বের অন্যতম সর্ববৃহৎ নৌ বাহিনী হিসেবে গন্য করা হয়। ভারতের নৌ বাহিনী চীনের নৌ পথগুলোর জংশনগুলোতে ভালো একটি নিয়ন্ত্রকের অবস্থান নিয়ে থাকায় মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল ও গ্যাসের সরবরাহ এবং ইউরোপের নানা দেশ থেকে পন্য আমদানির ক্ষেত্রে চীনকে বেগ পেতে হয়।

বেইজিং যেহেতু সাম্প্রতিক সময়গুলোতে লাইন অব এ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল বা এলএসি এবং দক্ষিণ চীনা সাগরে নিজেদের সম্প্রসারণমূলক কৌশল বৃদ্ধি করেছে। চীনের সাবমেরিন ও নৌযানগুলোর কার্যক্রমকে ব্যহত করার জন্য নানামুখী উদ্যেগ নিয়েছে। পাশাপাশি, তারা ভারতের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় তৈরি এন্টি সাবমেরিন নিরাপত্তা ব্যবস্থা আইএনএস কাভারাত্তি স্টিলথ করভেট চালুর চেষ্টা করছে।

কাভারাত্তি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিরক্ষা মহলে নানা আলোচনা চলে আসছে। ভারতীয় নৌ বাহিনীর ডিরেক্টরেট অব নাভাল ডিজাইন বা ডিএনডি এই এন্টি সাবমেরিন ওয়ারফেয়ারের ডিজাইন প্রস্তুত করেছে। মোদীর "মেক ইন ইন্ডিয়া" উদ্যোগের অধীনে গড়ে ওঠা চারটি দেশীয়-নির্মিত-এন্টি সাবমেরিন ওয়ারফেয়ার এর মধ্যে কাভারাত্তি হলো সর্বশেষ সংযোজন। এ যুদ্ধজাহাজটি নির্মান করেছে কলকাতা ভিত্তিক গার্ডেন রিসার্চ শিপবিল্ডার্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ভারতীয় সেনা বাহিনী প্রধান জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নারাভানে দক্ষিনাঞ্চলীয় বন্দরনগরী ভিশাখাপাটনামের একটি ডকইয়ার্ডে স¤প্রতি এ যুদ্ধজাহাজটি কমিশন করেছেন। কাভারাত্তির বৈশিষ্ট্য হলো এর ৯০ শতাংশ নির্মান কৌশল ও প্রযুক্তি ভারত অভ্যন্তরীনভাবেই সংযোজন করেছে।

ভারত তার নিজস্ব যোগ্যতায় যে আধুনিক যুদ্ধজাহাজের নকশা ও নির্মান সম্পন্ন করতে পারে তার উৎকৃষ্ট নিদর্শন হলো এই কাভারাত্তি। ভারত এরই মাধ্যমে অস্ত্র ব্যবহারে পরাশক্তিগুলোর ওপর নিভর্রতা থেকে বেরিয়ে আসার ইংগিত দিচ্ছে। এ যুদ্ধজাহাজটি এতটাই শক্তিশালী যে এটিকে পারমানবিক, বায়োলজিকাল এমনকী রাসায়নিক বিকিরণের মাঝেও ব্যবহার করা সম্ভব। ধারণা করা হচ্ছে, চীনের সাথে সম্ভাব্য যেকোনো যুদ্ধে এ যুদ্ধজাহাজটি রীতিমতো গেইম চেঞ্জারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে।

যুদ্ধজাহাজটির নকশা ভারতীয় নৌ স্থপতিরা একটি সুইডিশ প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় ্র প্রণয়ন করেছে। এতে ডিএমআর টুফোরটি নাইন এ মানের স্টিল ব্যবহার করা হয়েছে। পাশাপাশি, জাহাজটির সুপার স্ট্রাকচার তৈরির ক্ষেত্রে নিজস্বভাবে সংগৃহিত কার্বন ফাইবারও ব্যবহার করা হয়েছে। কাভারাত্তিকে তৈরি করা হয়েছে ইংরেজি এক্স অক্ষরের আকৃতিত। এর উপরিভাগকে কিছুটা ঢালু রাখা হয়েছে। এ যুদ্ধজাহাজটির একটি অত্যাধুনিক সংযোজন হলো এডভান্সড স্টেলথ প্রযুক্তি। এর রাডার ক্রস সেকশনের মাত্রাও বেশ কম। তাই ভারতীয় নৌ বাহিনী আশা করছে শত্রæপক্ষের এলাকায় ঢুকে গেলেও এ যুদ্ধজাহাজটিকে প্রতিপক্ষের রাডার সহজে সনাক্ত করতে পারবে না।

এ যুদ্ধজাহাজে একই সময়ে ১৩৪ জন নাবিক, ১২টি মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম বহন করা যাবে। এ যুদ্ধজাহাজ থেকে স্বল্প, মাঝারি ও লম্বা দুরত্বের রকেট লাঞ্চার নিক্ষেপ করাও সম্ভব হবে। এ যুদ্ধজাহাজে পানির নীচে ব্যবহৃত বেশ কিছু অস্ত্রও থাকবে। পানির নীচ দিয়ে রকেট ও টর্পেডো নিক্ষেপেও ভারতীয় এ যুদ্ধজাহাজটি সক্ষম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

চীনকে মোকাবিলায় নিজেদের সামরিক অবস্থানকে সংহত করার জন্য নয়াদিল্লি সব ধরনের আয়োজন সম্পন্ন করেছে। লাদাখ সীমান্তে ফ্রান্সে তৈরি রাফালে বিমান আকাশ পথে ইতোমধ্যেই টহল দিতে শুরু করেছে। অন্যদিকে, স্থলপথেও টি-নাইনটি বিশমা এবং টি-সেভেনটি টু ট্যাংকগুলো তাদের তৎপরতা অব্যহত রেখেছে।

ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা ও নীতি নির্ধারকরা আশংকা করছে যে, চীন পরবর্তী কৌশল হিসেবে ভারতীয় সেনাবাহিনীন যোগাযোগ নেটওয়ার্কে হ্যাক করে তাদের পরবর্তী সামরিক পরিকল্পনাগুলোকে ভেস্তে দেয়ার পরিকল্পনা করতে পারে। চীনা সেনা বাহিনীর এ জাতীয় তৎপরতা ঠেকানোর জন্য বাড়তি সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেয়ার অংশ হিসেবে ভারত অতি স¤প্রতি আভ্যন্তরিনভাবে প্রস্তুত করা একটি মেসেজ অ্যাপস চালু করেছে। এটি নকশা ও কার্যকারিতার দিক থেকে অনেকটা ওয়াটসএ্যাপের মতো হলেও প্রকৃতপক্ষে এ্যাপসটি অনেকটাই আলাদা। শুধুমাত্র ভারতীয় সেনা সদস্যরা নিজেদের সিকিউরিটি অপারেশন নিয়ে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এ অ্যাপসটি ব্যবহার করবে।

এসএআই অ্যাপ বিষয়ে ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, “আত্মনির্ভর ভারত নীতিমালার আওতায় ভারতীয় সেনাবাহিনী স¤প্রতি একটি সহজ ও নিরাপদ মেসেজ এ্যাপস চালু করেছে যার নাম সিকিউর এ্যাপলিকেশন ফর ইন্টারনেট, সংক্ষেপে এসএআই। এ এ্যাপসটি দিয়ে এন্ড টু এন্ড সিকিউর ভয়েজ, ও টেক্সট মেসেজ দেয়া যাবে। সেইসাথে এন্ড্রয়েড প্ল্যটফর্ম ব্যবহার করে ভিডিও কলও করা যাবে।

বিডিভিউজ-এ প্রকাশিত লেখার স্বত্ব সংরক্ষিত। তবে শিক্ষা এবং গবেষণার কাজে সূত্র উল্লেখ করে ব্যবহার করা যাবে