রাশিয়া থেকে এয়ার ডিফেন্স ও ড্রোন কিনছে মিয়ানমার

-

  • অনলাইন ডেস্ক
  • ২৬ জানুয়ারি ২০২১, ১২:২৬

রাশিয়া থেকে ওরলান-টেন ই ড্রোন ও প্যান্টসার এন্টি এয়ারক্রাফট সিস্টেম কিনতে যাচ্ছে মিয়ানমার। গত ২২ জানুয়ারি এই দুটি প্রতিরক্ষা সামগ্রী কেনার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়াকে প্রস্তাব দিয়েছে মিয়ানমারের সরকার। অং সান সু কি’র দেশ হতে যাচ্ছে রাশিয়ার তৈরি গোয়েন্দা ড্রোনটির প্রথম ক্রেতা। একই সাথে তারা রাশিয়া থেকে বিমান বিধ্বংসী প্যান্টসার এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমও কিনতে যাচ্ছে।

কিছুদিন ধরেই রাশিয়া ওরলান ড্রোন রফতানির জন্য ক্রেতা খুজঁছিল। প্রায় এক দশক আগে রুশ সামরিক বাহিনীতে ওরলান ড্রোন যুক্ত হলেও মস্কো প্রথম এটি রফতানির ঘোষণা দেয় ২০১৭ সালে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত একটি প্রতিরক্ষা মেলায়। সম্প্রতি এক ইন্টারভিউতে রাশিয়ার উপপ্রতিরক্ষা মন্ত্রী আলেকজান্ডার ফোমিন আভাস দিয়েছিলেন এ বিষয়ে চুক্তি চূড়ান্ত করার। তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই মিয়ানমারকে মিগ-টুয়েন্টি নাইন ও ইয়াক-ওয়ান থার্টি এয়ারক্রাফট, এমআই-সেেেভনটিন ও এমআাই টুয়েন্টি ফোর হেলিকপ্টার সরবরাহ করেছি। এই বছর তারা আরো বিমান ও এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম কেনার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে।

প্রতিটি ওরালন টেন-ই ড্রোনের নির্মাণ খরচ এক লাখ মার্কিন ডলারের আশপাশে। ১.৮ মিটার লম্বার ড্রোনটির উইংস্প্যান ৩.১ মিটার। আবহাওয়া ভেদে ঘণ্টায় ৭০ থেকে ১৮০ কিলোমিটার বেগে উড়তে সক্ষম ড্রোনটি ৫ কেজি পর্যন্ত ওজন নিয়ে উড়তে পারে। ৬ হাজার মিটার পর্যন্ত উচ্চতায় উড়তে সক্ষম ড্রোনটি একটানা উড়তে পারে ১৫ ঘণ্টা।

পেট্রোল ইঞ্জিন চালিত মনুষ্যবিহীন এই আকাশ যানটি মাইনাস ৩০ ডিগ্রি থেকে সর্বোচ্চ ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় পূর্ণ সেবা দিতে পারে। ১৫০ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত কন্ট্রোল রুমের সাথে যোগাযোগ রাখতে সক্ষম ড্রোনটির ডাটা ট্রান্সফারের গতি প্রতি সেকেন্ডে ১০ মেগাবাইট। ভিডিও ক্যামেরা, টিভি ক্যামেরা বা ইনফ্রারেড ক্যামেরা দিয়ে ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে পারে। আর এক কন্ট্রোল রুম একই সাথে ১৬টি ওরলান ড্রোনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

সাধারণত এক সাথে দুটি বা তিনটি ওরলান ড্রোন অপারেশনে পাঠানো হয়। এর মধ্যে প্রথমটি নজরদারি, দ্বিতীয়টি ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার আর তৃতীয়টি গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে।

উদ্ভাবনের পর থেকে এখন পর্যন্ত ১১টি বিভিন্ন সস্করণের এক হাজারের বেশি ওরালান টেন ড্রোন নির্মাণ করেছে রাশিয়া। ইউক্রেন, সিরিয়া, লিবিয়া ও নাগোরনো-কারাবাখের সর্বশেষ যুদ্ধে দেখা গেছে এই ড্রোনের ব্যবহার।

প্যান্টসার এন্টি এয়ারক্রাফট সিস্টেমটি ২০১২ সাল থেকে যুক্ত হয়েছে রুশ সামরিক বাহিনীতে। মাঝারি পাল্লার সারফেস টু এয়ার মিসাইল ও বিমান বিধ্বসী কামানের গোলা ছুড়তে পারে এটি। এর প্রতিটি ইউনিটের দাম ১৩ থেকে ১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

সিরিয়ার বাশার আল আসাদের সরকার এই এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমটি ব্যবহার করছে। লিবিয়ার গৃহযুদ্ধে খলিফা হাফতারের বাহিনীকে এটি দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। ইউক্রেনের রুশ সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরাও এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটি ব্যবহার করছে বলে শোনা যাচ্ছে। তবে মিয়ানমার প্যান্টসার সিস্টেমের কতটি কিনতে যাচ্ছে সে সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি।

ফ্রিগেট বানাচ্ছে তুরস্ক

প্রথমবারের মতো আই-ক্লাস ফ্রিগেট বানাচ্ছে তুরস্ক। দেশটির মিলজেম নামের ন্যাশনাল শিপ প্রোজেক্টের অংশ হিসেবে নির্মিত টিসিজি ইস্তাম্বুল নামের এই যুদ্ধজাহাজ তুর্কি নৌবাহিনীর বহরে যোগ দেবে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে। ১১৩ মিটার লম্বা ফিগ্রেটটিতে থাকবে আগামী প্রজন্মের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম, সারফেস ওয়ার সিস্টেম ও সাবমেরিন ডিফেন্স সিস্টেম।

টিসিজি ইস্তাম্বুল যুদ্ধ জাহাজে থাকবে তুরস্কের নিজস্ব উদ্ভাবিত ইনফ্রারেড সার্চ এন্ড ট্রাকিং সিস্টেম। এই সিস্টেম উদ্ভাবন করেছে তুরস্কের শীর্ষস্থানীয় প্রতিরক্ষা সামগ্রী নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আসেলসান। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ফ্রিগেটটিতে ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক অ্যাসল্ট সিস্টেম, গাইডেড সিস্টেম ও এন্টি টর্পেডো শেইল্ডও তৈরি করা হয়েছে তুরস্কে।

ফ্রিগেট ও করভেট তৈরির বিশাল পরিকল্পনা নিয়ে তুরস্ক মিলজেম নামক ন্যাশনাল শিপবিল্ডিং প্রজেক্টটি হাতে নিয়েছে। এর প্রতিটি নৌযান তৈরি করা হবে আগামী দিনের সামরিক চাহিদার মানদণ্ড বজায় রেখে। নজরদারি, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, এন্টি সাবমেরিন ওয়ারফেয়ার, সারফেস টু সারফেস মিসাইল ও সারফেস টু এয়ার মিসাইলসহ বিভিন্ন প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি থাকবে এসব যুদ্ধজাহাজে। এছাড়া সমুদ্র ও স্থলভাগ-উভয় জায়গায় অভিযান চালাতে সক্ষম এমন সামরিক যানও তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে তুরস্কের।

ইতোমধ্যেই তুরস্কের নৌ বাহিনীতে চারটি আডা-ক্লাস করভেট যুক্ত হয়েছে। এছাড়া দেশটি পাকিস্তানে রফতানির জন্য তৈরি করছে ৪টি করভেট, যার তিনটি ইতোমধ্যেই সরবরাহ করা হয়েছে, চতুর্থটির নির্মাণ কাজ চলছে। ইউক্রেনের সাথেও সামরিক নৌ যান সরবরাহের একটি চুক্তি করেছে তারা সম্প্রতি।

এই বিশাল প্রকল্পের প্রধান অংশীদার দুই তুর্কি প্রতিরক্ষা জায়ান্ট আসেলসান ও হাভেলসান। সব মিলে পুরো প্রজেক্টে জড়িত ৮০টি কোম্পানির মধ্যে দুই তৃতীয়াংশের বেশি তুর্কি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান সরবরাহ করবে সামরিক নৌ যানগুলোর বিভিন্ন সামগ্রী।

প্রতিরক্ষা শিল্পে সাবলম্বী হওয়ার পথে খুব দ্রুত অগ্রসরমান তুরস্কের জন্য নতুন এক মাইলফলক এই মিলজেম প্রজেক্ট। এই প্রজেক্টের করভেট ও ফ্রিগেটগুলো তৈরি সম্পন্ন হলে তুরস্কের নৌ বাহিনীর শক্তি আরো অনেক বেড়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

এদিকে আরো একটি ড্রোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়েছে তুরস্কে। আঙ্কারা ভিত্তিক বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান লাপিক হাভাসিসিলিক তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ওই ড্রোন কারখানটি চালু করেছে। সাড়ে তিন হাজার বর্গমিটার জায়গা জুড়ে নির্মিত কারখানটি ইতোমধ্যেই পূর্ণ মাত্রায় ড্রোন উতপাদনের কাজ শুরু করেছে। খাড়াভাবে উড্ডয়ন ও অবতরণ করতে সক্ষম এমন একটি ড্রোন রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির উল্লেখযোগ্য প্রোডাক্টের মধে। কৃষি কাজে সহযোগিতা, উদ্ধার অভিযান কিবা যোগাযোগের কাজ করতে পারবে ড্রোনটি।

তুরস্কের ক্রমবর্ধমান ড্রোন শিল্প গত কয়েক বছর ধরেই সারা বিশ্বের নজর কেড়েছে। দেশটির বেকার ও টার্কিশ অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ ইতোমধ্যেই বিশ্বামানের ড্রোন উ’পাদন করে চলেছে।

অ্যাঞ্জেলিনা জোলি সিআইয়ের চর

অনেক সিনেমায় গুপ্তচর চরিত্রে অভিনয় করেছেন হলিউডের খ্যাতিমান অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। কিন্তু এবার একটি সংবাদ মাধ্যম দাবি করেছে, জোলি নাকি সত্যিই যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইয়ের চর। ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড দ্য সানের বরাত দিয়ে এশিয়া টাইমসের এক খবরে বলা হয়েছে, ৪৫ বছর বয়সী এই অভিনেত্রী ও সমাজকর্মীর বিষয়ে এমন অভিযোগের পক্ষে প্রমাণও আছে।

এশিয়া টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ও হলিউডের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে যেসব কথা প্রচলিত আছে, সেগুলো বিশ্বাস করলে বলতে হবে ২০০০ সালের দিকেই সিআইয়ে অ্যাঞ্জেলিনা জোলিকে রিক্রুট করেছে।

ওই সময়ের পর থেকে অস্কার জয়ী এই অভিনেত্রীকে একাধিক বিদেশী কর্মকর্তা সিআইএ’র চর হিসেবে অভিযুক্ত করেছেন। শুধু তাই নয়, সিআইএর এক ডিরেক্টরের বরখাস্ত হওয়ার বিষয়েও তার সংশ্লিষ্টতা ছিলো। এখানেই শেষ নয়, সিআইএর সমর্থন ছিলো এমন দুটি সিনেমাতেও অভিনয় করতে দেখা গেছে এই খ্যাতিমান অভিনেত্রীকে।

চলচ্চিত্র জগতের সাথে গোয়েন্দা জগতের সংযোগ নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করা বিশেষজ্ঞ টম সিকার বলেছেন, এসব সূত্র থেকে বোঝা যায় অ্যাঞ্জেলিনা জোলি ও সিআইয়ের মাঝে কিছু একটা আছে। ন্যাশনাল সিকিউরিটি সিনেমা নামের বইয়ের লেখক সিকার মনে করেন, ইন্টেলিজেন্স কমিউনিটির জন্য জোলি হতে পারেন একজন আদর্শ বাছাই।

বিভিন্ন সময় মানবিক কাজে অংশ নিতে গিয়ে জোলির বেশ কিছু মন্তব্য উঠে এসেছে রিপোর্টে। ২০১৮ সালে পেরুতে ভেনেজুয়েলার উদ্বাস্তুদের দেখতে গিয়ে ভেনজুয়েলার রাজনীতি নিয়ে তার বক্তব্য সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল। ২০১২ সালে তুরস্কের এক বিরোধী দলীয় নেতাও অ্যাঞ্জেলিনা জোলির সিআইএ সম্পৃক্ততা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। পরবর্তীতে বাগদাদে সিআইয়ের সাবেক ডিরেক্টর ডেভিড পেট্রাউসের সাথেও ঘনিষ্টভাবে দেখা গেছে তাকে।

নতুন ড্রোন আসছে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে

স্থানীয়ভাবে নির্মিত সুইচ ড্রোনের আরও কয়েকটি কিনতে প্রায় ২০ মিলিয়ন ডলারে একটি চুক্তি সই করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। আগামী ১ বছরের মধ্যে ড্রোনগুলো সরবরাহ করার কথা রয়েছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটির। সুইচ অধিক উচ্চতায় উড়তে সক্ষম এমন একটি ড্রোন।

মুম্বাইভিত্তিক আইডিয়া ফোর্জ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের তৈরি সুইচ ড্রোনটি খাড়াভাবে উড্ডয়ন ও অবতরণ করতে সক্ষম। খারাপ আবহাওয়াতেও দিনে কিংবা রাতে এটি সার্ভিস দিতে পারে। ড্রোনটির গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের ক্ষমতাও বেশ ভালো।

নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, একই ধরনের যে কোন প্রতিষ্ঠানের ড্রোনের সাথে পাল্লা দিয়ে কাজ করতে সক্ষম সুইচ ড্রোন। আইডিয়া ফোর্জের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অঙ্কিত মেহতা বলেন, পরীক্ষায় প্রমাণ হয়েছে সুইচ ড্রোন ভারতীয় সেনাবাহিনীর চাহিদা পূরণ করতে পারবে।