বাংলাদেশ-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মৈত্রী

বাংলাদেশ ও আমেরিকার বন্ধুত্ব - সংগ্রহ

  • এবনে গোলাম সামাদ
  • ০৮ মে ২০২০, ২২:২০

করোনা ভাইরাস
আমাদের পত্র-পত্রিকায় করোনা ভাইরাস নিয়ে যা আলোচনা হচ্ছে, তা থেকে যে করোনা ভাইরাস সম্বন্ধে আমাদের মনে একটা কাজচলা ধারণা গড়ে উঠতে পেরেছে, তা নয়। ভাইরাসরা খুব ছোট জৈব কণিকা বস্তু যা মানুষ, অন্যান্য প্রাণী ও উদ্ভিদ দেহে রোগ উৎপাদন করে। প্রোটিন বলতে বোঝায় এমন জৈববস্তু, যাতে শতকরা ১৬ ভাগ নাইট্রোজেন থাকে। ভাইরাসরা প্রোটিন ও নিউক্লিয়িক অ্যাসিড সহযোগে গঠিত। নিউক্লিয়িক অ্যাসিড একরকম ফসফরাসঘটিত জৈব পদার্থ, যা প্রথম প্রাণী দেহের কোষের নিউক্লিয়াস বা কেন্দ্রবস্তু থেকে আবিষ্কৃত হয়।

সব জৈববস্তুর প্রধান উপাদান হচ্ছে কার্বন। সব জৈববস্তু পোড়ালে আমরা পাই কার্বন বা অঙ্গার। অঙ্গারবিহীন জৈববস্তু হয় না। মানুষের দেহে কর্মশক্তি উৎপন্ন হয় হাইড্রোজেন পুড়ে। হাইড্রোজেন পোড়ে ধাপে ধাপে অক্সিজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে। শেষপর্যন্ত হাইড্রোজেন আর অক্সিজেন একত্রিত হয়ে উৎপন্ন হয় পানি (H2O)। বলা হচ্ছে, আমরা করোনা ভাইরাসের আক্রমণে অসুস্থ হয়ে পড়ছি, কারণ, করোনা ভাইরাস আমাদের রক্তের হিমোগ্লোবিনের সঙ্গে একত্রিত হয়ে তাকে শ্বাস-ক্রিয়ায় অংশ নিতে দিচ্ছে না সুস্থ দেহের মতো। আমরা পড়ছি অসুস্থ হয়ে। বিলাতের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দাবি করছেন, তারা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধী টিকা আবিষ্কারে সক্ষম হচ্ছেন। যেসব বানরের দেহে এই টিকা প্রদান করা হচ্ছে, তাদের দেহে করোনা ভাইরাস প্রয়োগ করে দেখা যাচ্ছে করোনা ভাইরাসজনিত রোগ না হতে। তাই মনে করা হচ্ছে, করোনা ঘটিত নিউমোনিয়া রোগ অচিরেই মানুষের নিয়ন্ত্রণে এসে যাবে।

রোহিঙ্গা সংকট
রোহিঙ্গা সংকট

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকায় ও টেলিভিশনে করোনা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যার কথা চাপা পড়ে গিয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য একটা বড় রকমের সমস্যা হিসাবেই বিরাজ করছে। বাংলাদেশ সরকার আশা করেছিলেন চীন এই সমস্যার একটা সমাধান এনে দিতে পারবে। কিন্তু এখন একথা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, চীনের মধ্যস্থতায় এ সমস্যার সমাধান আদৌ সম্ভব নয়। বর্তমানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন করে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের চেষ্টায় অংশ নিতে চেয়েছেন। মনে হচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেষ্টায় এই সমস্যার একটা সমাধান হলেও হতে পারে। আজ নতুন করে দেখা দিচ্ছে, বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে হার্দিক সম্ভাবনা গড়বার।

ঘাস ফড়িং (grass hopper)
ঘাস ফড়িং (grass hopper)

পঙ্গপাল
পঙ্গপালরা হলো এক রকমের ঘাস ফড়িং (grass hopper)। ঘাস ফড়িংরা এক রকম ঘাস খেয়ে আকৃতিতে বড় হয়ে উদ্ভব ঘটে পঙ্গপালের। এক একটি পঙ্গপাল গড়পড়তা ৮ সেন্টিমিটার (৩ ইঞ্চি) হয়। কিন্তু কক্সবাজার অঞ্চলে যে পঙ্গপালের আবির্ভাবের কথা বলা হচ্ছে, তার ছবি দেখে মনে হচ্ছে, এরা সাধারণ পঙ্গপালের চাইতে লম্বায় কিছুটা খাটো। পঙ্গপালরা এক দেশে উৎপন্ন হয়ে ছড়িয়ে পড়ে অন্য দেশে। এরা সবুজ গাছপালার পাতা খেয়ে, ক্ষেতের পর ক্ষেতের ফসল খেয়ে ফেলে, যে দেশে এরা উড়ে যেয়ে বসে, তার প্রচন্ড ক্ষতি করে। সৃষ্টি করে দূর্ভিক্ষের। হিসাব করে দেখা গিয়েছে যে, একটা ২.৫ বর্গ কিলোমিটার বেষ্টিত একটি ঝাঁকে ১০০ কোটি পঙ্গপাল থাকে। এদের ১ দিনের খাদ্য হলো ২৭৫ মেট্রিক টন। ১৯৫৮ সালে পূর্ব-আফ্রিকায় পঙ্গপালের যে ঝাঁকটি হানা দিয়েছিল, সেটি ছিল ১০০০ বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে। আর এতে ছিল প্রায় ৪০ হাজার কোটি পঙ্গপাল। এরা প্রায় ১,১০,০০০ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য খেয়ে শেষ করে ফেলেছিল। এক স্থান থেকে পঙ্গপালরা অনেক দূরে খুব সহজেই উড়ে যেতে পারে। যেমন, মধ্য এশিয়া থেকে উড়ে যেতে পারে পশ্চিম আফ্রিকায়। পশ্চিম আফ্রিকা থেকে ভারত সাগর পেরিয়ে উড়ে আসতে পারে ভারত-উপমহাদেশে। ঘটাতে পারে গাছপালার পাতা খেয়ে, ক্ষেতের ফসল খেয়ে ফেলে বিরাট দুর্ভিক্ষ। ইতিহাস থেকে যার অনেক নজীর পাওয়া যায়।
পঙ্গপালদের যুদ্ধের কাজেও ব্যবহারের দৃষ্টান্ত আছে। একবার দক্ষিণ আমেরিকায় পেরু তখনকার তার শত্রু রাজ্য ইকুয়েডরের বিপক্ষে পঙ্গপালদের ব্যবহার করেছিল। পেরু তার দেশে পঙ্গপালদের আস্তানার তিন দিক আগুন লাগিয়ে ইকুয়েডরের দিকটি খোলা রাখে। পেরু থেকে এই আগুনবিহীন পথে পঙ্গপাল উড়ে যায় ইকুয়েডরে। সম্প্রতি কক্সবাজার অঞ্চলে পঙ্গপালের আবির্ভাব হতে পেরেছে। অনুমিত হচ্ছে, এরা এসেছে মিয়ানমার থেকে। পঙ্গপাল নিয়ন্ত্রণ করতে হলে প্রয়োজন কীটনাশর রাসায়নিক দ্রব্যের। যা কেবল আমরা সস্তায় কিনতে পারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে থেকে। এ কারণেও এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন করে মৈত্রীর বন্ধন গড়বার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। আমার মনে হয়, পঙ্গপাল দমনে বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে থেকে ভূ-রাজনৈতিক কারণেও সবচেয়ে বেশি সাহায্য ও সহযোগিতা প্রত্যাশা করতে পারে।

বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান (geographical location) এমন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে মৈত্রীর বন্ধনে নতুন করে আবদ্ধ হতে চাইবে। সে বিষয়ে সংশয়ের কোনো কারণ আছে বলে মনে হয় না।