সাইবার অ্যাটাক, যুদ্ধ শুরুর আগের যুদ্ধ

উন্নত দেশগুলোতে সাইবার হামলার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে - পিন্টারেস্ট

  • হুমায়ুন সাদেক চৌধুরী
  • ১০ জুন ২০২০, ২২:১৮

সাইবার হামলার কথা আমরা প্রায়ই শুনি। এমনও বলা হয়, বিশ্বশক্তিগুলোর মধ্যে উত্তেজনা যেভাবে বাড়ছে, তাতে সশস্ত্র যুদ্ধ শুরুর আগেই শুরু হয়ে যেতে পারে সাইবার যুদ্ধ। এ যুদ্ধে সাইবার আক্রমণের শিকার হবে প্রতিপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন অবকাঠামো।

কথিত আছে, ২৪ ও ২৫ এপ্রিল ইসরাইলের পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় সাইবার হামলা চালায় ইরান। এতে-যে ইসরাইলের কম্পিউটারগুলোই শুধু বন্ধ হয়ে যায় আর পানি সরবরাহ বিঘ্নিত হয়, তা নয়। এ হামলার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল আরও অনেক বেশি। ইরানের কথিত এ হামলার লক্ষ্য ছিল, ইসরাইলের পানি সরবরাহ অবকাঠামোয় বিপুল পরিমাণ বিষাক্ত ক্লোরিন ছড়িয়ে দেয়া, যাতে করে ওই বিষাক্ত পানি পান করে হাজার হাজার ইসরাইলীর প্রাণহানি ঘটে।

শত্রূর পুকুর, ডোবা, কুয়া, হ্রদ ও জলাধারে বিষ প্রয়োগের ঘটনা নতুন কিছু নয়; ওসব চলে আসছে অনাদিকাল থেকেই। তবে সাইবার হামলা চালিয়ে কারো পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় বিপুল পরিমাণ বিষাক্ত ক্লোরিন ছড়িয়ে দেয়ার ঘটনা বলতে গেলে একদম নতুনই। ইরান ওই হামলায় ইসরাইলের ছয়টি পানি সরবরাহ কেন্দ্রের অপারেটিং সিস্টেম এবং সেগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা অচল করে দেয়।

এ সাইবার হামলা নিয়ে পরে ব্যাপক গবেষণা ও অনুসন্ধান চালায় একটি মার্কিন সাইবার সিকিউরিটি কোম্পানি। এর নাম ফায়ারআই। এর সদর দফতর ক্যালিফোর্নিয়ার মিলপিটাসে। কম্পানিটি পরে জানায়, এ ধরনের হামলা চালানোর জন্য উদ্ভাবিত ম্যালওয়্যারটি এসেছে রাশিয়া থেকে। মার্কিন কম্পানিটি আরো পরিষ্কার করে জানায়, রাশিয়ার সেন্ট্রাল সায়েন্টিফিক রিসার্চ ইন্সটিটিউট অব কেমিস্ট্রি অ্যান্ড মেকানিকস-এ এ ম্যালওয়্যার প্রস্তুত হয়েছে এবং তাদের কাছ থেকেই ইরান সেটি পেয়েছে। রুশ সরকারের মালিকানাধীন এ কারিগরি গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি মস্কোয় অবস্থিত।

এ ম্যালওয়্যারটি প্রথম ব্যবহৃত হয় ২০১৭ সালে। সে-সময় এটি কাজে লাগানো হয় সউদি আরবের পেট্রোকেমিক্যাল প্ল্যান্টে হামলার কাজে। পরে রাশিয়া থেকে এটি আসে ইরান সরকারের হ্যাকারদের হাতে। এটি কোথা থেকে এসেছে তা বুঝতে না-দেয়ার জন্য সাইবার হামলাটি করা হয় ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন সার্ভার হয়ে।

নিজেদের পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় এ ধরনে অভূতপূর্ব সাইবার হামলার ঘটনায় হতভম্ব হয়ে যায় ইসরাইল। কেননা, এটি এমন এক নিরস্ত্র হামলা, যার শিকার হয়ে লাখ লাখ বেসামরিক মানুষের করুণ মৃত্যু ঘটতে পারতো। এ ধরনের সম্ভাব্য হামলার ব্যাপারে যথেষ্ট সতর্ক না-থাকায় এবং প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি না-রাখায় ইসরাইলের ন্যাশনাল ওয়াটার কোম্পানি মেকোরৎ-কে তীব্র সমালোচনা হজম করতে হয়।

ইসরাইলে জাতীয় পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় সাইবার হামলার পর নতুন কোনো হামলার আশঙ্কায় পুরনো সব পাসওয়ার্ড বদলে ফেলা হয় এবং নতুন হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার স্থাপন করা হয়।

এরপর থেকে উন্নত দেশগুলোতে সাইবার হামলার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মনে করা হতে থাকে, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পরমাণু কেন্দ্র, ট্রান্সপোর্টেশন হাব, ব্যাঙ্কিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সিস্টেম, কমিউনিকেশন সিস্টেম, রেলপথ, মেট্রো, ইলেকট্রিক্যাল গ্রিড, বাঁধ ও জলাধার, ওয়াটার অ্যান্ড স্যুয়ারেজ সিস্টেম, কৃষি, খাদ্য, স্বাস্থ্য ও ওষুধ কিছুই বাদ যাবে না এ হামলা থেকে।

ইসরাইলও তার পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় হামলার প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নিতে সাইবার হামলা চালালে হরমুজ প্রণালীতে অবস্থিত ইরানের শহীদ রাজী বন্দর অর্থাৎ বন্দর আব্বাস সাময়িককালের জন্য অচল হয়ে যায়। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য দেশে এমন-সব ল্যাবরেটরি ও প্রতিষ্ঠানকে সাইবার হামলার টার্গেট করা হয়, যেগুলো কোভিড-১৯এর ভ্যাকসিন ও ওষুধ উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করছিল।

ক্রমবর্ধমান ওসব সাইবার হামলার জন্য চীন, রাশিয়া ও ইরানকে দায়ী করতে থাকেন মার্কিন কর্মকর্তারা। কোভিড-১৯এর ভ্যাকসিন ও ওষুধ উদ্ভাবন নিয়ে কর্মরত ল্যাবরেটরি ও প্রতিষ্ঠানে সাইবার হামলার ঘটনা থেকে অনুমান করা যায়, বিভিন্ন দেশের ওষুধ কম্পানিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা কতটা তীব্র। কেননা, যারাই সবার আগে কোভিড-১৯এর কার্যকর ভ্যাকসিন ও ওষুধ উদ্ভাবন করতে এবং বাজারে আনতে পারবে, তারাই অপরিমেয় মুনাফার অধিকারী হবে।

এদিকে মার্কিন কম্পানিগুলোর মধ্যে এমন উদ্বেগও রয়েছে যে, বিদেশি, বিশেষ করে চীন থেকে আসা সরঞ্জামগুলো প্রস্তুত হয়েছে গোপনে আর তাতে কোড অব ফার্মওয়্যার অথবা সফটওয়্যারে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে ম্যালওয়্যার, যা চলে আসতে পারে হার্ডওয়্যারের সাথে। এমন উদ্বেগ একেবারে অমূলকও নয়। কেননা, প্রকাশ্য বাজারে সাধারণ ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করা চীনা সরঞ্জামের মধ্যে ম্যালওয়্যারের সংক্রমণ খুঁজে পাওয়া গেছে অথবা জানা গেছে যে এগুলো গোপনে প্রস্তুত।
এমন অবস্থায় বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটি এবং প্রতিরক্ষা বিভাগের বিভিন্ন স্থাপনায় বসানো চীনের তৈরি নজরদারি ক্যামেরাগুলো সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করেছে পেন্টাগন। চীন ও অন্যান্য দেশ থেকে যেসব ফ্ল্যাশ মেমোরি ডিভাইস মার্কিন দেশে আসছে, সেগুলোর প্রবেশও ঠেকিয়ে দিচ্ছে পেন্টাগন। তাদের যুক্তি হলো, এসব ডিভাইস হয় লুকানো ম্যালওয়্যার বহন করছে, নয়তো ওগুলো নিজেরাই নিরাপদ নয়।

বিভিন্ন সরকারি সংস্থা, প্রতিরক্ষা ঠিকাদার ও গুরুত্বপূর্ণ ইনফ্রাস্ট্রাকচার অর্গানাইজেশন নিয়মিত যেসব নেটওয়ার্ক রাউটার ও অন্যান্য হার্ডওয়্যার কিনে থাকে, সেগুলো নিয়েও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে এদিকে গত মে মাসের শেষ দিকে চীনের চিয়াংসু হুয়াপেং ট্রান্সফরমার কম্পানির তৈরি করা পাঁচ লাখ পাউন্ড পাওয়ার ট্রান্সফরমার বাজেয়াপ্ত করে মার্কিন সরকার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্টার্ন এরিয়া পাওয়ার অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এসব ট্রান্সফরমার কিনেছিল। বাজেয়াপ্ত করার পর মার্কিন সরকার ট্রান্সফরমারগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখার জন্য স্যান্ডিয়া ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিতে পাঠিয়ে দেয়।

সশস্ত্র যুদ্ধ শুরুর আগেই শুরু হয়ে যেতে পারে সাইবার যুদ্ধ-এএফপি
সশস্ত্র যুদ্ধ শুরুর আগেই শুরু হয়ে যেতে পারে সাইবার যুদ্ধ-এএফপি

 

বলা ভালো যে, চীনের চিয়াংসু হুয়াপেং কম্পানি সেই ২০০৯ সাল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক, নিউ জার্সি, ফ্লোরিডা ও নেভাডার বিভিন্ন কম্পানির কাছে বড় ট্রান্সফরমার বিক্রি করে আসছে। এ পর্যন্ত চীনা কম্পানিটি মার্কিনীদের এ রকম ট্রান্সফরমার বিক্রি করেছে ১০০টিরও বেশি। পোর্ট অব হিউস্টন থেকে বাজেয়াপ্ত হওয়া ট্রান্সফরমারগুলো কিনেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্টার্ন এরিয়া পাওয়ার অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। তারা এগুলোর দামও পরিশোধ করেছিল।
চীনের চিয়াংসু হুয়াপেং কম্পানির ট্রান্সফরমার নিয়ে এতদিন কোনো কথা ছিল না। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেইমাত্র ''সিকিউরিং দ্য ইউনাইটেড স্টেটস বাল্ক-পাওয়ার সিস্টেম'' শীর্ষক নির্বাহী আদেশ-১৩৯২০তে স্বাক্ষর করেন, তখনই তাড়াহুড়ো শুরু হয়ে যায়। আদেশে বলা হয়, ''চীনে তৈরি বা চীন থেকে সংগৃহীত অবকাঠামো সরঞ্জামে ঝুঁকির মাত্রা ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। বিদেশী শত্রূরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাল্ক পাওয়ার সিস্টেমে ক্রমেই নানা রকম ঝুঁকি তৈরি করছে এবং তাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করছে। বাল্ক পাওয়ার সিস্টেম আমাদের দেয় বিদ্যুৎ, যে বিদ্যুৎ আমাদের জাতীয় প্রতিরক্ষা, মৌলিক জরুরি সেবাসমূহ, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোসমূহ, আমাদের অর্থনীতি ও জীবনধারাকে সচল রাখতে সহায়তা করে।'' প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশে বিদেশী শত্রূর সাথে ন্যূনতম সংশ্লিষ্টতা আছে এমন কোনো ব্যক্তি বা কম্পানির কাছ থেকে বিদ্যুতের অবকাঠামো সরঞ্জাম আমদানির ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।

এদিকে চীনের চিয়াংসু হুয়াপেং কম্পানি জাহাজবোঝাই করে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও ডিজিটাল কন্ট্রোলের একটি চালান যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছে, স্বাভাবিকভাবেই এতে একটি পাওয়ার ট্রান্সফরমারও রয়েছে। মার্কিন কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, এসব সরঞ্জাম 'বিশেষভাবে' বানানো হতে অথবা এসবের ভেতরেই ম্যালওয়্যার যুক্ত করে দেয়া থাকতে পারে। ''ওয়াল স্ট্রীট জার্নাল'' জানায়, মার্কিন সরকারের নজর রয়েছে মূলত একটি মনিটরের প্রতি, যা ট্রান্সফরমারের ইনস্যুলেটিং অয়েলের কমে আসা শনাক্ত করতে পারে।

নিয়ম হলো, সকল ট্রান্সফরমারকেই ঠাণ্ডা করতে হয়। এর প্রচলিত পদ্ধতি হলো, ট্রান্সফরমারের কেন্দ্রস্থলকে তেল বা অন্য কোনো তরল পদার্থে ভর্তি জ্যাকেট দিয়ে মুড়িয়ে দেয়া, যাতে তার তাপ বের হয়ে যেতে পারে। এ তেলের তাপমাত্রা যদি স্বাভাবিকের চাইতে বেশি হয়, তাহলে বুঝতে হবে, বিপদ আসন্ন।

ট্রান্সফরমারের সেন্সরই এর নিরাপত্তাব্যবস্থাকে চালায় এবং এ কারণে এটি ট্রান্সফরমারকে অচলও করে দিতে পারে। তখন এটি মেরামত করা বা নতুন আরেকটি বসানো ছাড়া উপায় থাকে না। বড় কোনো পাওয়ার গ্রীডের ট্রান্সফরমার ওভারহিট বা অতিরিক্ত গরম হয়ে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে সেটিতে আগুন ধরে যেতে অথবা সেটি বিস্ফোরিতও হতে পারে। গত বছর জুলাই মাসে একটি ট্রান্সফরমারে আগুন ধরে গেলে মিডটাউন ম্যানহাটনে বিদ্যুৎ বিপর্যয় নেমে আসে।
যাহোক, ট্রাম্প প্রশাসন চীনের বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারের ওপর কেন খড়্গহস্ত হলো, তা পুরোপুরি পরিষ্কার নয়। তবে এটা ঠিক, বিশ্বে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারের বাজার ক্রমেই বাড়ছে। ধারণা করা হয়, ২০২৪ সাল নাগাদ এটি ৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজার হবে। ট্রান্সফরমার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অবস্থিত। অথচ যুক্তরাষ্ট্রই হচ্ছে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারের বিশ্বের বৃহত্তম বাজার। এখানেই স্থাপন করা হয়েছে সবচাইতে বেশি বৃহদাকৃতির বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার, যেগুলো অবশ্য এখন বয়সের ভারে জীর্ণ।

মার্কিন জ্বালানি বিভাগের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র তার প্রয়োজনের ১৫ শতাংশ বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারই কেবল তৈরি করে থাকে। এ অবস্থায় ট্রাম্প প্রশাসন চাইছে, দেশে আরও বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার তৈরি হোক।পাশাপাশি জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার কয়েকটি কম্পানিও এখন যুক্তরাষ্ট্রে ট্রান্সফরমার নির্মাণ প্ল্যান্ট গড়ে তুলছে।

সব মিলিয়ে বলা যায়, ট্রাম্প প্রশাসন-যে কেবলই অর্থনৈতিক যুক্তিতে এসব ব্যবস্থা নিচ্ছে, এমন নয়। এর সাথে জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুও জড়িত। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এদিকে বিশেষ নজর রাখতে জ্বালানি ও বাণিজ্য বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন। এতেই বুঝা যায়, বিদেশ থেকে আসা হার্ডওয়্যারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ গ্রীডে হুমকি সৃষ্টির কোনো প্রমাণ প্রশাসন পেয়েছে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র সবচাইতে বেশি উদ্বিগ্ন সাইবার হামলা নিয়ে, যা তাদের জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রীডকে অচল করে দিতে পারে। ভয় করছে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক পালস অ্যাটাক বা ইএমপি নিয়েও। এ রকম হামলাও অচল করতে পারে মার্কিন জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রীডকে।

যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক সরকারগুলো ইএমপি-র মোকাবিলায় বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারকে শক্তিশালী করতে চেয়েছে, কিন্তু একদিকে অতি-আমদানিনির্ভরতা, অন্যদিকে বেসরকারি ও আধা-সরকারি বিদ্যুৎ কম্পানিগুলোর অনাগ্রহের কারণে এ কাজে বাস্তব অগ্রগতি বলতে তেমন কিছুই হয়নি।

এদিকে চীনের সাথে, পাশাপাশি রাশিয়ার সাথেও যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনা বেড়ে চলার প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোয় আরও ভয়ানক হামলার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এ আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়ার মতো নয়। এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও অনেক দেশই প্রতিদ্বন্দ্বী বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোয় সাইবার হামলা চালিয়েছে। ২০১০ সালে ইরানের সেন্ট্রিফিউজ লক্ষ্য করে ''স্টুক্সনেট'' জীবাণু ব্যবহার করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল। উদ্দেশ্য ছিল, সেন্ট্রিফিউজের সুপারভাইজরি কন্ট্রোল এবং ডেটা অ্যাকুইজিশন সিস্টেম ধ্বংস করে দেয়া। এটা হলে ইরানের পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচির গতি মন্থর হয়ে যেত। ২০১৯ সালে সউদি আরবের তেল স্থাপনায় ক্রূজ মিসাইল ও ড্রোন হামলার পর ইরানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোয় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। ২০১০ ও ২০১৯ সালের দুটি হামলার কোনোটিই পুরোপুরি সফল হয়নি।

দেখা গেছে, সাম্প্রতিক সাইবার হামলাগুলোতে আরও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে, যাতে টার্গেট বা লক্ষ্যবস্তুর নিরাপত্তাব্যবস্থাকেও পরাজিত করা যায়। এর অর্থ দাঁড়ায়, সাইবার হামলা ক্রমেই আরও বেশি করে যুদ্ধাস্ত্র হয়ে উঠছে। আগামী দিনের পৃথিবী একে কিভাবে ব্যবহার করে এবং কিভাবে মোকাবিলা করে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

প্রতিবেদনটির ভিডিও দেখুন

বিডিভিউজ-এ প্রকাশিত লেখার স্বত্ব সংরক্ষিত। তবে শিক্ষা এবং গবেষণার কাজে সূত্র উল্লেখ করে ব্যবহার করা যাবে