ভারতের পররাষ্ট্রনীতিতে অ্যাডভেঞ্চারিজম

ভারত নিজেকে এখন দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক নেতা এবং ভারত মহাসাগরীয় এলাকার নিরাপত্তার গ্যারান্টিদাতা মনে করে - দ্যা কুইন্ট ডটকম

  • হুমায়ুন সাদেক চৌধুরী
  • ০৮ জুলাই ২০২০, ২০:১০

চীন-ভারত দ্বৈরথ এখনও শেষ হয়নি, কবে শেষ হবে তা-ও জানে না কেউ। কেননা, এ দ্বৈরথের সূচনা আজকে নয়, সেই ১৯৬২ সালে। তবে মন কষাকষি নিয়েও দুই দেশ বহু বছর পাশাপাশি থেকেছে। দু' দেশের মধ্যে যুদ্ধ লেগে যাওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতির উদ্ভব হয়নি। কিন্তু বহু বছরের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের অবসান ঘটিয়ে দু' দেশ একে অপরের দিকে এখন কেন বন্দুকের নল তাক করেছে? এর পেছনে অনেক কারণ নিশ্চয়ই রয়েছে। তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মোটা দাগে এর জন্য দায়ী করছেন প্রধানত ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রানিয়াম জয়শঙ্করকে। তাঁরা কোনো রাখঢাক না-রেখেই বলছেন, জয়শঙ্করের 'পাশ্চাত্যমুখী' বা আরও পরিষ্কার করে বললে 'মার্কিনমুখী' চীন-নীতি একটি ঝুঁকিপূর্ণ অ্যাডভেঞ্চারিজম ছাড়া আর কিছু নয়। এটা ভারতকে সমস্যার দিকেই ঠেলে দেবে। এমন ধারণা পোষণকারী একজন হচ্ছেন ভিম ভুরতেল। আসুন জেনে কিভাবে বিশ্লেষন করেছেন এই সমস্যাকে।

নেপালের বিশিষ্ট এ রাজনৈতিক ভাষ্যকার লিখেছেন : ২০১৯ সালের মে মাসে দ্বিতীয় মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়ে নরেন্দ্র মোদি একটি 'চায়না স্ট্র্যাটেজি' গ্রহন করেন এবং সুব্রানিয়াম জয়শঙ্করকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিযুক্ত করেন। তখন থেকে অর্থাৎ সাম্প্রতিক লাদাখ-কান্ডের বহু আগে থেকেই ভারতের চায়না পলিসির পরিবর্তন দৃশ্যমান হতে থাকে। সন্দেহ নেই যে, জয়শঙ্করই ভারতের নতুন 'চীন নীতির' প্রধান কারিগর।

এমনিতে ভারতের ঘোষিত কোনো চায়না পলিসি বা চীন নীতি নেই। তবে গত বছর দু'টি পৃথক দলিল থেকে চীন নিয়ে তাদের এতোদিনকার অনুসৃত নীতি থেকে সরে আসার আভাস পাওয়া যায়। উভয়টিতেই আছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর।
আটলান্টিক কাউন্সিল হচ্ছে একটা এলিট ফরেইন-রিলেশন ক্লাব। আটলান্টিকের দু' পাড়ের দেশগুলোর মধ্যে বোঝাপড়া বৃদ্ধি এবং সারা বিশ্বে মার্কিন মোড়লিপনা মজবুত করাই এ ক্লাবের লক্ষ্য। গত বছর এ কাউন্সিলের সম্মেলনে যোগ দিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর ব্যাখ্যা করেন কিভাবে 'গণতন্ত্র' ও 'আইনের শাসন'কে সমুন্নত রেখে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে যেতে পারে। তার মতে, নৈতিক গুণাবলীর দিক থেকে এ দু'টো অন্য যে-কোনো শাসনপদ্ধতির চাইতে উন্নততর।
একই বছর ১৪ নভেম্বর ''বিয়ন্ড দ্য দিলি­ ডগমা : ইন্ডিয়ান ফরেইন পলিসি ইন অ্যা চেঞ্জিং ওয়ার্ল্ড'' শীর্ষক চতুর্থ রামনাথ গোয়েংকা লেকচার দেন জয়শঙ্কর। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিপুলসংখ্যক কূটনীতিক, স্ট্র্যাটেজিস্ট, পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিক। জয়শঙ্করের বক্তব্যের মোদ্দা কথাই ছিল যে, ২০১৪ সাল পর্যন্ত ভারতের পররাষ্ট্রনীতি ছিল অপূর্ণাঙ্গ। কেননা, ওতে পাশ্চাত্য জগতের প্রতি পুরোপুরি নজর দেয়া হয়নি।

এসব দলিল পর্যালোচনা এবং চীন বিষয়ে ভারতের স্ট্র্যাটেজি পর্যবেক্ষণ করে আমরা যা দেখতে পাই, তা হলো, জয়শঙ্কর একজন ভালো রোগবিদ্যাবিৎ বা প্যাথলজিস্ট, কিন্তু খারাপ ফিজিশিয়ান বা চিকিৎসক।ভালো প্যাথলজিস্ট এই অর্থে যে তিনি ভারতের চায়না পলিসির কৌশলগত ''ডিসঅর্ডার''টা সঠিকভাবেই শনাক্ত করতে পেরেছেন। কিন্তু চিকিৎসক হিসেবে তিনি খারাপ। কারণ, তিনি যা প্রেসক্রাইব করেছেন তা এ রোগ নিরাময়ে অনুপযোগী এবং এর ব্যয়ভারও বহনযোগ্য নয়। তার ওপর তিনি শেষের চিকিৎসাটিই শুরুতে করতে বলেছেন।

ডায়গোনস্টিক পারস্পেক্টিভ বা রোগনির্ণয়বিদ্যার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে জয়শঙ্করকে মনে হয় ''গোল্ডিলকস প্রিন্সিলাফর-এ আচ্ছন্ন। তিনি তার আটলান্টিক কাউন্সিলের বক্তৃতায় ওই নীতিরই সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়ে গেছেন। ''গোল্ডিলকস প্রিন্সিপাল''-এর প্রতিপাদ্য হলো, সুপার পাওয়ারগুলো তাদের সম্ভাব্য প্রতিদ্ব›দ্বীর খুব বেশি শক্তিশালী হওয়াও মেনে নেবে না, আবার খুব বেশি দুর্বলও হতে দেবে না। বিদ্যমান সুপার পাওয়ারগুলো সবসময় চেষ্টা করে সুপার পাওয়ার হতে আগ্রহী দেশগুলোকে এ রকম একটা মাঝামাঝি অবস্থানে রাখতে।

আটলান্টিক কাউন্সিলের সভায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন যে, একটি দুর্বল ভারত পাশ্চাত্য বা চীন কারোই কাম্য হতে পারে না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ১৯৬২ সালের যুদ্ধে চীনের কাছে হেরে দুর্বল হয়ে পড়া ভারতের সাহায্যে এগিয়ে এসেছিল পশ্চিমা দেশগুলো। আবার ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ভারত যখন দক্ষিণ এশিয়ায় শ্রেষ্টত্বের দাবিদার হলো তখন পশ্চিমারাই আবার ভারতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলো। এর পরিপ্রেক্ষিতে জয়শঙ্কর স্বীকার করেন যে, যে-কোনো দেশের ক্ষমতা বৃদ্ধি ও সংকোচনে সুপার পাওয়ার দেশগুলো প্রধান ভূমিকা পালন করে।

জয়শঙ্করের দ্বিতীয় কথাটিও যথার্থ। তিনি বলেছেন, যে-কোনো স্ট্র্যাটেজি, কূটনীতি ও নীতিনির্ধারণের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হচ্ছে ঝুঁকি গ্রহণ, এটা অনেকটা পুঁজি বিনিয়োগের মতোই - লাভও হতে পারে, ক্ষতির ভয়ও আছে। ভারতের পররাষ্ট্রনীতি সবসময় ঝুঁকি এড়াতে অথবা কম ঝুঁকি নিতে চেয়েছে। ফলে তার ভাগ্যে সাফল্য আসেনি।

ভারতীয় পররাষ্ট্রনীতির এসব রোগ সারাতে জয়শঙ্কর যে প্রেসক্রিপশন দিয়েছেন তাতে তাকে একজন খারাপ ডাক্তার বলেই মনে করা যেতে পারে। যদি তিনি তার সব টাকা একটি স্কিমে ঢালেন, তাহলে তিনি কোনো ঝুঁকি নিলেন না, কিন্তু এটা হয়ে গেলো একটা জুয়া খেলার মতো, যা পরিণামে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

সব ডিম আমেরিকার ঝুড়িতে রেখে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেই বিপর্যয়ই ডেকে আনছেন বলে মনে হয়। মনে হয় তিনি পোর্টফলিও-ম্যানেজমেন্ট থিওরি সম্বন্ধে সজাগ নন। এ থিওরিতে ঝুঁকি কমানোর উপায় হিসেবে বহুমাত্রিকতার কথা বলা হয়েছে। কূটনীতিতে ঝুঁকি গ্রহনের বেলায়ও এ থিওরি সমানভাবে কার্যকর।

চীনের ব্যাপারে কঠোর নীতি গ্রহন করেছে বলেই যে পশ্চিমা দেশগুলো ভারতকে তাদের বাজারে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রবেশাধিকার দেবে, তার কিন্তু কোনোই গ্যারান্টি নেই। কেননা, ভারতের কঠোর চায়না পলিসির মূলে রয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে তার অর্থনীতির আকার ১০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করার বাসনা।

মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটে যোগদান ভারতের জন্য বিভিন্ন ফ্রন্টে ঝুঁকি ডেকে আনতে পারে। প্রথমত, ভারতের কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন-যে ঝুঁকির মুখে পড়ে যাবে, তা এককথায় নজিরবিহীন। যেমন, ভারত এখন ইরান ও রাশিয়ার সাথে কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক রক্ষা ও জোরদার করে চলেছে। এ দু' দেশকে শত্রূ বলেই গণ্য করে আমেরিকা। মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দেয়ার পর ভারত কি পারবে ইচ্ছামতো এ দু' দেশের সাথে সম্পর্ক রাখতে? পারবে কি চীনের সাথে বিদ্যমান সম্পর্ক বদলে ফেলতে?

মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটে যোগদানের বিনিময়ে ভারতকে এসব দেশের সঙ্গ ছাড়তেই হবে। অথচ জোটের কোনো সদস্য দেশই ভারতের সীমান্ত সমস্যার সমাধান দিতে পারবে না, কেবল লিপ সার্ভিস বা মুখের কথা ছাড়া।

দ্বিতীয়ত, ভারত নিজেকে এখন দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক নেতা এবং ভারত মহাসাগরীয় এলাকার নিরাপত্তার গ্যারান্টিদাতা মনে করে। কিন্তু বাস্তবে ভূটান ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার আর কোনো দেশই ভারতকে সমর্থন করে না।

মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দিলে ভারত মহাসাগরীয় এলাকায় ভারতের ভূমিকা সীমিত হয়ে যাবে জোটের একটি সদস্যের ভূমিকায়। আর যদি তারা নিজেদের ওই এলাকার নিরাপত্তার গ্যারান্টিদাতার ভূমিকায় দেখতে চায়, তাহলে তার নৌবাহিনীকে শক্তিশালী করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন হবে বিপুল অর্থের, যা দেশটির অর্থনীতিকে ক্ষতবিক্ষত করবে, কিন্তু কোনো দৃশ্যমান অর্জন দেবে না।

তৃতীয়ত, চীনবিরোধী মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট কোনো আদর্শিক লাইন ধরে গড়ে ওঠেনি। কোভিড-১৯ অতিমারী চীনের সৃষ্ট - এ রকম একটা আদর্শিক লাইন ধরে এগোতে চেষ্টা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র, কিন্তু তাতে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া ছাড়া আর কারও সমর্থন মেলেনি।

সব ডিম আমেরিকার ঝুড়িতে রেখে ভারত বিপর্যয়ই ডেকে আনছে বলে মনে হয়

 

ভারতের সাবেক কূটনীতিক এম কে ভদ্রকুমার বলেছেন, একটি কোল্ড ওয়ার বা স্নায়ুযুদ্ধ শুরু করার জন্য দু'টো বøক দরকার। কোভিড-১৯ ইস্যুতে চীনের বিরুদ্ধে এ রকম কোনো ব্লক গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে আমেরিকা, আর চীনও আমেরিকার এমন অভিযোগকে কেন্দ্র করে পাল্টা ব্লক গড়ায় আগ্রহ দেখায়নি।

চতুর্থত, আকাশে জঙ্গি বিমানের বহর, সমুদ্রে রণতরীর সারি আর স্থলে ট্যাঙ্ক ও আর্টিলারি দেশরক্ষায় প্রহরী হিসেবে নিজ-নিজ ভূমিকা পালন করে যায়। এই প্রহরা একটি দেশকে আপন অবস্থানে অটল থাকতে সহায়তা করে। তবে আসল যুদ্ধ নানা এজেন্ডা আলোচনার মধ্য দিয়ে টেবিলেই শেষ হয়ে যায়। চীন-ভারত সাম্প্রতিক অচলাবস্থা নিয়ে আলোচনার টেবিলে ভারতের কার্যত কোনো এজেন্ডা ছিল না। মনে হয়েছে, ভারত নিজ স্বার্থে চীনের বিরোধিতা করছে না, করছে অন্য কারও স্বার্থে।

সুপার পাওয়ার হওয়ার জন্য ভারতের যে স্বপ্ন, আমেরিকার সাথে সামরিক জোট গড়ার কারণে তা কমপক্ষে অর্ধ শতাব্দী পিছিয়ে যাবে। এ জোটে থাকলে ভারতের ভূমিকা হবে নিয়ম মান্যকারী দেশের, নিয়মপ্রণেতার নয়। এটা তো স্বতঃসিদ্ধ যে, সুপার পাওয়ার নিয়ম বানায়, অন্যেরা তা মেনে চলে। এবার আসা যাক চীনা কৌশলের কথায়।

২০১৪ সাল পর্যন্ত চীনা পররাষ্ট্রনীতির মন্ত্র ছিল, ''ক্ষমতা দেখিও না, সময় আসুক''। বিশ্ব অঙ্গনে চীনের আজকের অবস্থানের পেছনে দেং শিয়াওপিং-এর এ অনুশাসনের কার্যকারিতা আজ প্রমাণিত। তিনি দক্ষিণ চীন সাগর ও ভারতের সাথে সীমান্ত বিরোধের ঝুঁকি মেনে নিয়েছিলেন। দেশের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখন্ডতার বিষয়গুলো নিয়ে মাথা না-ঘামিয়ে নজর দিয়েছিলেন বিশ্বে চীনের শান্তিপূর্ণ উত্থানের দিকে।

১৯৯৯ সালে চীনের অর্থনীতির আকার ছিল এক দশমিক এক ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার আর আমেরিকার অর্থনীতির আকার ছিল নয় দশমিক ছয় ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। এখান থেকেই ভারতের রণকৌশল-প্রণেতারা তাদের চৈনিক প্রতিপক্ষের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারে।

১৯৯৯ সালের মে মাসে বেলগ্রেডের চীন দূতাবাসে ন্যাটো জোটের একটি বিমান হামলা হয়। এটি ছিল একটি পরিকল্পিত হামলা। চীনের ক্ষমতা ও প্রতিক্রিয়া দেখতেই হামলাটি চালানো হয়। চীন সেদিনও তার ক্ষমতা গোপন করতে সাফল্যের সাথে সমর্থ হয়।

চীন সেদিন যদি দেং-এর ''ক্ষমতা দেখিও না, সময় আসুক'' অনুশাসন মেনে চলতে ব্যর্থ হতো এবং প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য পাশ্চাত্যের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তো, তাহলে সেই ১৯৯৯ সালেই তারা শেষ হয়ে যেতে পারতো। ২০১৪ সালে অর্থনীতির আকার ১০ দশমিক পাঁচ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে উপনীত হওয়ার পরই কেবল বিশ্ব অঙ্গনে প্রাধান্য বিস্তারে এগিয়ে আসতে থাকে চীন।

এক হিসাবে দেখা গেছে, ২০৩০ সাল নাগাদ ভারতের অর্থনীতি সবচাইতে ভালো অবস্থায় থাকলেও তা হবে চীনের চাইতে তিন গুণ ছোট আর সবচাইতে খারাপ থাকলে হবে ১০ গুণ পিছিয়ে।

ভারতের অর্থনীতি ২০১৬ সাল থেকেই গভীর সঙ্কটে ভুগছে। এমনকি করোনা মহামারীর আগেও দেশটির জিডিপি প্রবৃদ্ধি চার দশমিক দুই শতাংশে নেমে আসে, যা পূর্ববর্তী ১১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

ভারতের বর্তমান কৌশলগত অবস্থানও চীনের সমান্তরালই; তবে বিপরীতমুখী। যেমন, বিশ্ব ব্যাঙ্কের হিসাবমতে, ২০১৯ সালে ভারত ও চীনের অর্থনীতির আকার ছিল যথাক্রমে দুই দশমিক সাত ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ও ১৪ দশমিক ১৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। এরপরও চীন তার অর্থনৈতিক শক্তিমত্তা প্রদর্শন করছে না, পক্ষান্তরে পেশি প্রদর্শন করে চলেছে ভারত।

দেখার বিষয় হলো, এরই মধ্যে জয়শঙ্কর তার দেশকে ঠেলে দিচ্ছেন মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের দিকে। এক্ষেত্রে ভারত না লুকাতে পারছে তার ক্ষমতা, না অপেক্ষা করছে উপযুক্ত সময়ের। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর তার দেশকে যেদিকে নিতে চাইছেন, এ মুহূর্তে সেই ভার বহনের ক্ষমতা ভারতের কোনোভাবেই নেই - না সামরিক, না অর্থনৈতিক। এসব পদক্ষেপ ভারত নিতে পারে ৩০ বছর পর, যখন তার অর্থনীতির আকার কাম্য ১০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে।

ভারতের বিভিন্ন থিংক-ট্যাঙ্কের গভীরতর বিশ্লেষণগুলো থেকে দেখা যায়, ভারতের এলিটরা মনে করেন না যে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের অর্থনীতির আকার ১০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে, এমনকি যদি তা সম্ভবপর সর্বোত্তম অবস্থায়ও থাকে। তারপরও দেশটির কতিপয় এলিটের মধ্যে এক ধরনের স্ট্র্যাটেজিক অ্যাডভেঞ্চারিজম কাজ করছে যে, মার্কিন নেতৃত্বাধীন মহাজোটে যোগ দিয়ে তারা চীনের অর্থনৈতিক সম্প্রসারণকে টেক্কা দিতে পারবে। জয়শঙ্কর এই অ্যাডভেঞ্চারাস ইন্ডিয়ান এলিটদেরই যোগ্য প্রতিনিধি।

বিডিভিউজ-এ প্রকাশিত লেখার স্বত্ব সংরক্ষিত। তবে শিক্ষা এবং গবেষণার কাজে সূত্র উল্লেখ করে ব্যবহার করা যাবে