পাক-ভারতের যুদ্ধ বিমান : মিরেজ বনাম এফ-১৬

-

  • ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৯:২২

ভারত ও পাকিস্তানের কাছে অত্যাধুনিক যুদ্ধ বিমান আছে। ভারতের কাছে আছে ফ্রান্সের তৈরি মিরেজ-২০০ অপরদিকে পাকিস্তানের কাছে আছে যুক্তরাষ্ট্রের এফ-১৬ যুদ্ধ বিমান। মিরেজ ২০০০ ও এফ-১৬,  যুদ্ধ বিমানের সক্ষমতার নানা দিকগুলো দেখে নেয়া যাক:   

১.

মাল্টিরোল সিঙ্গল ইঞ্জিন চতুর্থ প্রজন্মের জেট মিরেজ ২০০০ দাসো এভিয়েশনের সাহায্যে তৈরি। অন্যদিকে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান সিঙ্গল সুপারসনিক এফ-১৬ পাকিস্তানকে বিক্রি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যে কোনও আবহাওয়ায় এটি উড়তে এবং আঘাত হানতে সক্ষম।

২.

১৯৭০ দশকের শেষের দিকে লাইটওয়েট ফাইটার হিসেবে মিরেজ তৈরি করা হয়। পরবর্তীতে  বেশ কয়েকটি ‘স্ট্রাইক ভ্যারিয়ান্ট’ তৈরি করা হয়। ১৯৯৪ সাল নাগাদ বিল ক্লিন্টন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন পাকিস্তানের সঙ্গে আমেরিকার চুক্তি হয় এফ-১৬ সংক্রান্ত। চুক্তির পরও বিমান সরবরাহে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছিলো যুক্তরাষ্ট্র। সেই সময়ের সর্বাধুনিক যুদ্ধবিমান এফ-১৬ ২০১৬ সালে পাকিস্তানকে বিক্রি করছে। এটি তৈরি করে লকহিড মার্টিন।

৩.

মূলত অর্থ সাশ্রয়ী হালকা বহুমুখী বিমান হিসাবেই তৈরি করা হয়েছে এফ ১৬ বিমান। আরেক মার্কিন ব্যয়বহুল বিমান এফ ১৫কে সাহায্য করতেই এই বিমান তৈরি করা হয়েছিল।  ‘এয়ার টু এয়ার’-এ এফ ১৬ অত্যধিক সফল। অপরদিকে  মিরেজ ‘এয়ার টু এয়ার’, ‘এয়ার টু গ্রাউন্ড’ দু’টি ক্ষেত্রেই সফল আক্রমন করতে পারে।

৪.

মিরেজ ২০০০-এ উন্নততর সামরিক সরঞ্জামই শুধু নেই, বরং রাতেও বিমান হামলা চালানোর ক্ষমতা রাখে। এফ ১৬-এর ক্ষেত্রেও ‘নাইট ভিশন’ যথেষ্ট শক্তিশালী। কামান, ক্ষেপণাস্ত্র, বোমা সবরকম অস্ত্রই থাকে এটিতে।

৫.

মিরেজ ২০০০ নিজের সুরক্ষাও করতে পারে, আবার আঘাতও হানতে পারে। মিরেজে দু’টি ৩০০ এমএম ডেভা ৫০ রিভলভার কামান থাকে, এফ ১৬-এর ক্ষেত্রে একটি ২০ এমএম এম৬১ ভালকান কামান থাকে বাঁ দিকের ডানায়। এফ ১৬-এর কামানের গুলির হার ৬ হাজার রাউন্ড প্রতি মিনিটে, অপর দিকে মিরেজের কামানে গুলির হার ১৮০০ রাউন্ড প্রতি মিনিটে।

৬.

মিরেজে চালকের হেলমেটের মধ্যেই থাকে ডিসপ্লে। এর ফলে সুপার ইমপোজড রাডার ডেটা দেখতে পারেন তিনি। ককপিটে ডিসপ্লে থাকার প্রয়োজন হয় না। অন্যদিকে এফ ১৬-এর ককপিটও বেশ উন্নত। এতে রয়েছে মাল্টিফাংশনাল ডিসপ্লে।

৭.

মিরেজে রয়েছে রয়েছে মারাত্মক শক্তিশালী রাডার। যার ফলে লক্ষ্যবস্তুকে নিশানা করতে পারে সহজেই। ডপলার বিমিং প্রযুক্তির মাধ্যমে ভূমিতে থাকা যে কোনও বস্তুর নিখুঁত মানচিত্র এঁকে ফেলতে সক্ষম। পাকিস্তানের এফ ১৬-এর রাডারও শক্তিশালী। এই বিমানে ভার্টিকল স্টেবিলাইজার আছে। ৩৬০ ডিগ্রি ভিউ সম্ভব যুদ্ধের সময়ও।

৮.

মিরেজের থেকে ওজন বহন করার ক্ষমতা এফ-১৬-এর অনেকটাই বেশি। মিরেজ ২০০০ দূরপাল্লার অভিযানে বেশি সফল, এফ ১৬ মধ্যমাত্রার অভিযানে বেশি সফল।

৯.

মাটিতে থাকা যে কোনও চলন্ত বস্তুকেও নিশানা করতে সক্ষম দু’টি যুদ্ধবিমানই। অত্যন্ত শক্তিশালী মিরেজ যুদ্ধবিমানের অতি সম্প্রতি আধুনিকীকরণ হয়েছে। যদিও এমনিতে আকাশপথে ২৩৩৬ কিমি প্রতি ঘণ্টায় ওড়ে মিরেজ, এফ ১৬-এর গতি ২৪১৪ কিমি প্রতি ঘণ্টায়।

১০.

কার্গিল যুদ্ধে মিরেজ ব্যবহার করেছিলো ভারত।  অন্যদিকে আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধের সময় শত্রু শিবিরকে গুঁড়িয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল এফ ১৬। তবে আকাশপথে যুদ্ধের ক্ষেত্রে এফ ১৬-কেই এগিয়ে রেখেছেন বিশেষজ্ঞরা। অস্ত্র রাখার ক্ষমতার দিক থেকে এফ-১৬-এর ক্ষমতা খানিকটা বেশি।

১১.

মিরাজের থেকে আরও একটা জায়গায় এফ ১৬কে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা এগিয়ে রাখছেন, কারণ উল্লম্বভাবে আকাশ পথে যাতায়াতের ক্ষেত্রে এফ ১৬-এর গতি অনেকটাই বেশি।