পরাভূত ইসরায়েল : হাসবে ফিলিস্তিন

- সংগৃহীত

  • ফারজানা তানিয়া
  • ০৫ মার্চ ২০২৪, ১৭:৫৮

আরেকটি যুদ্ধবিরতির পথে ফিলিস্তিনের গাজা। কিছু মতদ্বৈততা থাকলেও মার্কিন তোড়জোড় এবং মধ্যস্থতাকারীদের দৌড়ঝাঁপে আভাস মিলছে, পবিত্র রমজানের আগেই এ-নিয়ে চুক্তি হতে পারে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু স্বভাবসুলভ উত্তেজক বক্তব্য দিলেও ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের সঙ্গে সমাধানে আসার জন্য প্যারিস, কায়রো কিংবা দোহায় প্রতিনিধি পাঠিয়েছেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এই যুদ্ধবিরতি ছাড়া নেতানিয়াহুর আর কোনো পথ খোলা নেই। দেশে নেতানিয়াহু-বিরোধী আন্দোলন সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। মার্কিন নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্যাপক চাপের মুখে থাকা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পক্ষ থেকেও প্রবল চাপ রয়েছে তার ওপর। কিন্তু, হামাস এবং অন্য প্রতিরোধ আন্দোলনগুলো তাদের দাবিতে অনড়। তারা বলছেন, যে-কোনো চুক্তির চূড়ান্ত লক্ষ্য হতে হবে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি।

জানা গেছে, ৪০ জন ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তির বিনিময়ে ৪০০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিতে সম্মত ইসরায়েল। প্যারিসে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, মিসর এবং কাতারের প্রতিনিধিদের আলোচনার পর নেওয়া পরিকল্পনা অনুযায়ী এই চুক্তির আওতায় ছয় সপ্তাহ কিংবা ৪০ দিনের যুদ্ধবিরতি হতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রের বরাত দিয়ে আলজাজিরা বলেছে, ইসরায়েল চুক্তির আওতায় ক্রমান্বয়ে বাস্তুচ্যুত গাজার বাসিন্দাদের উত্তর গাজায় ফিরতে দেওয়ার বিষয়ে রাজি হয়েছে। তারা গাজার ওপর দিয়ে যুদ্ধবিমান ওড়ানোও বন্ধ রাখতে রাজি। দিনে আট ঘণ্টা বন্ধ থাকবে গোয়েন্দা নজরদারিও। আগামী সোমবারের মধ্যে চুক্তি হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তবে তার এই সময়সীমা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছে সব পক্ষ।

চুক্তি নিয়ে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের দরকষাকষি চলছে; একইসঙ্গে গাজায় যুদ্ধের ময়দানে কঠোর উপস্থিতি বজায় রেখেছে প্রতিরোধ সংগঠনগুলো। প্রতিদিনই যুদ্ধে নতুন আঙ্গিক আনছেন তারা। তাদের যোদ্ধারা নতুন নতুন কৌশল এবং আধুনিক অস্ত্রের ব্যবহারের মাধ্যমে শত্রুশিবিরে কম্পন ধরাচ্ছেন। এই সপ্তাহে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনগুলোর সঙ্গে সমানতালে ইসরায়েল এবং তার মিত্রদের কাবু করার অভিযানে দাপুটে অবস্থান দেখিয়েছে লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইয়েমেনের হুথি আনসার-আল্লাহ। ইরাকের প্রতিরোধ যোদ্ধারা ইরানের সঙ্গে সমন্বয় করে কৌশলগত কারণে মার্কিন অবস্থানে হামলা স্থগিত রাখলেও শক্ত হুঁশিয়ারি দিয়ে ঝড়ের অপেক্ষায় থাকতে বলেছে।

যুদ্ধকৌশলে আধুনিকতা আনার সঙ্গে হামলার সংখ্যা বাড়িয়েছেন প্রতিরোধ যোদ্ধারা। মঙ্গলবার গাজাসিটির দক্ষিণে জাইতুন এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীর ওপর অন্তত ১৬ দফা হামলা চালান ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা। এ-সব হামলায় রকেটচালিত গ্রেনেড, মর্টার, এক্সপ্লোসিভলি-ফর্মড পেনিট্রেটর এবং ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস ব্যবহার করেন তারা। সেখানে ইসরায়েলি সেনাদের অবস্থান নেওয়া একটি বাড়িতে উচ্চশক্তিসম্পন্ন ডিভাইসের বিস্ফোরণ ঘটায় ইসলামিক জিহাদের আল-কুদস ব্রিগেডস। শত্রুদের অবিস্ফোরিত মিসাইল ব্যবহার করে বুবি-ফাঁদের মাধ্যমে ওই বাড়িতে সেনাদের আটকে বাড়ির ভেতরে বড় আকারের আকস্মিক হামলা চালান তারা। এতে সেনাদলের প্রায় সবাই নিহত হন। এই জাইতুন এলাকায় সোমবারও অন্তত ৭টি বড় ধরনের হামলা পরিচালনা করেন প্রতিরোধ যোদ্ধারা। মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইএসডব্লিউ এবং সিটিপি মন্তব্য করেছে, ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা হামলার সংখ্যা যেমন বাড়িয়েছেন, ইএফপি-র মতো অত্যাধুনিক অস্ত্রের ব্যবহারও বাড়িয়েছেন। অথচ, এক মাস আগে ইসরায়েলি আর্মি রেডিও-র এক সাংবাদিক ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের হামলার আকার কমেছে বলে মন্তব্য করেছিলেন। সপ্তাহজুড়ে হামাস, ইসলামিক জিহাদ, আল-আকসা মার্টারস ব্রিগেডস, মুজাহিদিন মুভমেন্ট এবং রেজিস্ট্যান্স ব্রিগেডস উল্লেখযোগ্য সংখ্যক স্নাইপার হামলাও চালিয়েছে। এতে বহু দখলদার সেনার প্রাণহানি ঘটেছে। ইসরায়েলের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে বিপুল পরিমাণ রকেটও ছুড়েছেন তাদের যোদ্ধারা। এই সপ্তাহে গাজার পাশাপাশি পশ্চিমতীরেও ইসরায়েলি সেনাদের ওপর বেশকিছু বড় হামলা চালিয়েছেন প্রতিরোধ যোদ্ধারা।

লেবাননের প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহর হামলার ধরন এবং সংখ্যায়ও পরিবর্তন এসেছে। আগের চেয়ে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছেন তারা। সপ্তাহের প্রতিদিনই উত্তর ইসরায়েলের বড় সামরিক অবস্থানগুলোতে হামলা চালিয়েছেন তাদের যোদ্ধারা। মঙ্গলবার বিকালে তারা কয়েক ডজন কাতিউশা রকেটের মাধ্যমে ইসরায়েলি বাহিনীর ১৪৬তম ডিভিশনের হেডকোয়ার্টারে আঘাত হানেন। যুদ্ধ-বিষয়ক দুই মার্কিন গবেষণা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার উত্তর ইসরায়েলে অন্তত ১০ বার হামলা চালিয়েছে হিজবুল্লাহ। এ-দিন সকালে আপার গ্যালিলির মাউন্ট ম্যারনে ইসরায়েলের ‘মেরন এয়ার কন্ট্রোল ঘাঁটি’-তে ক্ষেপণাস্ত্রের বৃষ্টি ঝরান তারা। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, দক্ষিণ লেবানন থেকে অন্তত ৪০টি মিসাইল ছোড়া হয়। হিজবুল্লাহ বলেছে, সোমবার গোলান মালভূমির নাফায় ইসরায়েলি বাহিনীর গোলান বিভাগের সদরদপ্তরে ব্যাপক পরিসরে হামলা চালান তারা। সেখানে ৬০টি গ্রাড রকেট নিক্ষেপ করা হয়। এই নাফাহ ঘাঁটিতে ২১০তম গোলান আঞ্চলিক বিভাগের সদরদপ্তর এবং ৪৭৪তম আঞ্চলিক ব্রিগেডের সদরদপ্তর এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। তাছাড়া, ওজ ব্রিগেডের ক্যাম্প, ৭৭তম আর্মার্ড ব্যাটালিয়নের সদরদপ্তর এবং ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ২০৯তম আর্টিলারি রেজিমেন্টের একাংশের অবস্থানও ওখানে। জরুরি ভিত্তিতে কাজ করা একটি ফরোয়ার্ড ডিভিশনের হেডকোয়ার্টারও রয়েছে নাফা ঘাঁটিতে। এই সপ্তাহে হিজবুল্লাহর আকাশ প্রতিরক্ষা ইউনিট ইসরায়েলের অত্যাধুনিক হার্মেস-ফোর-ফিফটি মডেলের একটি ড্রোনও ভূপাতিত করেছে।

হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধে গেলে ইসরায়েল হেরে যাবে বলে দেশটির কর্মকর্তারা যখন সতর্ক করছেন, তখন হিজবুল্লাহর এক উচ্চপদস্থ কমান্ডার বলেছেন, ৫ মাস ধরে চলমান আন্তঃসীমান্ত সঙ্ঘাতে ইসরায়েল এখনও হিজবুল্লাহর সক্ষমতার ৫ শতাংশও দেখতে পায়নি। ওই কমান্ডার জানান, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ইসরায়েলি কৌশল রপ্ত করে নিজেদের কৌশল পরিবর্তন এবং সরঞ্জামের আধুনিকায়নের মাধ্যমে শত্রুদের পরাভূত করছেন তারা। ইসরায়েলি মিডিয়া বলছে, লেবানন থেকে চালানো হামলায় দেশটির উত্তরাঞ্চল ভূতুড়ে নগরীতে পরিণত হয়েছে। ওখানকার বসতি স্থাপনকারীরা কবে ঘরে ফিরতে পারবেন, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

ইয়েমেনের হুথি আনসার-আল্লাহর অদম্য ভূমিকা ওই অঞ্চলের প্রতিরোধ যুদ্ধকে অনন্য মাত্রা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সমুদ্রপথকে ইসরায়েল এবং তার পশ্চিমা মিত্রদের জন্য বিষাক্ত করে তোলার পর বৈশি^ক কম্যুনিকেশন সিস্টেমে আঘাত হেনেছেন হুথিরা। ইউরোপের সঙ্গে এশিয়াকে যুক্ত করা আন্ডারওয়াটার ক্যাবল লাইন বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন তারা। খবরে বলা হয়, এএই-ওয়ান, সী-কম, ইআইজি এবং টিজিএনের চারটি আন্ডারওয়াটার কম্যুনিকেশন ক্যাবল এখন কাজ করছে না। এই সপ্তাহে যথারীতি ইসরায়েল-সংশ্লিষ্ট এবং তাদের মিত্রদেশগুলোর বেশ কয়েকটি জাহাজে হামলা চালিয়েছেন তারা। হুথি-সমর্থিত সশস্ত্রবাহিনীর মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি বলেছেন, তারা এডেন উপসাগরে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে এবং ড্রোন ব্যবহার করে লোহিত সাগরে যাত্রা করা বেশ কয়েকটি মার্কিন জাহাজের ওপর হামলা চালান। লোহিত সাগর এবং আরব সাগরে প্রতিপক্ষের লক্ষ্যবস্তুতে আরও জোরালো হামলা চালানো হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। হুথি-সমর্থিত সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মেজর জেনারেল নাসের আল-আতিফি বলেছেন, জায়নবাদী শয়তানদের কাছে পণ্য সরবরাহ করা জাহাজগুলোর চলাচল বন্ধ হওয়ার পর লোহিত সাগর এবং আরব সাগরে আমাদের নৌবাহিনীর নেতৃত্ব এবং নিয়ন্ত্রণে নতুন নিরাপত্তাব্যবস্থা তৈরি হয়েছে। তিনি নিশ্চিত করেন, ইসরায়েল-সংশ্লিষ্ট এবং তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে নিয়োজিত কোনো দেশের জাহাজ না হলে এই জলপথে নৌ-চলাচলে নিবিড়ভাবে সুরক্ষা দেওয়া হবে।

ইরানের অনুরোধে ইরাকের প্রতিরোধ যোদ্ধারা এখন মার্কিন স্বার্থের বিরুদ্ধে হামলা স্থগিত রেখেছেন। এর মধ্যেও দেশটির হারাকাত হিজবুল্লাহ আন-নুজাবা আন্দোলনের মহাসচিব আকরাম আল-কাবি বলেছেন, পপুলার মোবিলাইজেশন ইউনিটের যোদ্ধাদের ওপর মার্কিন বাহিনী যে প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে, তার প্রতিশোধ গ্রহণ এখনও পুরোপুরিভাবে নেওয়া হয়নি। রোববার তিনি বলেন, মার্কিন অবস্থানে হামলা আপাতত স্থগিত রাখার অর্থ এই নয় যে, সম্প্রতি মার্কিন বাহিনী বিমান হামলা চালিয়ে ইরাক এবং সিরিয়ায় বেশ কয়েকজন প্রতিরোধ যোদ্ধাকে যে হত্যা করেছে, তার প্রতিশোধ গ্রহণ করা হবে না। তিনি বলেন, বর্তমান শান্ত পরিস্থিতিতে মূলত প্রতিরোধ যোদ্ধাদের কৌশলে পরিবর্তন আনা হয়েছে এবং তাদেরকে পুনঃমোতায়েনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, এটি হচ্ছে ঝড়ের আগে শান্ত পরিবেশ বিরাজ করার ইঙ্গিত।

ইরানের পাশাপাশি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে মিসর এবং রাশিয়া। গাজা উপত্যকার সর্ব-দক্ষিণের শহর রাফায় স্থল-অভিযান চালানোর ব্যাপারে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামেহ শুকরি মঙ্গলবার জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের সম্মেলনে বলেছেন, রাফায় আগ্রাসন চালালে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ এবং তা মাধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে ভণ্ডুল করবে। মঙ্গলবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে গাজা নিয়ে বাকযুদ্ধে জড়িয়েছেন রুশ এবং মার্কিন দূত। রুশ রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেছেন, নিরাপত্তা পরিষদে আনা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে বারবার ভেটো দেওয়ার পর গাজায় বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রাণহানির জন্য যুক্তরাষ্ট্রই দায়ী। নেবেনজিয়া বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের মার্কিন ভেটোর মূল্য দিতে হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার ফিলিস্তিনিকে। এই প্রাণহানির জন্য যুক্তরাষ্ট্র পুরোপুরি দায়ী।

ইসরায়েলি বর্বরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের নতুন উদাহরণ তৈরি করেছেন এক মার্কিন সেনা। গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে ইসরায়েলি দূতাবাসের সামনে নিজের শরীরে আগুন দিয়ে আত্মাহুতি দিয়েছেন বিমানবাহিনীর ২৫ বছর বয়সী সদস্য অ্যারন বুশনেল। ওয়াশিংটনে ইসরায়েলি দূতাবাসের সামনে রোববার গায়ে আগুন দেওয়ার পর ওই সেনাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সেখানকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সোমবার তিনি মারা যান। শরীরে আগুন দেওয়ার সময় তাকে ‘ফিলিস্তিনকে মুক্ত করো’ স্লোগান দিতে শোনা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের লাইভ ভিডিও স্ট্রিমিং টুইচে ক্লান্ত অবস্থায় ওই ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, তিনি আর গণহত্যার মতো অপরাধে নিজেকে জড়াতে চান না। এরপরই তিনি নিজের শরীরে তরলজাতীয় দাহ্য পদার্থ ঢেলে আগুন ধরান। মার্কিন গণমাধ্যম পলিটিকো বলেছে, গাজাযুদ্ধ নিয়ে হোয়াইট হাউসের নীতির বিরুদ্ধে মার্কিন প্রশাসনে যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে, অ্যারন বুশনেলের মৃত্যু এরই চূড়ান্ত পরিণতি। অ্যারনের মৃত্যুর পর বাইডেন প্রশাসনের কর্মীরা গাজায় তার নীতির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে একটি প্রতিবাদ নোট লিখেছেন। তারা হোয়াইট হাউসকে গাজায় যুদ্ধবিরতির পক্ষে শক্ত অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘অ্যারনের জীবনের অবসান আমাদের জাতির জন্য কঠোর একটি সতর্কবাণী। এই আত্মহত্যাগের প্রভাব অনেক গভীর হতে পারে।’

এই সপ্তাহে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত বা আইসিজে-তে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি দখলদারিত্ব নিয়ে শুনানি সম্পন্ন হয়েছে। এতে অংশ নিয়ে বিভিন্ন দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংগঠন বলেছে, ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দখলদারিত্ব ওই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা। এই দখলদারিত্বকে অবৈধ ঘোষণা করতে হবে। সোমবার ছিল এই শুনানির ষষ্ঠ এবং শেষ দিন। এরপর এ-বিষয়ে আইসিজে তার মতামত ও নির্দেশনা দেওয়ার কথা। এ-জন্য ছয় মাসের মতো সময় লাগতে পারে। নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত আদালতে প্রায় ৫০টি দেশ শুনানিতে যুক্তিতর্ক তুলে ধরে। প্রায়সব দেশই বলেছে, মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের মূল কারণ ইসরায়েলের এই দখলদারিত্ব। গাজায় চলমান গণহত্যা বন্ধে একই আদালতে দক্ষিণ আফ্রিকার করা মামলার সঙ্গে এই শুনানির যোগসূত্র নেই।

অভ্যন্তরীণ আন্দোলন এবং বৈশি^ক চাপের মধ্যে বড় হামলার হুমিক পাচ্ছেন ইসরায়েলের পার্লামেন্ট সদস্যরা। নেসেটের স্পিকার আমির ওহানা ‘ইসরায়েলি রিভেঞ্জারস’ নামে একটি নতুন সংস্থার পক্ষ থেকে পাওয়া হুমকির বিষয়ে নিরাপত্তা সংস্থা শিনবেতকে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। খবরে বলা হয়, নেসেট সদস্যদের উদ্দেশে লেখা চিঠিতে সংস্থাটি বলেছে, ৭ অক্টোবর হামাসের হামলা প্রতিহত করতে ব্যর্থতার দায়ে তাদের যে-কোনো প্রিয়জনের ওপর হামলা করা হবে। লিকুদ পার্টির এমপি তালি গোতলিভ এবং ওজমা ইয়াহুদিতের এমপি আইজ্যাক ওয়াসারলাউফ ওই গ্রুপের কাছ থেকে এ-ধরনের হুমকির চিঠি পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। গোতলিভ চিঠির একটি ছবিও প্রকাশ করেছেন এক্সে। এতে লেখা হয়, নেসেটের প্রত্যেক সদস্যের উচিত এই হামলার মূল্য পরিশোধ করা।

ইসরায়েল এবং দেশটির সরকারের কাছে দুঃসংবাদ ছাড়া আপাতত আর কিছুই নেই। অন্যদিকে, দৃশ্যপট বলছে, রমজানের আগে হতে যাওয়া সম্ভাব্য সাময়িক যুদ্ধবিরতি স্থায়ী বিরতির দিকে এগোতে পারে। আশা করা হচ্ছে, এই বিরতিতে উপত্যকায় সহায়তার প্রবাহ বাড়বে, গাজার যোদ্ধারাও নতুন করে শক্তি সঞ্চয়ের সুযোগ পাবেন। এর মধ্যে গাজা পুনর্গঠনের কাজেও হাত দেবেন ফিলিস্তিনের প্রতিবেশী এবং বন্ধু দেশগুলো। ধীরে ধীরে বোমার শব্দ ভুলে যাবেন গাজাবাসী; শিশুদের কোলাহল আর পাখির কলতানে মুখরিত হবে গাজা উপত্যকা।