অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, লিবিয়ার উভয় পক্ষের সরকারের পদত্যাগের এই কৌশল আমেরিকার। তারা চাচ্ছে লিবিয়ায় রাশিয়ার আধিপত্য বিস্তার রোধ করতে। তবে ফ্রান্স, রাশিয়া ও আমিরাত নতুন এই রাজনৈতিক সমঝোতাকে ভন্ডুল করে দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। তবে বুলোভালির বিশ্বাস, সেটা করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়
লিবিয়ায় ত্রিদেশীয় উদ্যোগ গ্রহণের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর তুরস্ক ও আরব মিডিয়া জগতে নতুন জল্পনাকল্পনা শুরু হয়েছে। বলা হচ্ছে, নতুন সমঝোতা অনুযায়ী লিবিয়ার মিসতারায় তুরস্ক একটি নৌ-ঘাঁটি স্থাপনের সুযোগ পাবে। অবশ্য এ গুঞ্জনটিও নতুন নয়, আগেও একাধিকবার এ রকম খবর ছাপা হয়েছে
অল্প দিনের মধ্যেই তিনি হয়ে যান গাদ্দাফীর শীর্ষ মিলিটারি অফিসার। ১৯৮০র দশকে গাদ্দাফী তাকে দায়িত্ব দেন শাদ নামের প্রতিবেশী দেশটি দখলের। ওই অভিযান ব্যর্থ হয়। ১৯৮৭ সালে কয়েক শ' লিবিয়ান সৈন্যের সাথে শাদে বন্দী হন হাফতারও। বিস্ময়করভাবে গাদ্দাফী এ সময় হাফতার ও তার বাহিনীর কর্মকাণ্ডের দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করে বলেন, এ অঞ্চলের কোথাও লিবিয়া কোনো সৈন্য পাঠায়নি। পরে মার্কিন হস্তক্ষেপে মুক্তি পান হাফতার
ফ্রান্সের সাবেক ঔপনেবিশিক দেশগুলোতে নতুন করে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে যাচ্ছে ফ্রান্স। এ অঞ্চলের জ্বালানী সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্টা করতে চায় ফ্রান্স। আবার এসব দেশ এক সময় উসমানীয় শাসনের অধীনে ছিলো। স্বাভাবিকভাবে এসব দেশে আছে তুরস্কের প্রভাব বিস্তারের আকাঙ্খা। যা ফ্রান্স ও তুরস্ককে মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে
কৌশলগত কারণে মিশর বেকায়দায় থাকলেও সিসির মতো সামরিক একনায়ক যে কোনো হটকারি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলতে পারেন। সিসির হাতে তামাক খেতে মরিয়া হয়ে আছে আমিরাত ও সৌদি আরব। এরই মধ্যে আমিরাত ও সৌদির অর্থায়নে পরিচালিত গণমাধ্যমে সেরকম কিছু খবরও এসেছে
আরব বসন্তেরর পর মধ্যপ্রাচ্যে গণতন্ত্রের বিকাশ ঘটতে শুরু করলে উত্থান ঘটতে শুরু করে ইসলামপন্থীদের। মিশরে ক্ষমতায় আসে মুসলিম ব্রাদারহুড। তিউনিসিয়ায় ক্ষমতা পায় ব্রাদারহুডের সহযোগী আন নাহাদা পার্টি। পরে সৌদি ও আমিরাতের সমর্থনে মিশরে ক্ষমতা দখল করেন সিসি। এরপর থেকে আবার উল্টোধারায় বইতে থাকে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি
লিবিয়ার সঙ্গে তুরস্কের চুক্তির ফলে এই পাইপলাইন আটকে দেওয়ার ক্ষমতা অর্জন করেছে তুরস্ক। এখন ইসরাইল চাচ্ছে তুরস্কের সঙ্গে জোট বেধে পাইপলাইনে যুক্ত হতে। এজন্য তুরস্কের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্র্ক বাড়াতেও মরিয়া ইসরাইল। তুরস্ক চাচ্ছে কৃষ্ণ সাগর, এজিয়ান সাগর ও ভূমধ্যসাগরে উপস্থিতি জোরদার করতে
উত্তর লিবিয়ার মরু অঞ্চলের এবং উপকূলীয় অঞ্চলের সামরিক অবস্থানগুলো আকাশ থেকে সহজেই চিহ্নিত করা যায়। এসব এলাকায় খুব কম জায়গায়ই আছে যেগুলো গোপন থাকছে প্রতিপক্ষের কাছে। যে কারণে আকাশ থেকে হামলা অনেকটা সহজ হয়ে গেছে। এই সুবিধাটা নিয়েছে উভয় পক্ষই- জাতিসংঘ সমর্থিত সরকার ও পূর্বাঞ্চলীয় খলিফ হাফতারের লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মি। শুরুর দিকে উভয় বাহিনীই ব্যবহার করতো ফরাসি ও সোভিয়েত যুগের যুদ্ধবিমান। যা এখন অনেকটাই অপ্রচলিত এবং এর প্রযুক্তিগত সুবিধাও কম
আমিরাতের এমবিজেড ও সউদি আরবের নেতারা বেশ ভালো করেই জানেন ও বোঝেন যে তাদের শাসনব্যবস্থা ভেঙে পড়তে শুরু করলে ব্রাদারহুডের মতো ধর্মমনস্ক আন্দোলনগুলোই তাৎক্ষণিকভাবে তাদের রাজনৈতিক বিকল্প হবে। কেননা, ইখওয়ান বা ব্রাদারহুডই ইসলামের রাজনৈতিক ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে, আমীরাত ও সউদি আরবের নেতারা যার ঘোর বিরোধী
লিবিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে তুরস্ক সমর্থিত বাহিনীর একের পর এক বিজয় দেশটির লৌহমানব খলিফা হাফতারের জন্য বিপর্যয় ডেকে এনেছে। এই বিজয়ের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় ছায়াযুদ্ধে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য মরিয়া বিদেশি শক্তিগুলোর মধ্যে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তুরস্ক
পরিস্থিতি সামলে উঠতে না পেরে যুদ্ধবাজ হাফতার সম্প্রতি রমজানকে অজুহাত দেখিয়ে একতরফা অস্ত্রবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন। তবে ত্রিপোলি সরকার তা নাকচ করে দিয়েছে। আসলে তুরস্কের সামরিক সহায়তায় লিবিয়া যুদ্ধের স্রোত পাল্টে গেছে। এটা এখন স্পষ্ট যে ত্রিপোলি দখলে হাফতারের অভিযান ব্যর্থ হয়েছে। তিনি এখন পূর্বাঞ্চলে রাজনৈতিক ও সামরিক অবস্থান ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। অনেকেই বলছেন, লিবিয়া সংঘাতে কোনো সামরিক সমাধান নেই, দরকার রাজনৈতিক সমঝোতা। তবে হাফতারের পতন ছাড়া রাজনৈতিক সমাধান সম্ভব নয়
মুসলিম বিশ্বের মধ্যে অনৈক্য রেষারেষি ও হানাহানির ইতিহাস বহু পুরনো। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তা যে কী ভয়ঙ্কর রুপ নিয়েছে, তা তো ইয়েমেন ও সিরিয়ার ধ্বংসস্তুপের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। একদা সমৃদ্ধ ইরাক ও লিবিয়া আজ প্রায় অকার্যকর দেশ। ইরান ও কাতার প্রায়-একঘরে। এবার কি শনির দৃষ্টি পড়েছে তুরস্কের ওপর?
উত্তর আফ্রিকার সবচেয়ে ধনী ও সমৃদ্ধ দেশ ছিলো লিবিয়া। গাদ্দাফির পতন আর আরব বসন্তের ব্যর্থতার কারনে দেশটি এখন বিভিন্ন বিদেশি শক্তির ছায়া যুদ্ধের কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে।
ত্রিপলি সরকারের সাথে তুরস্কের যে সামরিক ও নিরাপত্তা চুক্তিটি হয়েছে তাতে করে জঙ্গি নেতা হাফতারের বিজয় প্রায়-অসম্ভব হয়ে উঠেছে, যদিও তার পেছনে আছে মিশর, আরব আমীরাত, ফ্রান্স এবং আরো কয়েকটি দেশ। জঙ্গি নেতার প্রতি তাদের এ সমর্থনকে তুরস্ক বিবেচনা করছে ''ত্রিপলি সরকারের আত্মরক্ষার অধিকারকে অস্বীকার করা'' হিসাবে। এ অবস্থায় ত্রিপলিভিত্তিক জি এনএ সরকারকে সমর্থন দেয়াকেই ন্যায়সঙ্গত মনে করছে তুরস্ক।