করোনা নিয়ে আতঙ্ক নয়

করোনা নিয়ে সতর্ক এক নারী - সংগৃহীত

  • এবনে গোলাম সামাদ
  • ১৩ এপ্রিল ২০২০, ০৮:১০

১৯৪৮ সালের ৭ এপ্রিল রাষ্ট্রসংঘের সংশ্লিষ্ট একটি সংস্থা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু ( WHO )। লক্ষ্য হিসাবে বলা হয়, বিশ্ব জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন ও মারাত্মক ব্যাধিসমূহের মহামারী নিবারণ। কোন রোগের মহামারী নিবারণের অন্যতম উপায় হলো রোগটির উৎপাদক জীবাণুর বিস্তার বন্ধ করা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, করোনাভাইরাসজনিত নিউমোনিয়া রোগ বর্তমান আকার ধারণ করার একটি কারণ হলো হু এর অবহেলা। আর এ অবহেলার একটা কারণ হলো, প্রতিষ্ঠান হিসাবে হু এর চীনপ্রীতি।

ডোনাল্ড ট্রাম্প চাচ্ছেন না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে হু  এর সাথে যুক্ত রাখতে। বাস্তবক্ষেত্রে চীনের আর্থিক সহায়তায় নয়,  হু চলেছে মার্কিন আর্থিক সহায়তায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র  হু তে না থাকলে প্রতিষ্ঠানটি টিকবে বলে মনে হয় না। ডোনাল্ড ট্রাম্প বলছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর চীনপন্থী হু  এর সাথে নিজেকে যুক্ত রাখতে চাচ্ছেন না। মনে হচ্ছে তাই  হুএকটা অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে।

আমরা এখন জানছি যে, বর্তমান করোনাভাইরাসের উদ্ভব হয়েছে বাদুড়ের দেহে। বাদুড়ের দেহ থেকে তা এসেছে বনরুইয়ের দেহে। যাকে ইংরেজিতে বলে Pangolin। ভালো বাংলায় বলে পিপীলিকাভুক। বনরুই একরকম স্তন্যপায়ী প্রাণী। বনরুইয়ের মাংস চাকমা ও মারমারা আহার করেন। বনরুই মালয়েশিয়াতে অনেক মানুষের খাদ্য। কিন্তু বাংলাদেশে অথবা মালয়েশিয়ায় করোনাজনিত রোগ মহামারী আকারে দেখা দেয়নি। মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে চীনের উহান প্রদেশে। উহান প্রদেশের মানুষ যুগ যুগ ধরে বনরুইয়ের মাংস ভোজন করছে। কিন্তু সেখানে ইতিপূর্বে এ রোগ দেখা দেয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উচিত ছিল এ বিষয়ে তদন্ত করা। বিশ্ববাসীকে অবগত করা, কেন এরকমটি ঘটতে পেরেছে। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সেটা তো করেইনি, বরং নানা সংশ্লিষ্ট কথা চেপে গিয়েছে। তাই তার বিরুদ্ধে উঠেছে ঘটনা গোপনের অভিযোগ।

আমাদের দেশে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ভাবা হয়না একজন যোগ্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে। কিন্তু এপর্যন্ত তিনি মার্কিন স্বার্থবিরোধী কোন সিদ্ধান্তই গ্রহণ করতে চাননি। তিনি গ্রহণ করেননি বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইড বাড়বার জন্য মারাত্মকভাবে জলবায়ুতে পরিবর্তন আসছে বলে। বরং উন্নত দেশে কল-কারখানার অর্থনীতি গড়ে উঠলে বাতাসে বাড়বে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা। এই মাত্রা বৃদ্ধি হবে ফসল বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। আমাদের দেশ থেকে অনেক মার্কিন বিশেষজ্ঞ করোনার হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য চলে গেলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি কি অতই খারাপ? এক্ষেত্রে আমাদের মন-মানসিকতা কিছুটা ভিন্ন হওয়া প্রয়োজন। কেননা করোনার সাথে সাথে আর্দ্র ও উষ্ণ আবহাওয়ায় হতে দেখা যাচ্ছে কম।

বাংলাদেশের জলবায়ু উষ্ণ-আর্দ্র মৌসুমী। চীনের আবহাওয়া থেকে তা ভিন্ন। আমরা দেখছি যে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে করোনা আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে শতকরা ৮০ জন সেরে উঠছে। তাই করোনাভাইরাস জনিত রোগ বেশি আতঙ্ক ছড়ানো আদৌ উচিত হচ্ছে না। আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে অনেক কিছু ঘটছে, যা আমাদের হতবাক করছে। বাংলাদেশ থেকে বহ অর্থব্যয়ে প্রতিবছর অনেক নানা রোগাক্রান্ত ব্যক্তি ভারতে যাচ্ছেন উন্নত চিকিৎসার আকাঙ্খায়। ভারতের চিকিৎসকরা করোনা রোগ নিয়ে খুব একটা হইচই করছেন না। কিন্তু ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বললেন, ছাত্রদের তিনি অটোপাশ দেবেন। বাংলাদেশ যা এ পর্যন্ত বলেনি। বাংলাদেশের মানুষ ভারতের তুলনায় অনেক বেশি বিজ্ঞানমনষ্কতার পরিচয় দিচ্ছেন। রোগ একটা চিকিৎসা বিজ্ঞানের সমস্যা। তাকে ধর্মনৈতিক ও রাজনৈতিক সমস্যা করে তোলা উচিত হবে না। বিষয়টিকে ছেড়ে দিতে হবে চিকিৎসকদের হাতে। আর চিকিৎসকদের এগিয়ে আসতে হবে কল্যাণব্রতী (social welfare) মনোভাব নিয়ে।


চীনে করোনা ভাইরাস নিয়ে আলোচনা নিষিদ্ধ হয়ে উঠেছে। আজকের দিনে গণতন্ত্রের লেশমাত্র নাই। আমাদের দেশে বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম বলছেন, করোনাসৃষ্ট দুর্যোগ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের সহায়তায় সরকারের কাছে ৮৭ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের কথা। এক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদী খাতে ৬১ হাজার কোটি টাকা, মধ্যমেয়াদী খাতে ১৮ হাজার কোটি টাকা এবং অতিরিক্ত আরও ৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করে দলটি। কিন্তু মির্জা সাহেব কি অর্থনীতির গোড়ার কথা একেবারেই অবগত নন? প্রকৃত সম্পদ বলতে বোঝায়, যে খাদ্য আমরা খাই, যে বস্ত্র আমরা পরিধান করি, যে বাড়িতে আমরা থাকি, যে রেলগাড়িতে আমরা চড়ি, যে জাহাজের মাধ্যমে আমরা বাণিজ্য করি। অর্থ সম্পদ নয়। সম্পদের প্রতীক মাত্র। ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবের কথা অনুসারে চললে দেশে দেখা দেবে ভয়াবহ মুদ্রাস্ফীতি সমস্যা। আমাদের বুঝতে হবে প্রকৃত সম্পদের মাত্রা সীমিত। তা থেকে কোন কিছু ‘ক’ কে দিলে ‘খ’ কে দেওয়া যাবে না। সরকারী টাকায় তৈরি বাড়ি ‘ক’ কে দিলে ‘খ’ কে দেওয়া যাবে না। সৃষ্টি হবে চরম দুর্ণীতি। সম্পদ বন্টনের ক্ষেত্রে প্রকৃত সম্পদ সবসময় সীমিত। ‘ক’ কে কিছু দিলে ‘খ’ কে কিছু দেওয়া যায় না। ফলে সৃষ্টি হয় চরম দুর্ণীতি। এটাই চরম সত্য।

ফখরুল আলমগীর সাহেবের অর্থনীতির জ্ঞান সম্পর্কে আমাদের মনে তাই দেখা দিয়েছে নানা জিজ্ঞাসা। তিনি মুদ্রাকে সম্পদ ভাবছেন। কিন্তু মুদ্রা নিজে কোন সম্পদ নয়। চেম্বারস্ এর অভিধানে বলা হয়েছে, ফার্সী ভাষায় নামের প্রথমে ‘মির্জা’ লেখলে বোঝায় ‘কেরানী’। কিন্তু নামের শেষে ‘মির্জা’ লেখলে বোঝায় ‘রাজপুত্র’। ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাঁর নামের প্রথমে লেখেন ‘মির্জা’। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মেজর জিয়াউর রহমান বিশ্বাস করতেন, সমস্যার সমাধানের রাজনীতিতে। তিনি কোন বিশেষ মতবাদে বিশ্বাস করতেন না। তিনি নিজে হাতে খাল কেটে চেয়েছেন সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটিয়ে ফসলের ফলন বাড়াতে। ফখরুল ইসলামেরা জিয়ার মতো ব্যবহারিক মনোভাবাপন্ন নন। আজ তাই প্রয়োজন হচ্ছে জিয়ার আদর্শের, বিএনপিকে নতুন করে গড়বার। আমরা আলোচনা আরম্ভ করেছিলাম বনরুই নিয়ে। বুঝাতে চেয়েছি যে, আমরা করোনাভাইরাস সৃষ্টি করিনি। চীনে বনরুই আছে। সে করোনাভাইরাস সৃষ্টি করে থাকেতে পারে। এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে তদন্ত হওয়া উচিত। বাংলাদেশ একটা ছোট প্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্র। সে চলেছে এবং চলবে বিশ্ব অর্থনীতির পথ ধরে।