তুরস্কের সঙ্গে ড্রোন বানাবে সৌদি আরব


  • মেহেদী হাসান
  • ২৭ মার্চ ২০২১, ১৪:১৯

সৌদি আরবের দুটি প্রতিষ্ঠান তুরস্কের সাথে যৌথভাবে ড্রোন বিমান নির্মাণ শুরু করেছে। ইন্ট্রা ডিফেন্স টেকনোলজি এবং এডভান্সড ইলেকট্রনিক্স কোম্পানি নামক দুটি প্রতিষ্ঠান তুরস্কের কারেইল-এসইউ ড্রোন নির্মাণ করবে তুরস্কের কাছ থেকে লাইসেন্স নিয়ে। ভেস্টেল সাভুনমা থেকে তারা লাইসেন্স সংগ্রহ করবে।

ডিফেন্স নিউজের খবরে বলা হয়ছে, এই ড্রোন নির্মাণে সৌদি আরবের অ্যাডভান্সড ইলেকট্রনিক্স কোম্পানি ইলেকট্রনিক পার্টস সরাবরাহ করবে। আর তুরস্কের ভেস্টেল বিমানের অপরিহার্য ক্রিটিকাল পার্টস জোগান দেবে।

এর আগে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ১৬ মার্চ জানান, সৌদি আরব তুরস্কের সশস্ত্র কমব্যাট ড্রোন বিমান কিনতে চাচ্ছে। ডিফেন্স নিউজে বলা হয়েছে, যৌথভাবে নির্মাণ ছাড়াও সৌদি আরব তুরস্কের কাছ থেকে সরাসরি ড্রোন বিমান কিনতে পারে।

২০১৭ সালে দুবাই এয়ার শোতে এ ধরনের একটি চুক্তি হয়েছিল দু দেশের মধ্যে। যৌথ নির্মাণ কর্মসূচীর আওতায় ২০২৫ সালের মধ্যে ৪০টি ড্রোন বিমান নির্মাণ করা হবে।

তুরস্কের যে কারেইল-এসইউ ড্রোন বিমান সৌদি আরর তৈরি করবে সেটি মাঝারি শক্তির ড্রোন বিমান। এটি ১৮ হাজার ফিট উচ্চতায় টানা ২০ ঘন্টা আকাশে উড়তে পারে। ১২০ কেজি ওজনের অস্ত্র বা পন্য নিয়ে উড়তে পারে টানা ৮ ঘন্টা। সর্বোচ্চ গতি ঘন্টায় ৯২ মাইল। এর ইঞ্জিন ক্ষমতা ৯৭ হর্স পাওয়ার। ড্রোনটি যেসব অস্ত্র বহন করে তা তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সমরাস্ত্র প্রতিষ্ঠান রকেটসান তৈরি করে।

***
তুরস্ক জানিয়েছে, রাশিয়ার তৈরি এস-৪০০ মিসাইল ব্যবহারের ক্ষেত্রে তারা যুক্তরাষ্ট্রের অনুমতি নেওয়ার তোয়াক্কা করবে না। যখন প্রয়োজন হবে তখন তারা এটি ব্যবহার করবে এবং সে ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অনুমতি নেবে না। রাশিয়ার সরকারি বার্তা সংস্থা স্পুটনিককে তুরস্কের পার্লামেন্টারি ডিফেন্স কমিটির মুখপাত্র মুরাত বেবাতুর এ কথা জানিয়েছেন।

কয়েক দিন আগে তুরস্কে নিয়োজিত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ডেভিড সাটারফিল্ড বিবিসিকে জানান, এস-৪০০ নিয়ে তুরস্ক-যুক্তরাষ্ট্র অচলাবস্থার একমাত্র সমাধান হলো এ মিসাইল ব্যবহার থেকে বিরত থাকা ।

এর জবাবে তুরস্কের মুরাত বেবাতুর বলেন, তুরস্ক তার নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেবে। এ মিসাইল ব্যবহারের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কারো অনুমতির ধার ধারে না তুরস্ক। এ বিষয়ে তুরস্ক যা সিদ্ধান্ত নেয়ার তা আগেই নিয়ে রেখেছে এবং সেখান থেকে ফিরবে না তুরস্ক।

মুরাত বলেন, সব ফোরামে আমরা বলেছি তুরস্ক যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভাল সম্পর্ক চায়। কিন্তু সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে তুরস্ক তার অধিকার রক্ষা থেকে পিছিয়ে আসবে না। তিনি বলেন এস-৪০০ নিয়ে বিতর্ক অবসানে শীঘ্রই একটি সমাধানে পৌছানো হবে।

প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান এর আগে বলেছেন, এস-৪০০ মিসাইল সিস্টেম কেনা তুরস্কের সার্বভৌম একটি বিষয়। রাশিয়ার কাছ থেকে আরো এস-৪০০ কেনার আগে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে জিজ্ঞেস করব না।

তুরস্ক রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ এ মিসাইল ক্রয় নিয়ে ২০১৯ সাল থেকে তুরস্ক-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের অবনতি ঘটে।

***
আগামী এক মাসের মধ্যে হাইপারসনিক মিসাইল পরীক্ষা চালাতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র উদ্ভাবিত এ হাইপারসনিক মিসাইল বি-৫২ বোমারু বিমান থেকে ছোড়া হবে। ইতোমধ্যে একটি প্রটোটাইপ মিসাইল বিমানের বসানো হয়েছে বি-৫২ বিমানে । যুক্তরাষ্ট্র যে হাইপারসনিক মিসাইলের পরীক্ষা চালাতে যাচ্ছে সেটি একটি এয়ার লঞ্চড মিসাইল। ক্যালিফোর্নিয়ায় মিসাইল টেস্ট চালানো হবে। এয়ার লঞ্চড হাইপারসনিক মিসাইল উদ্ভাবন করেছে বিশ্বের শীর্ষ সমরাস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের লকহিড মার্টিন।

এলগিন বিমান ঘাটির এয়ারফোর্স আর্মামেন্ট অধিদপ্তর থেকে হাইপারসনিক মিসাইল টেস্টের কথা জানানো হয়েছে। সাউদার্ন ক্যালিফোর্ণিয়া উপকূলে চালানো হবে এ পরীক্ষা।

মিসাইলটির পুরো নাম এজিএম-১৮৩ এ এয়ার লঞ্চড রেপিড রেসপন্স উইপন। যুক্তরাষ্ট্র হাইপারসনিক মিসাইল টেস্ট সফল হলে রাশিয়া ও চীনের পর যুক্তরাষ্ট্র হবে তৃতীয় হাইপারসনিক মিসাইলের অধিকারী। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ভূমি থেকে নিক্ষেপযোগ্য হাইপারসনিক মিসাইলের গ্লাইড ভিহিক্যাল এর সফল পরীক্ষা চালিয়েছে।

ক্যালিফোর্নিয়া উপকূলে যুক্তরাষ্ট্র যে এয়ারলঞ্চড মিসাইল পরীক্ষা চালাবে তাতে লাইভ কোনো বোমা থাকবে না। মিসাইলের ইগনিশন এবং লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার ক্ষমতা পরীক্ষা করা হবে। বি-৫২ বিমান ৫০ হাজার ফিট উচ্চতায় ওঠার পর এ মিসাইল ছোড়া হবে।

বর্তমানে বিশ্বে সবচেয়ে শক্তিশালী হাইপারসনিক মিসাইলের অধিকারী রাশিয়া। ভূমি থেকে নিক্ষেপযোগ্য রাশিয়ার এ্যাভানগার্ড হাইপারসনিক মিসাইলের গতি শব্দের চেয়ে ২৭ গুন বেশি। পারমানবিক বোমা বহনে সক্ষম এ মিসাইল বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে আঘাত পরিচালনায় সক্ষম। এ মিসাইল প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেই বর্তমানে বিশ্বের কারো কাছে। ২০১৯ সালের ২৭ ডিসেম্বর উরাল পর্বত এলাকায় এ মিসাইল মোতায়েন করেছে রাশিয়া।

দীর্ঘ দিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র হাইপারসনিক মিসাইল এবং হাইপারসনিক মিসাইল আক্রমন প্রতিরোধ ব্যবস্থা উদ্ভাবনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। লকহিড মার্টিনসহ যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কয়েকটি সমরাস্ত্র প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে এ মিসাইল উদ্ভাবনের সাথে জড়িত।

***
যুক্তরাষ্ট্রের পারমানবিক অস্ত্র আধুনিকীকরণ এবং এর পেছনে বিপুল অর্থ ব্যয় নিয়েডেমোক্রেট এবং রিপাবলিকান উভয় দলের মধ্যে বিতর্ক শুরু হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন নতুন পারমানবিক বোমা তৈরিসহ পারমানিবক অস্ত্র আধুনিকায়নের ব্যাপক কর্মসুচী গ্রহণ করে। ট্রাম্প প্রশাসনের সময় পারমানবিক অস্ত্র আধুনিকায়নের জন্য আগামী ৩০ বছরে ১ দশমিক ৭ ট্রিলয়ন ডলার বা ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি ডলার বাজেট বরাদ্দ ঘোষণা করা হয়। তার নির্দেশে স্বল্প ক্ষমতার নতুন একটি পারমানবিক বোমা তৈরি হয় এবং তা সাবমেরিনে মোতায়েনও করা হয়েছে। এখন এই নীতি নিয়ে বির্তক চলছে।

ওবামা প্রশাসনের নীতি ছিল পরমাণু অস্ত্র সীমিতকরণ। ওবামার দল ডেমোক্রেটরা বর্তমানে আবার হোয়াইট হাউজে ফিরে এসেছে। জো বাইডেন ক্ষমতায় আসায় অনেকের বিশ্বাস ট্রাম্প প্রশসানের পারমানবিক নীতির পরিবর্তন ঘটবে। এ খাতে বিপুল অর্থ ব্যয় বন্ধ করা হবে।

আসছে বসন্তে বাজেট প্রস্তাব উপলক্ষে ডেমোক্রেটরা বাইডেনের প্রতি আহবান জানিয়েছেন পারমানবিক অস্ত্রসহ ক্রুৃজ মিসাইল বাজেট সংকুচিত করার। অনেক কংগ্রেসম্যান বাইডেনের প্রতি আহবান জানিয়েছেন এয়ার ফোর্সের গ্রাউন্ড বেজড স্ট্রাটেজিক ডিটারেন্ট, নতুন ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল কর্মসূচী বন্ধের । গ্রাউন্ড বেজট স্ট্রাটেজিক ডিটারেন্ট উদ্ভাবনের জন্য নরথ্রপ গ্রুম্যানকে ১৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের কাজ দেয়া হয়েছে গত সেপ্টেম্বরে।

এর বিপরীতে অনেক রিপাবলিকান দাবি জানাচ্ছেন ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মসূচী বহাল রাখার জন্য। পারমানবিক অস্ত্র আধুনিকায়ন সংকুচিত করার বিরুদ্ধে কোনো কোনো রিপাবলিকান সিনেটর বাইডেনের প্রতি হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। এরকম একজন হলেন ডেব ফিশার। এমনকি এ কর্মসূচী পুনরায় বিবেচনারও বিরোধী তিনি। তিনি বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এ কর্মসূচী বন্ধ করা খুবই ঝুকিপূর্ণ কাজ হবে। অনেকের মতে এটি ব্যয়বহুল কিন্তু অপরিহার্য।

ট্রাম্প প্রশাসনের ১ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলারের পারমানবিক অস্ত্র আধুনিকায়ন পরিকল্পনা বাইডেন প্রশাসন পুনরায় বিবেচনা করবে। ইতোমধ্যে ট্রাম্পের সময় বানানো নতুন পারমানবিক বোমা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে পেন্টাগনে।

***
তাইওয়ানের দুটি যুদ্ধবিমান মুখোমুখি সংঘর্ষে বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে একজন পাইলট মারা গেছে আরেকজন নিখোঁজ। তাইওয়ানের দক্ষিন পূর্ব উপকূল থেকে দুরবর্তী সাগরে ২২ মার্চ এ দুর্ঘটনা ঘটে। প্রশিক্ষণের সময় দুটি এফ-৫ই বিমান মধ্য আকাশে মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার পর একজন পাইলটের সন্ধান পাওয়া যায় এবং তাকে হেলিকপ্টারের সাহায্যে উদ্ভারের পর মারা যায়। দুুটি বিমানে দুজন পাইলট ছিলেন।

বিধ্বস্ত প্রশিক্ষণ বিমান দুটি যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি। যুক্তরাষ্ট্রের এফ-৫ বিমান তাইওয়ানের সার্ভিসে যুক্ত হয় ১৯৭০ সালে। ৫০ বছরের পুরনো এসব অধিকাংশ বিমান অবসরে পাঠানো হলেও এখনো কিছু বিমান সার্ভিসে যুক্ত আছে।

গত ছয় মাসে এ নিয়ে তাইওয়ানে এটি তৃতীয়বার যুদ্ধবিমান ব্বিস্তের ঘটনা। ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে প্রশিক্ষণের সময় একটি এফ-১৬ বিমান বিধ্বস্ত হয়। নিহত হয় পাইলট। এর ১ মাস আগে অক্টোবর মাসে বিধ্বস্ত হয় একটি এফ-৫ বিমান। তখনো নিহত হয় এর পাইলট। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে রাজধানী তাইপের কাছে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে শীর্ষ একজন সামরিক কর্মকর্তাসহ নিহত হয় ৮ জন।

ঘন ঘন যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনা নিয়ে সমালোচনা চলছে তাইওয়ানে। এদিকে তাইওয়ানের কাছে চীনা যুদ্ধবিমানের আনা গোনা আগের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এ কারনে চাপের মুখে রয়েছে তাইওয়ান বিমান বাহিনী। তাইওয়ান পাইলটদের অনেক বেশি ব্যস্ত সময় কাটছে চীনা যুদ্ধবিমানের গতিবিধি অনুসরনের ক্ষেত্রে। চীনের মোকাবেলায় তাইওয়ানের যুদ্ধবিমানকে আগের তুলনায় অনেক বেশি ফ্লাইট পরিচালনা করতে হচ্ছে।

তাইওয়ান বিমান বাহিনী বেশ দক্ষ এবং শক্তিশালী। তবে তা চীনের তুলনায় কিছুই নয়। তাইওয়ানের বিমানবাহিনী মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সমরাস্ত্রে সজ্জিত। তাইওয়ানের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের ১৪০টি এফ-১৬ জঙ্গি বিমান রয়েছে।

চীন তাইওয়ানকে তার নিজ ভূখণ্ড বলে দাবি করে। তাইওয়ান স্বাধীনতা ঘোষণা দিলে চীন তাইওয়ানে আগ্রাসন চালানোর হুমিক দিয়ে রেখেছে। অনেকের মতে চীন তাইওয়ানকে দখলে নেয়ার সুযোগের অপেক্ষায় আছে।