মধ্যপ্রাচ্যের এক বড় খেলোয়াড়

বড় খেলোয়াড় মোহাম্মদ বিন জায়েদ এবং খলিফা হাফতারকে সঙ্গে নিয়ে মিশরের মাটিতে নামছেন দেশটির স্বৈরশাসক আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি - রয়টার্স

  • হুমায়ুন সাদেক চৌধুরী
  • ২১ জুলাই ২০২০, ২০:০৬

সময় বড় বলবান। সময়ের স্রোতে কত মহা মহা কীর্তিই না ভেসে যায়! ২০১১ সালে তিউনিসিয়ায় যখন আরব বসন্তের সূচনা হলো তখন কত কথাই না শোনা যেতে থাকলো - আরব দুনিয়ায় রাজতন্ত্রের দিন শেষ হয়ে এলো, এবার সেখানে গণতন্ত্রের বিজয় পতাকা উড়বে, আরো কত কী। সেই বসন্তের ঘূর্ণি হাওয়ায় মিশরে পতন ঘটলো স্বৈরশাসক হোসনী মোবারকের। দেশটির পাঁচ হাজার বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জনগণ আপন ইচ্ছায় নিজেদের শাসক নির্বাচন করলো। বিশ্বব্যাপী আরব বসন্তের সমর্থকরা দ্বিতীয় দফা হাততালি দিলেন। তারপর? তারপর সামরিক হস্তক্ষেপ ও অভ্যূত্থান ও গৃহযুদ্ধে ভেসে গেল বসন্তের দিন। সেই শীতের হাওয়া এখনও বইছে; এক দশক পরও থামার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না।

অথচ এই সামরিক হস্তক্ষেপ ও অভ্যূত্থান ও গৃহযুদ্ধের যারা টার্গেট, তারা আজ কোথাও মৃত, কোথাও জেলখানায় পচে মরছে অথবা দেশছাড়া হয়েছে। তারা হলো মিশরে মুসলিম ব্রাদারহুড, সিরিয়া ও ইরাকে আল কায়েদা ও আইএস। সবাই আজ কার্যত নিশ্চিহ্ন। যদিও প্রত্যেকে আলাদা গোষ্ঠী, কিন্তু প্রতিবিপ্লবী দৃষ্টিকোণ থেকে এরা সবাই এক।

সেই ২০১১ সালের আরব বসন্তের সময় থেকেই ইসলামপন্থাকে এ রকম বিপ্লবী শক্তির একটা ভগ্নাংশরূপে দেখা হচ্ছে, তা সে রাজনৈতিক দিক থেকে হোক কিংবা সশস্ত্র সংগ্রামের বিবেচনায় হোক। তবে বাস্তবতা হলো, একদা এ শক্তির ডাকে তিউনিসিয়ায়, মিশরে ও ইয়েমেনে যেভাবে হাজার হাজার মানুষ রাজপথে নেমে এসে শাসকগোষ্ঠীর পতন ঘটিয়েছিল, নিকট-ভবিষ্যতে সে-রকম কিছু করার ক্ষমতা তাদের আছে বলে মনে হয় না। বরং ২০১৩ সালে মিশরে জনগণের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে অস্ত্রের মুখে উৎখাতের মধ্য দিয়ে প্রতিবিপ্লবী শক্তির যে জয়যাত্রার সূচনা হয়, তা এখনও ভয়াল চেহারায় অব্যাহত আছে।

এই প্রতিবিপ্লব জন্ম দিয়েছে কতগুলো দাগী একনায়কের। যেমন, সউদি আরবে মোহাম্মদ বিন সালমান, মিশরে আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি, লিবিয়ায় খলিফা হাফতার। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে এরা কেউই টিকতে পারবে না। এরা বাস করে সেই ফেরাউনের যুগে এবং প্রতিষ্ঠা করে পরিবারতন্ত্র। এরা সবাই সেই ব্যক্তির বাধ্য ও অনুগত, যে ব্যক্তি তাদেরকে অর্থ, অস্ত্র ও পরামর্শ দিয়ে ক্ষমতারোহনে সাহায্য করেছে।

কে সেই ব্যক্তি? তিনি হচ্ছেন সেই ব্যক্তি, যিনি মিশরে সামরিক অভ্যূত্থান সংগঠনে বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেছেন। লিবিয়ার গৃহযুদ্ধে তিনি আজ এক বড় খেলোয়াড়। আফ্রিকার শৃঙ্গে উপস্থিতি বাড়াতে ইনি তার দেশের বন্দরগুলোকে কাজে লাগাচ্ছেন। ইয়েমেনের যুদ্ধে সে-দেশের প্রেসিডেন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহর ছেলের পক্ষে সউদি আরবকে ঠেলে দেন তিনি আর পরে নিজে চলে যান দক্ষিণাঞ্চলীয় বিদ্রোহীদের পক্ষে। কাতারের ওপর অবরোধ আরোপেও তিনিই কলকাঠি নাড়েন। সউদি আরবের এক অচেনা প্রিন্সকে পরিচয় করিয়ে দেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিবারের সঙ্গে। মোটের ওপর এমন কোনো তরকারি নেই, যাতে তিনি তার আঙ্গুলটি ডোবাননি।

এই 'কীর্তিমান' মানুষটি হলেন আবু ধাবির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন জায়েদ, যাকে সংক্ষেপে এমবিজেড বলেও চেনে মানুষ। তিনি থাকেন অনেকটা লোকচক্ষুর আড়ালে। বক্তৃতা দেন খুবই কম। পত্রপত্রিকায় সাক্ষাতকারও বলতে গেলে দেনই না। যে অল্পকিছু বক্তব্য বা সাক্ষাতকার তিনি দিয়েছেন তাতে তাকে মোটের ওপর একজন সাদামাটা, স্বল্পভাষী ও মিতভাষী মানুষ বলেই মনে করা যায়। নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকাকে দেয়া এক সাক্ষাতকারেও নিজেকে এভাবেই তুলে ধরেছেন এমবিজেড।

তবে সময় যতই গড়াতে লাগলো, ততোই স্পষ্ট হতে লাগলো যে ওটা গল্পের শেষ নয়, শুরু মাত্র। ভালো ইংরেজি জানা, স্যান্ডহার্স্টে মিলিটারি ট্রেইনিং পাওয়া চুপচাপ স্বভাবের যুবকটি যুবরাজ হয়ে যে-ই প্রতিবিপ্লবী জিহাদ শুরু করলেন তখনই তার উচ্চাভিলাষ স্পষ্ট হতে লাগলো।

তিনি যেমনটি বলেন, ইসলামপন্থীদের উত্থানের কয়েকটি প্রচেষ্টা পণ্ড করে দেয়ার মধ্য দিয়েই তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা, সুযোগ ও স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়নি। তাদের নিয়ে তার দুঃস্বপ্নের অনেকটাই এখনও সুপ্ত রয়ে গেছে।

একজন বুদ্ধিমান পর্যবেক্ষক হিসেবে এমবিজেড-ও অন্য সবার মতো পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছেন, মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন প্রভাব ক্রমেই গুঁড়িয়ে যাচ্ছে। হোয়াইট হাউসের সিদ্ধান্তকে কিভাবে নিজের পক্ষে আনতে হয়, তা তিনি ভালোই জানেন। তাদের মূর্খতা, গোঁয়ার্তুমি ও লোভের সাথেও তার পরিচয় আছে। কাজেই যখন প্রয়োজন হয় তখন তাদের পকেটে সরাসরি টাকা পৌঁছে দিতে তার একটুও অসুবিধা হয় না। ওভাল অফিসে সত্যিকার সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় তার পক্ষে সুর তুলতেও সক্ষম তিনি।

সব দেখেশুনে মনে হয়, এখন তার মনে অবশ্যই এ ভাবনা এসেছে যে, মধ্যপ্রাচ্যের একজন নতুন শাসক প্রয়োজন। সেই নতুন শাসকটি তিনি নিজে নন কেন? চতুর মোহাম্মদ বিন জায়েদ হয়তো ভাবছেন, সময় এলেই তিনি অন্ধকারের পর্দা ছিঁড়ে বেরিয়ে আসবেন।

তা যুবরাজের মিশনটা কী? এ প্রশ্নের জবাবে অনেকে বেশ জোর গলায়ই বলে থাকেন, বহির্বিশ্বে যুবরাজের সবচাইতে বড় অপারেটর, জাতিসংঘে আমীরাতের রাষ্ট্রদূত ইউসেফ আল-ওতাইবার সাম্প্রতিক এক লিখিত ভাষ্যে সেটা পুরোপুরি ফুটে উঠেছে।

একটি ইসরাইলী পত্রিকার চিঠিপত্র কলামে ওতাইবার বক্তব্যটি প্রকাশিত হয়েছে। হিব্রু ভাষায় লেখা ওই চিঠিতে ফিলিস্তিনী এলাকাকে ইসরাইলভুক্ত করার বিপদ সম্বন্ধে মৃদু গলায় হুঁশিয়ার করে দিলেও তিনি জোর গলায় বলেছেন ইসরাইল-আমীরাত বন্ধুত্বের কথা। ইসরাইলী পাঠকদের মনে করিয়ে দিয়েছেন যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত জানুয়ারিতে যখন মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণা করছিলেন তখন হোয়াইট হাউসের ঈস্ট রুমে যে তিনজন আরব রাষ্ট্রদূত উপস্থিত ছিলেন, তিনি তাদের একজন।

বাস্তবে এ চিঠির তেমন কোনো মূল্য নেই। কেননা, এটা প্যালেস্টাইনীদের কোনো বার্তা নয় আর ইসরাইল প্যালেস্টাইনী ভূমি দখল করলেও তাতে আমীরাত এখন আর কোনো সমস্যা দেখে না। তারা এখন ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য সেদেশে দুই উড়োজাহাজবোঝাই করোনা সুরক্ষা সামগ্রী বা পিপিই পাঠায়, উচ্চ পর্যায়ের ব্যবসায়িক প্রতিনিধি দলও পাঠায়। জর্দানের ওপর দিয়ে রাতের অন্ধকারে আবু ধাবি থেকে ইসরাইলের বেন গুরিয়নে গোপনে উড়োজাহাজ যাওয়ার দিন শেষ। ঝোপের আড়ালে বসে প্রেম আর নয়। প্রেম হবে প্রকাশ্যে। যে জর্দান পশ্চিম তীরকে ইসরাইলভূক্ত করাকে নিজের অস্তিত্বের প্রতি হুমকি মনে করে থাকে, সেই জর্দানও এ বিষয়ে একটি কথাও বলেনি।

যাহোক, ওতাইবার চিঠিটি পরিণত হয়েছে ইসরাইলের কট্টর ডানপন্থী ইহুদিদের কাছে আমেরিকার উদারপন্থী ইহুদিদের খোলা চিঠিতে। এক খবরে বলা হয়, আমেরিকান ইসরাইলী বিলিয়নেয়ার হাইম সাবানই এ চিঠির মূল পরিকল্পনাকারী। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সাবেক এক উপদেষ্টাও বলেছেন, চিঠিটি সাবানের ব্রেন চাইল্ড।

তবে যেটাই হোক, আরব জনমতের ওপর এ চিঠি কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে না। তবে চিঠিটি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে এনেছে। তা হলো, চিঠির দু'টি প্যারাগ্রাফে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন জায়েদ বা এমবিজেড-এর মিশন বা লক্ষ্য ফুটে উঠেছে।

এতে লেখা হয়েছে, ''ইউএই ও ইসরাইলের রয়েছে এ অঞ্চলের সবচাইতে দক্ষ সেনাবাহিনী, সন্ত্রাসবাদ ও আগ্রাসন নিয়ে অভিন্ন উদ্বেগ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দীর্ঘ ও গভীর সম্পর্ক। এ পটভূমিতে আমরা দু'দেশ আরো ঘনিষ্ঠ হতে এবং আরো কার্যকর নিরাপত্তা সহযোগিতা গড়ে তুলতে পারি।''

চিঠির আরেক প্যারাগ্রাফে লেখা হয়, ''এ অঞ্চলের সবচাইতে অগ্রসর ও বহুমুখী অর্থনীতির দেশ হিসেবে আমাদের ব্যবসাবাণিজ্য ও আর্থিক বন্ধন সুদৃঢ় করা গেলে তা গোটা মধ্যপ্রাচ্যের প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতায় অবদান রাখতে পারে।''

লক্ষ্য করুন, এসব বাক্যে সংযুক্ত আরব আমীরাতকে শুধু মিশর ও সউদি আরবের চাইতে বড় সামরিকশক্তি বলেই দাবি করা হয়নি, ''আরব বিশ্বের সবচাইতে অগ্রসর ও বহুমুখী অর্থনীতির দেশ'' - এমন উদ্ভট দাবিও করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে উপসাগরীয় এলাকার একটি ক্ষুদ্র নগর রাষ্ট্রকে একজন যুবরাজ ভবিষ্যতে কিভাবে গড়ে তুলতে চান, তার অহংকারী পরিকল্পনাই ফুটে উঠেছে।

কিন্তু দেখুন, আমীরাত নিজের সামরিক শক্তিকে ইসরাইলের তুল্য দেখাতে গিয়ে দুই মিত্র দেশ মিশর ও সউদি আরবের সেনাবাহিনীকে সাইডলাইনে ঠেলে দিয়েছে। এর কোনো দরকার ছিল না। দরকার হচ্ছে এ জন্যে যে, যুবরাজ মোহাম্মদ বিন জায়েদ তার ক্ষুদ্র দেশটিকে 'আরেক ইসরাইল' বানাতে চান।

আয়তন ও জনসংখ্যার বিচারে ইসরাইল ও সংযুক্ত আরব আমীরাত দু'টোই ছোট দেশ। উভয় দেশের সমাজই গভীরভাবে সামরিকায়িত। ইসরাইলের 'সিটিজেন-স আর্মি'র কথা সবাই জানে, এমবিজেড ২০১৪ সালে তার দেশের পুরুষদের জন্য যে খসড়া পরিকল্পনা করেছেন, তা অনেকেরই অজানা।

উভয় দেশেরই রয়েছে এমন সামরিক ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা, যা তাদের সীমান্ত ছাড়িয়ে বহু দূর, এমনকি আফ্রিকার কেন্দ্রস্থল পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে। যদি ইসরাইল দেখায় যে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য তার হাত এন্টেবি এবং বিশ্বের যে-কোনো স্থানে পৌঁছে যেতে পারে, তখন আমীরাতকেও দেখাতে হবে যে তার দীর্ঘ হাত বহু দূরের দেশ লিবিয়া, তুরস্ক, সিরিয়া পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম।

ইসরাইল ও সংযুক্ত আরব আমীরাত - দু' দেশেরই আছে এমন প্রশিক্ষিত জনগোষ্ঠী, যাদের দিয়ে পশ্চিমাদের যে-কোনো স্বার্থ হাসিল করা যায়। উভয় দেশের রয়েছে অভিন্ন শত্রুও - ইসলামিজম, তুরস্ক ও ইরান। এ অঞ্চলকে নিয়ন্ত্রণ করায় তাদের রণকৌশলও একই। এ অঞ্চলে ইসরাইল ও সংযুক্ত আরব আমীরাতের সবচাইতে বড় দুই চ্যালেঞ্জ হচ্ছে যথাক্রমে ইরান ও তুরস্ক।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সাথে আমীরাতের একেবারে দা-কুমড়া সম্পর্ক। এরদোয়ানকে ক্ষমতাচ্যূত করতে ২০১৬ সালে যে গুলেনবাদী অভ্যূত্থানটি হয়, তাতে অর্থ যোগান দিয়েছিল আমীরাত। সিরিয়ার ইদলিবে তুরস্কের সামরিক উপস্থিতিরও বিরোধী আমীরাত। তারা সেখানে রাশিয়ার মধ্যস্থতায় প্রতিষ্ঠিত যুদ্ধবিরতি অমান্য করার জন্য সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশারকে ক্রমাগত প্ররোচিত করে ও অর্থ দিয়ে চলেছে। লিবিয়ার গৃহযুদ্ধেও তুরস্কের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে আমিরাত। সম্প্রতি লিবিয়ান বিমানঘাঁটি আল ওয়াতিয়ায় তুর্কী এয়ার ডিফেন্স ব্যাটারির ওপর হামলা চালায় একঝাঁক অচেনা বোমারু বিমান। এর পরপরই আমিরাতের রাজকীয় উপদেষ্টা আবদুল খালেক আবদুল্লা টুইট করেন, ''সব আরবের পক্ষ থেকে তুরস্ককে একটি শিক্ষা দিল আমিরাত''।

তবে তুরস্কের শক্তিমত্তা সম্বন্ধে ভালোই জানে ইসরাইল। তাই তারা তুরস্ককে ঘাঁটাতে যায় না। একইভাবে আমীরাতও ঘাঁটায় না ইরানকে। ওই অঞ্চলে দু' দেশ এখন একসাথে কাজ করছে, একে অপরের পিঠ চুলকে দিচ্ছে। কিন্তু এই মাখামাখি চিরস্থায়ী হবে - এমন কথা কেউ বলতে পারে না। এটা টিকবে ততোদিনই, যত দিন এমবিজেড-এর অহংকে ব্যবহার করে প্যালেস্টাইনীদের ওপর দখলদারিত্ব চালিয়ে যেতে পারবে ইসরাইল। কেননা, তাদের কাছে জাতীয় স্বার্থই সবকিছুর ওপরে।
যুবরাজের মিশনের আরেকটি সমস্যা হচ্ছে তার সুন্নী আরব মিত্ররা। সউদি ও মিশরীয় মিলিটারি এলিটরা যখন দেখবেন যে তাদের জাতীয় ও বাণিজ্যিক স্বার্থ ক্ষুন্ন হচ্ছে তখন তারা যুবরাজের উচ্চাভিলাষী মিশনকে অন্যভাবে দেখতে থাকবেন।

তাহলে কী হবে যুবরাজ এমবিজেড-এর মিশনের? ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে, এ মিশন ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়বে। যেসব আরব দেশ ইসরাইলের সাথে কাজ করেছে অথবা ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিয়েছে, তারা সবাই আজ আরো দুর্বল এবং বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। যে মিশর ও জর্দানের কূটনীতিকরা একসময় নিজেদের পথপ্রদর্শক ভাবতেন, আজ তারাই দুঃখ করে বলেন, শান্তির নামে এ আমরা কী করলাম!

মার্কিন স্ট্যাট সেক্রেটারি মাইক পম্পেও এর সঙ্গে বড় খেলোয়াড় মোহাম্মদ বিন জায়েদ ২০১৮ সালের ১০ জুলাই দেখা করেছেন আবুধাবির আল শাতি প্যালেসে। ছবি : রয়টার্স
মার্কিন স্ট্যাট সেক্রেটারি মাইক পম্পেও এর সঙ্গে বড় খেলোয়াড় মোহাম্মদ বিন জায়েদ ২০১৮ সালের ১০ জুলাই দেখা করেছেন আবুধাবির আল শাতি প্যালেসে। ছবি : রয়টার্স

 

আরব দেশগুলোর মধ্যে ইসরাইলের সাথে সবচাইতে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতো যে জর্দান, তারা আজ ব্যাপক বেকারত্ব ও সামাজিক বিপর্যয় মিলিয়ে দেউলিয়াত্বের দরজায় পৌঁছে গেছে। যে ফাতাহ স্বীকৃতি দিয়েছিল ইসরাইলকে, সেই ফাতাহ আজ নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করছে, অসলোতে এ চুক্তি আমরা কেন করতে গিয়েছিলাম? এ থেকে আমরা কী পেয়েছি?

এই নিরন্তর দ্বন্দ্ব তাদেরকে নিয়ে আসছে এককালের প্রতিদ্বন্দ্বী হামাসের আরো কাছাকাছি।

এমন বাস্তবতায় যুবরাজ এমবিজেড-পরিকল্পিত ইসরাইল-আমিরাত জোটের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। এই জোট দিয়ে ব্যক্তির স্বার্থ হাসিল হতে পারে, জাতির নয়। এমবিজেড-এর পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়নের কৌশল একান্তই তার নিজের; তার দেশবাসীর নয়। আরব দেশগুলোর রাজপথে কান পাতলে শোনা যায় জনতার কণ্ঠস্বর। তারা প্যালেস্টাইন সমস্যার ন্যায়সঙ্গত সমাধান না-হওয়া পর্যন্ত ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়ার পক্ষপাতী নয়।

এ অঞ্চলের জন্য এমবিজেড-ইসরাইল আঁতাত হবে বিষতুল্য। যুবরাজের এ মিশন হবে প্রকৃতপক্ষে 'মিশন ইম্পসিবল' বা অসম্ভবের পায়ে মাথা খুড়ে মরা। আরব দেশগুলো যত তাড়াতাড়ি এ সত্য উপলব্ধি করতে পারবে,ততোই তারা আরেকটি আঞ্চলিক যুদ্ধ ঠেকাতে সক্ষম হবে।

বিডিভিউজ-এ প্রকাশিত লেখার স্বত্ব সংরক্ষিত। তবে শিক্ষা এবং গবেষণার কাজে সূত্র উল্লেখ করে ব্যবহার করা যাবে