পাকিস্তানের সাথে সৌদি-আমিরাতের সর্ম্পক

সৌদি যুবরাজের সঙ্গে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী - রয়টার্স

  • আহমেদ বায়েজীদ
  • ২৮ ডিসেম্বর ২০২০, ০৯:৪৬

নির্দিষ্ট সময়ের আগেই পাকিস্তানকে ঋণ পরিশোধের জন্য চাপ দিচ্ছে সৌদি আরব। আর সংযুক্ত আরব আমিরাত যেসব দেশের নাগরিকদের জন্য ভিসা বন্ধ করেছে তার মধ্যে পাকিস্তানও আছে। অন্য দিকে উপসাগরীয় দেশদুটিতে প্রথমবারের মতো সফর করেছেন ভারতীয় সেনাপ্রধান। কাশ্মির ইস্যুতেও দেশ দুটির ভূমিকা ছিলো নরেন্দ্র মোদি সরকারের পক্ষে। তাহলে কি উপসাগরীয় অঞ্চলের সাথে দক্ষিণ এশিয়ার সম্পর্কের নতুন মেরুকরণ আসন্ন? পাকিস্তানকে বাদ দিয়ে ভারতের দিকে ঝুঁকছে আরবরা? এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো আজ।

পাকিস্তানের সাথে সৌদি আরবের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বহু বছরের। পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই দেশটির অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক খাতে প্রধান অংশীদার রিয়াদ । সেই সম্পর্ক কিছুদিন ধরেই যেন ক্রমশ শীতল হয়ে আসছে। যার সর্বশেষ ধাপ হিসেবে এসেছে পাকিস্তানকে ঋণ পরিশোধের জন্য রিয়াদের চাপ। ২০১৮ সালে পাকিস্তানকে এক চুক্তির আওতায় ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ ও ৩ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের তেল বাকিতে দিয়েছিল সৌদি আরব।

চলতি বছর সেই ঋণ পরিশোধের জন্য চাপ দিতে শুরু করে বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের প্রশাসন। পাশাপাশি বাকিতে তেল বিক্রির বিষয়টিও স্থগিত করা হয়। অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্য দিয়ে চলা পাকিস্তানের জন্য এই ঋণ পরিশোধ করা হয়ে ওঠে অসম্ভব। অগত্যা চীনের দারস্থ হয় পাকিস্তান। চীন থেকে ঋণ নিয়েই সৌদি আরবের ঋণ পরিশোধ করে ইসলামাবাদ।

এখন পর্যন্ত দুই দফায় ২ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, এই বিপদ থেকে আমাদের উদ্ধারে এগিয়ে এসেছে চীন। সম্প্রতি আমরা এক বিলিয়ন ডলার ফেরত দিয়েছি সৌদি আরবকে। এর আগে জুলাই মাসে দেয়া হয়েছে এক বিলিয়ন ডলার। অবশিষ্ট আরেক বিলিয়ন ডলার দেয়া হবে আগামী মাসে।

আরব বিশ্বের আরেক গুরুত্বপূর্ণ দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত গত মাসে যে ১৩টি দেশের নাগরিকদের ভিসা দেয়া বন্ধ করেছে তার মধ্যে আছে পাকিস্তান। এই সমস্যার সমাধান করতে গত সপ্তাহে দেশটিতে ছুটে যান পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশী। বৃহস্পতিবার তিনি বৈঠক করেন দুবাইয়ের শাসক ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মাদ বিন রশিদ আল মাখতুমের সাথে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সাথেও বৈঠক করেছেন তিনি। অবশ্য তিনি জানিয়েছেন খুব শীঘ্রই ভিসা জটিলতার অবসান হবে।

পাকিস্তানের সাথে সৌদি আরবের সম্পর্ক কয়েক দশকের পুরনো। ১৯৪৭ এ পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের পর থেকেই দেশটির সবচেয়ে বড় সাহায্যকারী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে সৌদি আরব। ধর্মীয় কারনই দেশ দুটির মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে দৃঢ় করেছে বলে মনে করা হয়। যে কোন সমস্যায় সবার আগে পাকিস্তানের পাশে দাড়ায় সৌদি আরব। ২০০৫ সালে বালুচিস্তানের ভ‚মিকম্পের সময় ১০ মিলিয়ন ডলারের মানবিক সাহায্য পাঠিয়েছে রিয়াদ। ২০১০ সালের বন্যার পর তারা সহযোগিতা দিয়েছে ১৭০ মিলিয়ন ডলারের। এমন উদাহরণ দিতে গেলে শেষ হবে না।

পাকিস্তান ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক আছে সামরিক খাতেও। সৌদি সৈন্যদের প্রশিক্ষণ দেয়া এবং পবিত্র শহর মক্কা ও মদিনার নিরাপত্তায় কাজ করছে পাকিস্তানের সৈন্যরা। সৌদি আরবের নেতৃত্বে ইসলামিক মিলিটারি এলায়েন্সের প্রধানও করা হয়েছে পাকিস্তানের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল রাহিল শরীফকে। অবশ্য এসব সম্পর্কের সুযোগ নিয়ে সৌদি আরব পাকিস্তানের পররাষ্ট্র নীতিতেও হস্তক্ষেপ করতো বলে অনেকে মনে করেন।
সংযুক্ত আরব আমিরাতও অনেক দিন ধরেই পাকিস্তানের বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র। ইসলামাবাদকে বিভিন্ন সময়ে প্রচুর অর্থ সহযোগিতা দিয়েছে আবুধাবি। পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকার শেখ জায়েদ ব্রিজ কিংবা লাহোরের শেখ জায়েদ মেডিকেল কমপ্লেক্স এসবেরই উদাহরণ।

১৯৯৮ সালে পাকিস্তানের পারমাণকি অস্ত্রের পরীক্ষা চালানোর পর যে দুটি দেশ পাকিস্তানকে সমর্থন দিয়েছিল তারা ছিল সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। ওই ঘটনার পর পাকিস্তানের ওপর অবরোধ আরোপ করা হলে সৌদি আরব এক বছর ধরে প্রতিদিন পঞ্চাশ হাজার ব্যারেল তেল পাকিস্তানকে বিনামূল্যে দিয়েছিল।
পাকিস্তানের বৈদেশিক রেমিটেন্সেরও বড় উৎস উপসাগরীয় দেশ দুটি। শুধু সৌদি আরবেই বাস করে প্রায় ২০ লাখ পাকিস্তানি নাগরিক। এছাড়া রিয়াদের সাথে ইসলামাবাদের বার্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ আড়াই বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আরব আমিরাতেও বাস করে প্রচুর পাকিস্তানি। যাদের শ্রমে টিকে আছে আমিরাতের অর্থনীতি, আর বাড়ছে পাকিস্তানের রেমিট্যান্স।

কিন্তু তা সত্ত্বেও গত কিছুদিন ধরে দেশ দুটির সাথে দূরত্ব বাড়ছে পাকিস্তানের। ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পরও নিজে একাধিকবার মধ্যপ্রাচ্য সফর করেছেন। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন সালমান পাকিস্তান সফর করে বিরাট অঙ্কের বিনিয়োগের চুক্তি করেছেন। অবশ্য তিক্ততার সূত্রপাত তার পরেই। এর পেছনে প্রধানত দুটি কারণ রয়েছে। প্রথমত,ভারত সরকার কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার পর সেটি নিয়ে কোন কথা বলেনি সৌদি আরব ও আমিরাত। এছাড়া মুসলিম বিশে^র স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ইস্যুতে ইমরান খানের উচ্চকণ্ঠ আরেকটি কারণ।

মুসলিমদের পবিত্র দুটি মসজিদের খাদেম হলেও ফিলিস্তিনসহ মুসলিম বিশে^র স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে সৌদি শাসকরা হঠাৎ পুরানো নীতি থেকে সরে আসছে। এই শূন্যতা থেকেই গত বছর ইমরান খান, রিজেপ তাইয়েব এরদোয়ান ও মাহাথির মোহাম্মাদের সম্মিলিত কিছু প্রচেষ্টা মুসলিম বিশ্বের রাজনীতিতে নতুন কিছুর আভাস নিয়ে হাজির হয়।এই তিন নেতা মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করতে কাজ শুরু করেন, যেটিকে বলা হয় বিকল্প ওআইসি গঠনের চেষ্টা। মুসলিমদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলে এই তৎপরতা। এসব প্রক্রিয়ায় কোন সংশ্লিষ্টতা ছিলো না সৌদি আরবের। তার ওপর তুরস্কের সাথে সৌদি শাসকদের সম্পর্কের টানাপোড়েনও চলছিল।

তুরস্ক ও মালয়েশিয়ার সাথে মিলে পাকিস্তানের এসব উদ্যোগ রিয়াদ ভালোভাবে নেয়নি । এমনকি ওই সময় কুয়ালালামপুরে যে সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল, সৌদি আরবের চাপে তাতেও যোগ দেয়া হয়নি ইমরান খানের।
এর আগে ২০১৯ সালের আগস্টে ভারতের বিজেপি সরকার যখন কাশ্মিরের বিশেষ মর্যদা বাতিল করে, তখন ইমরান খানের সরকার মুসলিম দেশগুলোসহ সাড়া বিশ্বের কাছেই ওকালতি করেছে কাশ্মিরীদের অধিকার আদায়ের জন্য কথা বলতে; কিন্তু সবাইকে অবাক করে বিষয়টিকে ভারতের অভ্যন্তরীণ ইস্যু হিসেবে আখ্যায়িত করে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। এরপর সৌদি আরবকে দোষারোপ করে একটি বিবৃতি দিয়েছিল পাকিস্তান।

আর সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্ততায় সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন- ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের যে চুক্তি করেছে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন ইমরান খান। সরাসরি দেশ দুটির সম্পর্কে কিছু না বললেও তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন- ফিলিস্তিনিদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হওয়ার আগে তার দেশ ইসরাইলের সাথে কোন ধরণের সম্পর্ক গড়বে না।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ইনাম উল হক মনে করেন মধ্যপ্রাচ্যের সাথে পাকিস্তানের দূরত্ব বৃদ্ধির জন্য আরো একটি কারণ এরদোয়ান ইফেক্ট। অর্থাৎ পাকিস্তানের সাথে তুরস্কের সম্পর্ক বৃদ্ধিকে মেনে নিতে পারেনি সৌদি আরব ও তার মিত্ররা। ২০০২ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে এরদোয়ান ৪ বার পাকিস্তান সফর করেছেন।

দুই দেশের সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বেড়েছে বহুগুণ। আর পাকিস্তানে ইমরান খানের সরকার ক্ষমতায় আসার পর তো সেটি বাড়ছে বিদ্যুৎ গতিতে। আরব বসন্তে সমর্থন, ইরানের সাথে সম্পর্ক রক্ষাসহ বেশ কিছু কারণে আঙ্কারর ওপর অসন্তুষ্ট রিয়াদ। এসব কারণেই ধীরে ধীরে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে সম্পর্ক শীতল হতে থাকে পাকিস্তানের।

পাকিস্তান যখন সৌদি ঋণ পরিশোধের জন্য অর্থ জোগাড়ে ব্যস্ত, ঠিক তখনই দেশ দুটিতে লম্বা সফর করেন ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল এমএম নারাভানে। প্রথম কোন ভারতীয় সেনাপ্রধান হিসেবে তিনি উপসাগরীয় দেশ দুটি সফর করেন। উভয় দেশেই গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাতে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেন জেনারেল নারাভানে।এর কয়েক দিন আগেই সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করে এসেছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।

এসব ঘটনা থেকেই আভাস পাওয়া যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সাথে দক্ষিণ এশিয়ার সম্পর্কের গতি পরিবর্তনের। রিয়াদ ও আবুধাবির সাথে নয়া দিল্লিরও সুসম্পর্ক রয়েছে- তবে সেটি ছিলো শুধুই বাণিজ্যিক। দেশ দুটির অপরিশোধিত তেলের গুরুত্বপূর্ণ ক্রেতা ভারত। তাছাড়া সৌদি আরবে রয়েছে ২৭ লাখ ভারতীয় কর্মী। আর আরব আমিরাতের মোট জনংখ্যার ৩০ শতাংশই ভারতীয়। তবে এই সম্পর্ক বাণিজ্যিক খাতকে ছাড়িয়ে কূটনৈতিক ও সামরিক খাতেও প্রবাহিত হতে শুরু করে ২০১৪ সালের পর থেকে।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর নরেন্দ্র মোদি উপসাগরীয় দেশগুলোতে মোট ৮ বার সফর করেছেন। আমিরাতে ৩ বার ও সৌদি আরবে গিয়েছেন দুইবার। ২০১৮ সালে সৌদি আরব ও ভারত প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বিষয়ে একটি যৌথ কমিটি গঠন করে। আমিরাতের বাহিনীর সাথে বেশ কয়েকবার যৌথ মহড়া চালিয়েছে ভারতীয় সেনারা।

একদিকে পাকিস্তানের সাথে দূরত্ব বৃদ্ধি, অন্যদিকে ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন। তাই সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত যে পাকিস্তানকে বাদ দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতকে তাদের নতুন মিত্র বানাতে চলেছে সেটি এখন আর গোপন কিছু নয়। ওয়াশিংটনের সাথে দূরত্ব তৈরি হওয়ার পর মধ্যপ্রাচ্যের দুই গুরুত্বপূর্ণ মিত্রও যদি ইসলামবাদকে ছেড়ে নয়া দিল্লির সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়ায়, পাকিস্তান তখন বাধ্য হয়েই বিকল্প মিত্র খুঁজে নেবে। আর সে ক্ষেত্রে চীনের পাশাপাশি তাদের ঘনিষ্ঠতা বাড়তে পারে তুরস্ক, ইরান ও কাতারের সাথে। যদিও কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, এতে চীনের ঋণের ফাঁদে পড়তে পারে পাকিস্তান।
তবে অনেক বিশ্লেষক, মনে করেন সর্ম্পকের টানাপড়েন থাকলেও একেবারে পাকিস্তানকে পরিত্যাগ করবে না সৌদি আরব ও আরব আমিরাত। কারন এমন কিছু ক্ষেত্রে দুদেশের সহযোগিতার সর্ম্পক যা সহজে পরিত্যাগ করার মতো নয়। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সম্প্রতি আরব আমিরাত সফরে এর কিছু ইঙ্গিত মিলেছে। তিনি দুবাইয়ে বসে সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়েছেন পাকিস্তানে সার্জিক্যাল স্টাইকের পরিকল্পনা করছে ভারত। এমন হামলার ব্যাপারে কয়েকটি দেশের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করেছে। ভারতের সেনা প্রধানের সৌদি আরব ও আমিরাত সফরের পর এমন তথ্য প্রকাশ যথেষ্ট ইঙ্গিতপূর্ন। ধারনা করা হয় আরব আমিরাতের কাছ থেকে এমন তথ্য পেয়েছে পাকিস্তান। এমনকি সেখানে বসে তা জানিয়ে দিয়েছেন।

বিডিভিউজ-এ প্রকাশিত লেখার স্বত্ব সংরক্ষিত। তবে শিক্ষা এবং গবেষণার কাজে সূত্র উল্লেখ করে ব্যবহার করা যাবে