ইরানের অর্থনীতির নাটকীয় উত্থান


  • ইলিয়াস হোসেন
  • ১৮ মে ২০২২, ১৭:৩১

ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এখনো বহাল আছে। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমফের সর্বশেষ তালিকায় বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলোর তালিকায় ২০তম অবস্থানে উঠে এসেছে দেশটি। ইরানের আগে আছে মাত্র ১৯টি দেশ। ইরানের অর্থনীতির আকার পোল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড, বেলজিয়াম, অস্ট্রিয়া, সুইডেন, অস্ট্রিয়া, গ্রিস, ফিনল্যান্ড, পর্তুগাল, ওমান, কুয়েত ও আর্জেন্টিনার মতো দেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের চেয়েও এগিয়ে রয়েছে ইরানের অর্থনীতি। ২০২১ সালে ইরানের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা সমতা বা পিপিপি সমন্বয়ের মাধ্যমে মাথাপিছু জিডিপির ওপর ভিত্তি করে আইএমএফ সর্বশেষ এ তালিকা করেছে।


আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী পিপিপিকে ভিত্তি ধরেই ২০২১ সালে ইরানের জিডিপি ছিল ১ লাখ ৪৩ হাজার ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার। সংস্থাটির অনুমান, ২০২২ সালে ইরানের জিডিপির আকার আরও ১৩ হাজার ৭০০ কোটি ডলার বেড়ে ১ লাখ ৫৭ হাজার ৩০০ কোটি ডলারে গিয়ে দাঁড়াবে।


কয়েক বছর ধরে তেহরানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। তা সত্ত্বেও এই সময়ে ইরানের অর্থনীতির আকার বেড়েছে। ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী বিশ্বের ১৭৩টি দেশের চেয়ে ওই বছর ইরানের অর্থনীতির আকার বড় ছিল।


আইএমএফের ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, পিপিপির ভিত্তিতে ২০২১ সালে বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনীতি ছিল চীন। চীনের পর দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল যুক্তরাষ্ট্র। ওই বছর চীনের জিডিপি ছিল আনুমানিক ২৭ লাখ ২০ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। এর বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি ছিল ২২ লাখ ৯৯ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের। আইএমএফের প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, ২০২২ সালে ইরানের প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি তিন শতাংশ হতে পারে বলে । আগে এই সংখ্যাটি ছিল দুই শতাংশ।


বিগত বছরগুলোর মতো চলতি বছরও ইরানের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় ইরানের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও এক ইরানি নাগরিকের ওপর সম্প্রতি এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। গত ১৩ মার্চ ইরাকের উত্তরাঞ্চলীয় শহর ইরবিলে ১২টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দায় স্বীকার করে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি। এজন্য দেশটির ওপর এই নতুন নিষেধাজ্ঞা দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।


ইরানের অর্থনীতির এই প্রবৃদ্ধিও ফলে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আরও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন ও পাশ্চাত্যের নিষেধাজ্ঞা কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়েও। তবে একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে নিষেধাজ্ঞার ফলে ইরান ও রাশিয়ার অর্থনীতির অনেক ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু ধস নামেনি।


গত ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেন আগ্রাসন চালালে প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং তাদের মিত্ররা মস্কোর বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেয়। আশা ছিল যে এই পদক্ষেপ রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করবে । তবে সব নিষেধাজ্ঞা কার্যকরভাবে সংঘাতের সমাধান বা টার্গেট দেশের নীতি পরিবর্তন করে না। প্রকৃতপক্ষে, অনেক নিষেধাজ্ঞা কয়েক দশক বহাল থাকার পরেও লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। এর একটি উদাহরণ ইরান।
রাজপরিবারে ক্ষমতার দ্বন্দ্বের শঙ্কা !