বসনিয়ার স্রেব্রেনিকা গণহত্যা : পঁচিশ বছর আগের নৃশংসতার গল্প

একটি অস্ত্রবহনকারী গাড়ির ওপর বসে আছেন জাতিসংঘের ডাচ শান্তিরক্ষী। স্রেব্রেনিকায় আতঙ্কিত মুসলমানরা তাদের কাছে নিরাপত্তা চাইছে - এপি

  • শাহ মুহাম্মদ মোশাহিদ
  • ১৪ জুলাই ২০২০, ১৪:৪৫

পঁচিশ বছর আগের ক্ষত। এখনো রয়ে গেছে দগদগে। রক্ত ঝরছে। পঁচিশ বছর আগে বসনিয়া আর হার্জেগোভিনায় এই রক্ত ঝরাতে শুরু করেছিলো সার্বিয়া। মুসলমানদের নিধন করতে সার্বরা পরিণত হয়েছিলো পশুতে। সেই নৃশংস অধ্যায়, এখনও তাজা রয়ে গেছে যারা স্বজন হারিয়েছেন তাদের বুকে।

এদেরই একজন জিনেতা। তিনি এক মা। থাকেন স্রেব্রেনিকা শহরে। পঁচিশ বছর আগে এই শহরেই সার্বরা চালিয়েছিলো গণহত্যা। শহরের পুরুষদের লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করা হয়েছিলো। মায়ের পেট কেটে ছেলেসন্তান পাওয়া গেলে তাকে হত্যা করা হয়েছিলো।

নৃশংস এই সময়ে জিনেতা তার দুই সন্তানকেও হারান। বড় সন্তান সালকোর বয়স ছিলো ২৩। আর ছোট সামির বয়স ছিলো ২২। সালকোর শরীরের অবশেষ খুঁজে পাওয়া গিয়েছিরো। কিন্তু সামিরকে পাওয়াই যায়নি।

জিনেতা বলেন, ‘আমরা সালকোকে এনে সমাহিত করতে পেরেছি। কিন্তু সামিরের হাড়গোড়ও খুঁজে পাইনি। বছরের পর বছর ধরে তার লাশ খুঁজছি।’

জিনেতা ও তার স্বামী কথা বলছিলেন গণমাধ্যমের সঙ্গে। তারা জানান, সার্ব সেনারা শহরের পুরুষদের জড়ো করে লাইনে দাঁড় করাচ্ছিলো। আমার ছেলেরাও সেখানে ছিলো। একটি লাইনের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো। তখনি গর্জে উঠে সেনাদের রাইফেল। সরাসরি ওদের বুকে আঘাত হানে গুলি।

জিনেতা বলেন, ‘যখন আমি শেষবারের মতো সালকোকে দেখি, সে কাঁদছিলো। এক আহত আত্মীয় তার পেছনে ছিলো। ওই আত্মীয় গুরুতর আহত ছিলো।’

এর পর আর সালকো কিম্বা সামির, কারো দেখা পাননি জিনেতা আর তার স্বামী। কাতর এই দম্পতি এখন বেঁচে আছেন সন্তানদের ছবি আঁকড়ে। সন্তানদের স্মৃতি খুব বেশি তাড়া করলে সালকোর সমাধিতে যান। আর পাগলের মতো খুঁজে বেড়ান সামিরের দেহাবশেষ।

এ বছরও গণহত্যায় নিহত নতুন নয়জনের লাশ পাওয়া গেছে। সমাধিতে সমাহিতও করা হয়েছে এদের। কিন্তু এই নয়জনের মধ্যে সামির নেই।

কী ঘটেছিলো এমন, যাতে সালকো আর সামিরের মতো অসংখ্য লোককে প্রাণ দিতে হয়েছিলো?

সে ঘটনা বিভৎস। ইউরোপের জন্য লজ্জার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এমন ঘটনা আর ঘটেনি, এমন কথা বলে শোককান্না করছে বিশ্বের ডাকসাইটে দেশগুলো। প্রতিবছর স্রেব্রেনিকা গণহত্যা দিবসে যখন গণকবরগুলোতে শোকাহত মানুষের ঢল নামে তখন এরাও শোক জানায়।

১১ জুলাই গণহত্যার পঁচিশ বছর পূর্ণ হওয়ায় এক বিবৃতিতে স্রেব্রেনিকা গণহত্যার বার্ষিকীকে ‘যন্ত্রণাদায়ক স্মৃতি’ বলে উল্লেখ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। দিনটি উপলক্ষে এক ভিডিও বার্তায় জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘স্রেব্রেনিকা গণহত্যা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের মাটিতে সবচেয়ে নৃশংসতম অপরাধ।’

অথচ যখন ঘটনা ঘটেছিলো, তখন জাতিসংঘের সেনাদের উপস্থিতিতেই ঘটেছিলো। আমেরিকা আর বৃটেন দেখেও না দেখার ভান করছিলো। হাল বিশ্বে ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’ জার্মানি ছিলো এর সক্রিয় সমর্থক। আর সার্বিয়া সরাসরি অংশ নিয়েছিলো এই হত্যায়।

কী ঘটেছিলো তখন, আর কেনই বা এই হত্যা!

এর পেছনের কারণ ছিলো কেবল উগ্র জাতীয়তাবোধ আর ধর্মান্ধতা। বসনিয়া আর হার্জেগোভিনায় তখন মুসলমানদের সংখ্যা বেশি ছিলো। এলাকাটি তখন ছিলো যুগোস্লাভিয়া প্রজাতন্ত্রের অংশ। ১৯৯২ সালের মার্চে গণভোটের মাধ্যমে স্বাধীনতা পায় দেশটি। এর পরই শুরু হয় বসনীয় মুসলমান, ক্রোয়েশীয় ও সার্বিয়দের মধ্যে গৃহযুদ্ধ। এতে সরাসরি অংশ নেয় সার্বিয়া। চলতে থাকে মুসলিম নিধন।

পূর্ব ইউরোপের জাতি সার্বরা সপ্তম শতাব্দীতে ওই অঞ্চলে বসবাস শুরু করে। ১২০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে বসনিয়া হাঙ্গেরির কাছ থেকে স্বাধীনতা পায় এবং এর পরের ২৬০ বছরের মধ্যে এটি স্বাধীন খ্রিষ্টান রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে ওঠে।

১৫ শতকে সুলতান ফাতেহ মুহাম্মদ বসনিয়াকে উসমানীয় সা¤্রাজ্যে নিয়ে আসেন। ওই সময় অনেক খৃস্টান মুসলমান হন। তখন থেকে ওই এলাকার মুসলমানদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। উসমানীয় সা¤্রাজ্যের পক্ষে বসনিয়া শাসন করতে থাকে মুসলমানরা।

উনিশ শতকের শেষের দিকে রাশিয়ার সাথে উসমানীয় সা¤্রাজ্যের যুদ্ধ হয়। এতে বসনিয়া বিচ্ছিন্ন হয়ে অস্ট্রিয় হাঙ্গেরি রাজ্যের অধীনে চলে যায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর এলাকাটি যুগোস্লাভিয়ার অংশ হয়। উসমানীয় সাম্রাজ্য থেকে আলাদা হওয়ার পর থেকে বলকান এলাকার অন্য মুসলিমরা বসনিয়ায় চলে যায়। সেই সময়ই ওই এলাকায় ইহুদিদের সংখ্যাও বাড়তে থাকে।

বসনিয়া স্বাধীন হওয়ার পর সার্ব খৃষ্টানরা মুসলিমদের বিরুদ্ধে গৃহযুদ্ধ শুরু করে। তারা এই স্বাধীনতাকে অস্বীকার করে বসে। ১৯৯৫ সালের ১১ জুলাই সার্বরা স্রেব্রেনিকা শহর দখলে নেয়। অথচ এই শহরটি ছিলো জাতিসংঘ ঘোষিত নিরাপদ এলাকা। বসনিয়ার অন্যান্য এলাকায় নির্যাতিত মুসলমানরা এখানে এসে আশ্রয় নেয়। শহরে গড়ে উঠে ঘন শরণার্থী শিবির। এই শরণার্থীরা তখন মোকাবেলা করছিলো ভয়, ক্ষুধা আর রোগের সঙ্গে।

জাতিসংঘের ৮১৯ নম্বর প্রস্তাবে স্রেব্রেনিকাকে নিরাপদ অঞ্চল ঘোষণা করায় এখানে মোতায়েন ছিলো জাতিসংঘের নিয়োজিত ডাচ শান্তিরক্ষী। কিন্তু এদের উপস্থিতিতেই সার্ব বাহিনী শহরটি দখলে নেয়। তখন ডাচ শান্তিরক্ষীরা ছিলো নীরব।

একেবারে নীরব বলা যায় না। বরং তাদের ভ’মিকা ছিলো অনেকটা সার্বদের পক্ষে। তখন জাতিসংঘ ওই এলাকায় অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা করেনি সার্বরা। জাতিসংঘের সেনারাও সার্বদের ঘাঁটাতে যায়নি। তারা বরং বসনিয়ার প্রতিরোধ যোদ্ধাদের কাছে যেসব হালকা অস্ত্র ছিলো সেগুলো কেড়ে নেয়। সার্বদের আক্রমণ যখন তীব্র হয়, তখনই প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হাত খালি করে দেয় জাতিসংঘ। নির্যাতিত মুসলিমরা তাদের অস্ত্র ফেরত চায় জাতিসংঘের কাছে। কিন্তু জাতিসংঘের নিয়োগপ্রাপ্ত ডাচ কমান্ডার থম কার্রেম্যানস সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করেন।

পরে যা হওয়ার তাই হয়।

স্রেব্রেনিকা দখলের প্রথম দিন থেকেই চলতে থাকে বিভৎস নির্যাতন। শুরুতেই এরা বসনীয় পুরুষদের আলাদা করে নেয়। পরে এদেরকে দিয়ে নিজেদের কবর খুঁড়ায়। কবরের সামনে সার ধরে দাঁড় করায়। এর পর ঠাঁ ঠাঁ করে তাদের বুকে চালানো হয় গুলি। সার ধরে জীবন্ত দেহগুলো পরিণত হতে থাকে লাশে। ১৯৯৫ সারের ১১ জুলাই থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত শহরজুড়ে চলতে থাকে গণহত্যা। জাতিসংঘ ঘোষিত শরণার্থীশিবিরও বাদ যায়নি। শান্তিরক্ষীদের সামনেই সার্ব বাহিনী ৮ হাজার ৩৭২ জন বসনীয় মুসলমানকে হত্যা করে মাটিচাপা দেয়।

গণকবরের ইলাস্ট্রেশনটি করেছেন অ্যাডমির ডেলিক - আলজাজিরা
গণকবরের ইলাস্ট্রেশনটি করেছেন অ্যাডমির ডেলিক - আলজাজিরা

 

১৯৯২ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত সার্ব বাহিনীর হামলায় দুই লাখের বেশি বসনীয় নিহত ও প্রায় বিশ লাখ শরণার্থী হয়। পরে সার্বিয়া এ ঘটনার জন্য ক্ষমা চাইলেও একে গণহত্যা বলে উল্লেখ করতে নারাজ। তবে এখনো যখন স্রেব্রেনিকার মাটির তলায় নতুন নতুন কঙ্কাল পাওয়া যায়, তখন বিব্রত হয় সার্বিয়া। বিশ্বের সামনে খুলে যায় ইউরোপের সভ্যতার মুখোশ।
গণহত্যা দিবসে সারা বিশ্ব থেকে মানবতার পক্ষের লোক বসনিয়ায় জড়ো হয়। স্মৃতিস্তম্ভগুলোর পাশে নামে মানুষে ঢল। পালন হয় শোক। এ বছরও দিনটি পালন হয়েছে। তবে করোনা ভাইরাসের কারণে লোকের উপস্থিতি সীমিত ছিলো। একটি দল ওইদিনের ঘটনা স্মরণ করে তিনদিনের পদযাত্রায় বের হয়। পরে একটি সমাধিতে গিয়ে তাদের যাত্রা শেষ হয।

গণহত্যার প্রথম দিন ১১ জুলাই প্রায় দুই হাজার পুরুষ ও ছেলেকে হত্যা করা হয়েছিলো। প্রায় ১৫ হাজার লোক স্রেব্রেনিকা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলো পাহাড়ে। পরে পাহাড়ি বন থেকে খুঁজে খুঁজে আরো ৬ হাজার মুসলমানকে হত্যা করেছিলো সার্ব সেনারা।

সেই সময় থেকে বেঁচে ফেরাদের কজন নেদজাদ অ্যাডিক। গণহত্যার পঁচিশ বছর পর সমাধিতে ভীর করা মানুষের মধ্যে তাঁকে খুঁজে পায় আল জাজিরা। গণমাধ্যমটিতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়, ১১ জুলাই নেদজাদ অ্যাডিক তার বাবা, চাচা এবং চাচাতো ভাইকে বনে ট্রেকিং করে তাড়া করছিলো সার্ব সেনারা।

নেদজাদ অ্যাডিকরা পালিয়ে তুজলা শহরে যেতে চাইছিলেন। সেটা অবরুদ্ধ অঞ্চল থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে। পালিয়ে যাওয়াদের দলে ছিলো ১৫ হাজার বসনিয়ান। এরা বনে ট্রেক করে যাচ্ছিলেন।

কিন্তু সার্বদের নৃশংসতায় এই ট্রেকটি ‘ডেথ মার্চ’ হিসেবে পরিচিতি পায়। পালিয়ে যাওয়াদের দলে কামান দেগেছিলো সার্বরা।

নেদজাদ অ্যাডিক মনে করেন, এই দল থেকে মাত্র তিন হাজার বোসনিয়ান বেঁচে ফিরতে পেরেছিলেন। না ফেরার তালিকায় আছেন তার বাবা। কামান দাগা আর জীবন-মৃত্যুর উত্তেজনার ভীড়ের মধ্যেই তিনি তার বাবাকে হারিয়ে ফেলেছিলেন। আর কখনো দেখা পাননি। সার্ব বাহিনীর হামলায় তার অনেক সহপাঠির মৃত্যু হয়। কেউ আহত হয়। আর যারা বেঁচে ছিলো, তাদেরকে সার্ব বাহিনী আহ্বান করে নিচে নেমে আসতে। মাইকে ঘোষণা করা হয়, এদেরকে আবার পরিবারের সঙ্গে ফিরে যেতে দেওয়া হবে।

কিন্তু ওসব ছিলো মিথ্যা আশ্বাস।

যারা বিশ্বাস করে নেমেছিলো। তাদেরকেও গুলি করে মাটিচাপা দেওয়া হয়। আর অনেককে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় ট্রাকে করে।

সেদিন ছিলো ১৪ জুলাই, বন থেকে ফিরিয়ে আনা একটি দলকে ট্রাকে করে অজানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো। সেই দলেরই একজন ছিলেন নেদজাদ। শেষে ট্রাকটি তাদের একটি স্কুলের সামনে নামিয়ে দেয়। সেখানে দলবদ্ধ ফাঁসির আয়োজন চলছিলো।

স্কুলের সামনেই বানানো হয়েছিলো ফাঁসির মঞ্চ। একের পর এক লোককে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো। আর ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেওয়া হচ্ছিলো। সারির শেষের দিকে থাকায় নেদজাদের ফাঁসির সময় আসে মধ্যরাতে।

ফাঁসি কার্যকর করতে তার কাপড় খুলে নেওয়া হয়। হাত পিঠমোড়া করে বেঁধে দেওয়া হয়।

নেদজাদ বললেন, ‘স্কুল থেকে বের হয়ে আমি ডানে-বামে কেবল লাশের স্ত’প দেখলাম। আমার শরীর ঠান্ডা হয়ে আসছিলো। বুঝতে পারলাম, আমিও লাশ হতে যাচ্ছি।’

কিন্তু তাকে এবং তার দলটিকে এখানে ফাঁসি দেওয়া হলো না। দশ মিনিট পথ পেরিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো একটি বাঁধের ওপর।

নেদজাদ বললেন, ‘আমি মাথা নিচু করে রাখলাম। জেনে গিয়েছিলাম, আমাকে মেরে ফেলা হবে। ওখানেও কেবল সারি সারি লাশ পড়ে থাকতে দেখলাম।

তাদের দলটিকে নুয়ে থাকতে বলা হয়েছিলো।

পরের দৃশ্য, ঠাঁ ঠাঁ গুলির শব্দ। আর একের পর এক জীবন্ত শরীরের লাশ হয়ে যাওয়া।

হ্যাঁ, নেদজাদের শরীরেও গুলি লেগেছিলো। তিনিও পড়ে গিয়েছিলেন। তিনটি গুলি তাঁকে বিদ্ধ করে। একটি ডান বুকের পাশে। আরেকটি পাকস্থলির কাছে। এবং অন্যটি ডান হাতে।

সৌভাগ্যবশত শরীরে গুরুত্বপূর্ণ কোনো অঙ্গ নষ্ট হয়নি তার। এবং বেঁচে যান নেদজাদ।

তাদের পেছনের সারিতে আরো পাঁচজনকে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিলো। সামনের সারিকে গুলি করে পেছনের সারিতে উদভ্রান্তের মতো গুলি চালাতে থাকে সেনারা।

এলোপাতাড়ি এই গুলির একটি এসে আবারও আঘাত করে নেদজাদকে। এই গুলিটি বিঁধে তার পায়ে।

তিনি বললেন, ‘এটা ছিলো দঃসহ যন্ত্রণা। আমি সত্যিই মরে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমি জীবন ও মৃত্যুর মাঝখানে থেকে গেলাম। আমি আল্লাহর কাছে চাইতে থাকলাম, সার্ব সেনারা যেন কাছে এসে আমাকে হত্যা করে। কিন্তু আমার ডাক তাদের কান পর্যন্ত পৌঁছলো না।’

নেনজাদ অ্যাডভিক বাতাসে গানপাউডারের গন্ধ পাচ্ছিলেন। আর গুলি খাওয়া কিছু মানুষের যন্ত্রণার চিৎকার শুনছিলেন। তিনি দেখছিলেন কাতরাতে থাকা লোকদের দিকে সার্ব সেনাদের এগিয়ে যেতে। তারপর একটা গুলির শব্দ। আর কাতরানোর শব্দ নেই।

‘ওই সময় আমি মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছি। আমি যেকোনোভাবে মৃত্যু চাচ্ছিলাম’ বললেন অ্যাডভিক।
তিনি দেখলেন, তার সামনেই আরো পুরুষ এবং ছেলেদের জড়ো করা হচ্ছে। তাদেরকে নড়াচড়া করতে নিষেধ করা হচ্ছে।

হঠাৎ একটা কণ্ঠ শুনতে পেলেন নেনজাদ।

একজন জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি বেঁচে আছো? আমি বেঁচে আছি। কাছে এসে আমাকে খুলে দাও।’
এভাবেই বেঁচে ফিরেছিলেন নেনজাদ অ্যাডভিক। নিজে বাঁচতে পেরেছেন। তবে কাছের অনেক স্বজন হারিয়েছেন। এখনো জেগে আছে হারানোর ক্ষত।

তিনি আল জাজিরাকে বললেন, ‘আমরা ১৯৯৫ সালে আমরা হাল ছাড়িনি। এখনো ছাড়বো না। এখনো আমাদের বিশ্বাস তাজা আছে। আমি দেখেছি, এখনকার তরুণরা সেই গণহত্যার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।’

বিডিভিউজ-এ প্রকাশিত লেখার স্বত্ব সংরক্ষিত। তবে শিক্ষা এবং গবেষণার কাজে সূত্র উল্লেখ করে ব্যবহার করা যাবে