কয়েক দশক ধরে মধ্যপ্রাচ্যর দেশগুলো নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সংঘাতে জড়িয়ে পড়লেও এখন এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সর্ম্পকে বড় ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বহু মেরুকেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থার যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে তাতে মধ্যপ্রাচ্যর দেশগুলো পালন করতে যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা। এই প্রথম পরস্পর বিরোধী দেশগুলো কাছাকাছি আসছে। এমনকি দশকের পর দশক ধরে ইরানের সাথে আরব দেশগুলোর যে বিরোধ তা কমিয়ে আনার প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ইরানের সাথে বিশ্বশক্তির পারমানবিক চুক্তির বিরুদ্ধে ইসরাইল অবস্থান নিলেও আরব দেশগুলো অনেকটা নিরব। অপরদিকে ঘনিষ্ট হচ্ছে তুরস্ক, সৌদি আরব, মিশর ও কাতারের সাথে সর্ম্পক। সিরিয়ার সাথে আরব আমিরাত, কাতার ও তুরস্ক সর্ম্পক স্থাপনের ইঙ্গিত দিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে দেশগুলোর পরিবর্তিত সর্ম্পকের নানা দিক থাকছে মুনতাসীর মুনীরের প্রতিবেদনে।
উপসাগরীয় দেশগুলো ভারতের অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভারতীয় অভিবাসনের দিক থেকে এই অঞ্চল বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম। ২০১৯ সালে কোভিড-১৯ মহামারী ছড়িয়ে পড়ার আগে এই অঞ্চল থেকে ভারত যে রেমিটেন্স পেয়েছিল, সেটা ছিল ভারতের জিডিপির দুই শতাংশ। উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর প্রতিক্রিয়াকে তাই ভারত সরকার অবহেলা করতে পারে না। ভারতে মুসলিম বিদ্বেষী মনোভাব চরম আকার ধারণ করার প্রেক্ষিতে পশ্চিমা দেশগুলো এর আগে বহুবার উদ্বেগ জানালেও ভারত সেগুলোকে পাত্তা দেয়নি। কিন্তু সাম্প্রতিককালে বিজেপির শীর্ষ পর্যায়ের দুই কর্মকর্তার চরম ঔদ্ধত্মপূর্ণ বক্তব্যের পর উপসাগরীয় দেশগুলো যখন তীব্র প্রতিক্রিয়া জানালো, তখন তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত সরকার। যদিও উপসাগরীয় দেশগুলো দাবি জানিয়েছে, ভারতকে এ জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। বিস্তারিত থাকছে হায়দার সাইফের প্রতিবেদনে।
আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনীর বিদায় ও তালেবানদের সাথে সংলাপে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে দোহা। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক ভূমিকা রাখছে কাতারের দূতাবাস। যুক্তরাষ্ট্র যখন মধ্যপ্রাচ্য থেকে গুটিয়ে আনতে চাচ্ছে, এ রকম পরিস্থিতিতে কাতারের মতো মিত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
আমেরিকার মতো চীনও ইয়েমেনের রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধে সউদি আরবের জড়িয়ে পড়া নিয়ে একটি কথাও বলে না। প্রতিদানে সউদি আরবও উইঘুর মুসলিমদের প্রতি চীনের বর্বর আচরণের মৌখিক নিন্দা করা থেকেও বিরত থাকে। চীন তার দখলীকৃত পূর্ব তুর্কেস্তান বা সিনচিয়াং প্রদেশের ১০ লাখ মুসলিমকে ধর্ম ভুলিয়ে নাস্তিকতা শেখাতে দীর্ঘ দিন যাবত বন্দী করে রেখেছে
মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতা ক্রমেই খারাপ থেকে ভয়ঙ্করের দিকে মোড় নিয়েছে, যার কোনো সমাপ্তিরেখা চোখে পড়ছে না। খালি চোখে কিছু দেখা যায় আর কিছু দেখা যায় না। এমনসব আন্তর্জাতিক দাবার ঘুটির চালে সবকিছু এমন জটিল রূপ নিয়েছে যে, মধ্যপ্রাচ্য এগিয়ে চলেছে আরো সংঘাতময় ও গোলযোগপূর্ণ ভবিষ্যতের দিকে
পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় এলাকার গ্যাস আহরণ নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ চীনের 'গোয়িং গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজি'র প্রথম পর্যায় তৈরি করেছে। দেখে মনে হচ্ছে, চীন এ অঞ্চলের রাজনীতিতে আরও নিরপেক্ষ থাকাই ভালো মনে করছে। মনে হচ্ছে, দেশটি ঐতিহাসিক 'ওয়েট অ্যান্ড সি' অর্থাৎ 'অপেক্ষা করা ও দেখা'র কৌশল নিয়েছে
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অব্যাহতভাবে বাড়ছে চীনের বিনিয়োগ। স্বাভাবিকভাবে চীনকে আমেরিকার কথায় পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে পারছে না এসব দেশ। এমন পরিস্থিতিতে কি করা উচিত - এ প্রশ্নে উপসাগরীয় এলাকার এক বিশ্লেষক বলেন, এটা এমন এক অবস্থা, যেখানে সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে প্রয়োজন খুবই সতর্কতার। কিন্তু মুশকিল হলো, বৃহৎ শক্তিগুলোর নেতারা মধ্যপন্থা অবলম্বনে একেবারেই অনিচ্ছুক। ইসরাইলকে যেমন সরাসরি বলে দিতে হয়েছে চীনের ফাইভ জি প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ তারা দেবেন না
আমিরাতের এমবিজেড ও সউদি আরবের নেতারা বেশ ভালো করেই জানেন ও বোঝেন যে তাদের শাসনব্যবস্থা ভেঙে পড়তে শুরু করলে ব্রাদারহুডের মতো ধর্মমনস্ক আন্দোলনগুলোই তাৎক্ষণিকভাবে তাদের রাজনৈতিক বিকল্প হবে। কেননা, ইখওয়ান বা ব্রাদারহুডই ইসলামের রাজনৈতিক ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে, আমীরাত ও সউদি আরবের নেতারা যার ঘোর বিরোধী
উপসাগরীয় এলাকার সবগুলো দেশই এখন পর্যন্ত শাসিত হয় কর্তৃত্ববাদী রাজতান্ত্রিক পদ্ধতিতে। এসব দেশে গণতন্ত্র নেই, জনগণের নেই পছন্দমতো সরকার বেছে নেয়ার বা পরিবর্তনের স্বাধীনতা। কিন্তু শাসকগোষ্ঠী তাদের শাসন টিকিয়ে রাখতে তথা জনগণের মুখ বন্ধ রাখতে তেল বিক্রির টাকায় তাদের জন্য করেছে বিলাসব্যসনের ব্যবস্থা। ওসব দেশের মানুষ এ বিলাসী জীবনধারায় অভ্যস্ত হয়ে গেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সংস্কারের নামে যদি এসব ভোগবিলাস কাটছাঁট করা হয়, তাতে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি হতে পারে। রাজতন্ত্র এ ঝুঁকি কেন নিতে চাইবে?
ইরানের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন ধরনের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও এ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন দেশটির সক্ষমতার নতুন প্রমান হিসেবে দেখা হচ্ছে। ইরানের রেভুলশনারি গার্ড স্পেস ডিভিশন কমান্ডার জেনারেল আলি জাফরাবাদি বলেন, নতুন এ স্যাটেলাইট ইরানি আর্মিকে আইডেনটিফিকেশন, কমিউনিকেশন এবং নেভিগেশন মিশনের ক্ষেত্রে কৌশলগত সহায়তা করবে
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটা কথা চালু আছে যে পশ্চিমাজগতের নাকি সবসময় একজন শত্রূ লাগেই। শত্রূ না-থাকলে তারা একজন শত্রূ বানিয়ে হলেও নেবে। যুদ্ধ করবে ছায়ার সাথে, গদা ঘোরাবে হাওয়ায়। বেশ ক'বছর হলো এ রোগ সংক্রমিত হয়েছে মুসলিম বিশ্বেও
বেশ ক'বছর হয় সউদি আরব 'ভিশন-২০৩০' ঘোষণা করেছে। এ ভিশন অর্জনের সাথে সঙ্গতি রেখে দেশটি চাচ্ছে তার অর্থনীতিকে বহুমুখী করতে। এর অংশ হিসেবে তারা গত বছরজুড়ে তাদের পর্যটনশিল্পের ওপর আলোকপাত করেছে এবং সফলও হয়েছে। নিজেদের তারা মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার সর্বশেষ ট্র্যাভেল অ্যান্ড হসপিটালিটি মার্কেট হিসেবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে সউদি আরবের জিডিপি-র প্রায় সাড়ে নয় শতাংশ আসে পর্যটন খাত থেকে।
সৌদি আরবে নিরাপত্তার জন্য ইসরাইলের আয়রন ডোম সিস্টেম মোতায়েনের পরিকল্পনা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ইসরাইলের আয়রন ডোম সিস্টেম হলো এক ধরনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
মিশরের ইতিহাসে প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি কারাবন্দী অবস্থায় মারা গেছেন। আদালতে বক্তব্য দেয়ার সময় তিনি হার্ট অ্যাটাকে মারা যান বলে মিশরের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে জানানো হয়।
এশিয়া ও আফ্রিকার মধ্যবর্তী অঞ্চল মধ্যপ্রাচ্য নামে পরিচিত। এই অঞ্চলে বিশে^র সবচেয়ে প্রভাবশালী তিনটি ধর্ম ইসলাম, ইহুদি ও খ্রিস্টান ধর্মের জন্মস্থান। মধ্যপ্রাচের্য নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্টার জন্য জন্য আদিকাল থেকে বিভিন্ন সা¤্রাজ্য প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে আসছে।