ইরানের ইউক্রেন এয়ার লাইন্সের বিমানটি কিভাবে বিধ্বস্ত হয়েছিল

ইরানের ইউক্রেন এয়ার লাইন্সের বিধ্বস্ত বিমান -সংগৃহীত -

  • অনলাইন ডেস্ক
  • ১২ জানুয়ারি ২০২০, ১২:০৬

ইরানের আকাশে ইউক্রেন এয়ার লাইন্সের বিমানটি মিসাইলের আঘাতে বিধ্বস্ত হয়েছে বলে স্বীকার করেছে ইরান। দেশটির একজন সেনা কর্মকর্তা প্রেস টিভিজে জানিয়েছেন এটি ছিলো একটি মানবিক ভুল। অনিচ্ছাকৃতভাবে এই মিসাইলটি আঘাত হেনেছে। এদিকে ইরানের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন।

ইরানের একজন সামরিক কর্মকর্তা প্রেসটিভিকে বলেন এটি ছিলো বড় আকারের মানবিক ভুল। অনিচ্ছাকৃৃতভাবে এই ঘটনা ঘটেছে। এর আগে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন কয়েকটি গোয়েন্দা সূত্র থেকে যে তথ্য পেয়েছেন তাতে মনে হচ্ছে যাত্রীবাহী বিমানটি মিসাইলের আঘাতে বিধ্বস্ত হয়েছে। তবে বিষয়টি অনিচ্ছাকৃত-ভাবে হতে পারে বলে ট্রুডো উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, কানাডার মানুষের মনে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে এবং তাদের উত্তর জানা দরকার। তবে বিষয়টি নিয়ে কাউকে দোষারোপের সময় এখনো আসেনি বলেও তিনি মন্তব্য করেন। বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার বিষয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সাথে কথা বলেন। এরপর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ন অনেক তথ্য পেয়েছেন। তিনি বলেন বিমানটি মিসাইলের আঘাতে বিধ্বস্ত হওয়ার বিষয়টি উড়িয়ে দেয়া যায় না। তবে বিষয়টি নিশ্চিত নয়। এখন ইরান বিষয়টি স্বীকার করলো। যা দেশটির আকাশসীমার নিরাপত্তা নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো প্রশ্ন তুলতে পারে।


এদিকে ইরানের ওপর নতুন যে নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্র আরোপ করেছে তাতে ইরানের শিল্পখাতকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছে। দেশটির নির্মাণ, বস্ত্র, খনি, ইস্পাত ও লোহা শিল্পের মতো খাতগুলো নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে। ইরানের ৮ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকেও নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছেন ইরানের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের সেক্রেটারি আলী শামখানি, ইরান আর্মড ফোর্সের ডেপুটি চিফ মোহাম্মদ রেজা আসথানি, স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী বাসিজ মিলিশিয়া প্রধান গোলাম রেজা সোলায়মানি। হোয়াইট হাউসের দাবি, ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ওই কর্মকর্তারা জড়িত ছিলেন। দুনিয়াজুড়ে তেহরানের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের লাগাম টেনে ধরতেই এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী।

এর আগে ইরানের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞার আভাস দেয় ওয়াশিংটন। এদিন ট্রাম্প ঘোষণা করেন, ইরান তার আচরণ পরিবর্তন না করা পর্যন্ত দেশটির ওপর নতুন শক্তিশালী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে যুক্তরাষ্ট্র। এ নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত কেলি ক্রাফট জানান, তার দেশ ইরানের সঙ্গে যে কোনও ধরনের নিঃশর্ত আলোচনায় বসতে প্রস্তুত রয়েছে। ৯ জানুয়ারি নিরাপত্তা পরিষদে পাঠানো এক চিঠিতে ওয়াশিংটনের এমন অবস্থানের কথা জানান তিনি। ইরান এই আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখান করে বলেছে দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত ওয়াশিংটনের সঙ্গে কোনও আলোচনা হবে না।
ইরাক থেকে সব সৈন্য আবারো প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে দেশটি। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন ইরাকের প্রধানমন্ত্রী। তবে যুক্তরাষ্ট্র এই দাবি প্রত্যাখান করে বলেছে ইরাকের সাথে কিভাবে একসাথে কাজ করা যায় তা নিয়ে আলোচনা শুরু করা হবে।


ইরাকের মাটি থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাগদাদ। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে ইরানি জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার পর ইরাকি পার্লামেন্টে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের প্রস্তাব পাস হয়। ঘটনার ৫ দিনের মাথায় সে দেশের প্রধানমন্ত্রী আদেল আব্দুল-মাহদি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওকে লেখা চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রকে সেনা প্রত্যাহার শুরুর পরিকল্পনা নিতে বলেছেন। ৫ জানুয়ারি ইরাক থেকে মার্কিন সেনাদের প্রত্যাহার চেয়ে বিল পাস করে দেশটির পার্লামেন্ট।


এক বিবৃতিতে ইরাকি প্রধানমন্ত্রী মাহদি বলেছেন, তিনি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। সে সময় তিনি ‘ইরাকের পার্লামেন্টের রায় অনুযায়ী মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার প্রক্রিয়া শুরু করতে মার্কিন প্রতিনিধিদের বাগদাদে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন’। মাহদি অভিযোগ করেন, দুই দেশের মধ্যকার চুক্তি লঙ্ঘন করে ইরাকের যেখানে-সেখানে মার্কিন সেনারা অবস্থান নেয় এবং কর্তৃপক্ষীয় অনুমতি ছাড়াই ড্রোন হামলা চালায়।


মাহদির এই আহবানের যুক্তরাষ্ট্রের যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের একজন মুখপাত্র বলেছেন ইরাক থেকে সৈন্য প্রত্যাহার নয় বরং দুদেশে কিভাবে একসাথে কাজ করবে তা নিয়ে আলোচনার জন্য একটি প্রতিনিধি দল বাগদাদ যাবে। তিনি বলেন দুদেশের সেনাবাহিনী এক সাথে কাজ করবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি সার্বভৌম, সমৃদ্ধ ইরাকের অংশীদার হতে চায়। বিশ্লেষকরা মনে করছেন ইরাকের পার্লামেন্টে সৈন্য প্রত্যাহারের প্রস্তাব পাস হওয়ার পর মার্কিন সৈন্যদের ইরাকে অবস্থান বৈধতার সঙ্কটে পড়েছে। আগামি দিনে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যদের ওপর হামলার শঙ্কা আরো বেড়ে গেছে। ইরানের শিয়া ধর্মীয় নেতারা ইরাক থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছে।
ওমানের সুলতান কাবুস ৭৯ বছর বয়সে মারা গেছেন। ওমানের সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের শাসক ছিলেন কাবুস। তিনি বেশ কিছুদিন যাবত জার্মানী ও বেলজিয়ামে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। কাবুসের কোনো উত্তরসূরী না থাকায় ওমানের সুলতানের দায়িত্ব কে নিচ্ছেন তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।


ওমানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে জানানো হয় সুলতান কাবুস বিন সাইদ মারা গেছেন। রাজতান্ত্রিক এই দেশটির দীর্ঘ সময় ধরে শাসক ছিলেন কাবুস। ১৯৭০ সালে এক রক্তপাতহীন অভ্যুন্থানের মাধ্যমে পিতাকে সরিয়ে ক্ষমতায় বসেছিলেন কাবুস। তার শাসনামলে ওমানে ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নতি হয়। তিনি ওমানকে একটি আধুনিক রাষ্ট্রে পরিনত করেন। ধারনা করা হয় যে তিনি কোলন ক্যান্সারে ভুগছিলেন। অনেকটা গোপনে বেলজিয়াম ও জার্মানীতে তার চিকিৎসা চলছিলো।


সুলতান কাবুসের কোনো পুত্র ও ভাই নেই। ফলে সুলতানের দায়িত্ব কে নেবেন সে দিকে এখন দৃষ্টি। অবশ্য ৭২ ঘন্টার মধ্যে নতুন সুলতানের নাম ঘোষণা করার নিয়ম রয়েছে। ২০১১ সালের নভেম্বর মাসে সুলতান তার উত্তর সূরি মনোনায়নের কাজ শুরু করেছিলেন বলে ধারনা করা হয়। কিন্তু কে সে উত্তর সূরী হবেন তা প্রকাশ করা হয়নি। ওমানের আইন অনুযায়ী সুলতানের পরিবার যদি নতুন সুলতান মনোনীত করতে ব্যর্থ হয় তাহলে মৃুত্যর আগে তার বিশ্বস্ত ব্যক্তির কাছে দুজনের নাম লিখে যাবেন। এরমধ্য থেকে সুলতান মনোনীত হবেন।


উত্তর আরব সাগরে টহলরত যুক্তরাষ্ট্রের একটি যুদ্ধজাহাজ এবং রাশিয়ার একটি যুদ্ধ জাহাজের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষের অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিলো বলে সিএনএন জানিয়েছে। ওয়াশিংটনের পোস্টের খবরে বলা হয়েছে কাসেম সোলায়মানি হত্যার দিন ইয়েমেনে আরেকজন কুদস ফোর্স কমান্ডারকে হত্যার চেষ্টা করে।
যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে উত্তর আরব সাগরে রুশ যুদ্ধ জাহাজ যুক্তরাষ্ট্রের একটি ডেস্ট্রয়ারের দিকে ধেয়ে আসছিলো। এর ফলে মুখোমুখি সংঘর্ষের অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিলো। সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে রাশিয়ার যুদ্ধ জাহাজটি মার্কিন জাহাজের ১৮০ ফিট দূরত্বে ছিলো। দ্রুত জাহাজের গতিপথ বদলে ফেলার কারনে সংঘর্ষ এড়ানো গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ রাশিয়ার যুদ্ধজাহাজটি ইচ্ছাকৃতভাবে সংঘর্ষের মুখোমুখি হয়েছিলো। আরব সাগর ও ভুমধ্যসাগরে রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজগুলো নিয়মিত চলাচল করে। রাশিয়া সিরিয়ায় সামরিক ঘাটি স্থাপন করেছে। সেখানে রুশ যুদ্ধ জাহাজ নিয়মিত টহল দেয়। সাত মাস আগে প্রশান্ত মহাসাগরেও রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ জাহাজের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষের উপক্রম হয়েছিলো।


এদিকে ওয়াশিংটন পোস্টের এক খবরে বলা হয়েছে ০৩ জানুয়ারি বাগদাদে জেনারেল কাসেম সোলায়মানিকে যখন হত্যা করা হয় একই সময়ে ইয়েমেনে একটি অভিযান চালিয়েছিলো যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের রেভিলিশনারি গার্ড বাহিনীর একজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে হত্যার উদ্দেশ্য এই অভিযান চালানো হলেও তা ব্যর্থ হয়ে যায়। আব্দুর রেজা শাহলাই নামে একজন কমান্ডারকে হত্যার চেষ্টা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। কুদস বাহিনীর প্রধান অর্থনিয়ন্ত্রক হিসাবে তাকে উল্লেখ করা হয়েছে। এই হামলার ঘটনা থেকে ধারনা করা হচ্ছে ইয়েমেনে আবারও সক্রিয় হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। সৌদি আরব ও আরব আমিরাত দেশটিতে দীর্ঘদিন যাবত যুদ্ধ করলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেছে। সৌদি সমর্থিত সরকার অকার্যকর হয়ে পড়ছে।