প্রশান্ত মহাসাগরে চীন-উত্তর কোরিয়ার টার্গেট যুক্তরাষ্ট্রের গুয়াম দ্বীপ

মাইক্রোনেশিয়ার সুন্দর দ্বীপ গুয়াম। তবে এটি মর্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অঞ্চল। এই দ্বীপেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রথম দেখা দেয় সূর্য্য। তাই গুয়ামকে ডাকা হয় ‘হোয়ার আমেরিকা স্টার্টস ইটস ডে’ - শাটারস্টক

  • মেহেদী হাসান
  • ১৭ জুন ২০২০, ২১:১০

বর্তমান বৈশ্বিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আলোচিত একটি নাম গুয়াম দ্বীপ। প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত এ দ্বীপের মালিক যুক্তরাষ্ট্র। ভারত ও প্রশান্ত মহাসগর অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট চীন এবং ভারতের মধ্যে আধিপত্যের লড়ায়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে গুয়াম দ্বীপ। গুয়াম দ্বীপের এ গুরত্বের কারন এর ভূকৌশগত অবস্থান । এ দ্বীপে রয়েছে যুক্তরাষ্টের শক্তিশালী সামরিক উপস্থিতি।

যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখন্ডের বাইরে তাদের যেসব সামরিক ঘাটি রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী সামরিক ঘাটি হলো গুয়াম দ্বীপ। এ দ্বীপ ঘিরে সামরিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে চীন এবং উত্তর কোরিয়া। ২০১৭ সালে উত্তর কোরিয়া এ দ্বীপে হামলা চালানোর হুমকি দেয়। এ দ্বীপে হামলা চালানোর জন্য চীন এবং উত্তর কোরিয়া উভয়ের কাছে রয়েছে বিভিন্ন মাত্রার শক্তিশালী ক্ষেপনাস্ত্র।

সর্বশেষ গত এপ্রিল মাসে চীন তাইওয়ানের কাছে পাঠায় তাদের বিমানবাহি রণতরী লিয়াওনিং। জবাবে যুক্তরাষ্ট্র গুয়াম দ্বীপের বিমান ঘাটির রানওয়েতে উডডয়নের জন্য প্রস্তুত করে রাখে ১২টি বি-৫২ বমার। তবে চীনা আকস্মিক হামলার আতঙ্কে যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি সরিয়ে নিয়েছে তাদের বি-৫২ বমার।

 

গুয়াম দ্বীপে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অত্যন্ত শক্তিশালী বিমান এবং নৌ ঘাটি। এখানকার বিমান ঘাটিতে যুবক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে শক্তিশালী, কৌশলগত বোমারু বিমান মোতায়েন রয়েছে যা পরমানু বোমা বহনে সক্ষম। মোতায়েন রয়েছে পরমানু শক্তিচালিত এটাক সাবমেরিন ও সাবমেরিন টেন্ডার। যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক কমান্ড, প্যাসিফিক ফ্লিটের ভিত্তি হলো গুয়াম দ্বীপ। প্রশান্ত মহসাগর অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তি আর আধিপত্যের উৎস গুয়াম দ্বীপ।

চীন থেকে গুয়ামের দূরত্ব ৪ হাজার ৭৫১ কিলোমিটার। উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ং ইয়ং থেকে এর দূরত্ব ৩ হাজার ৪শ কিলোমিটার। প্রশ্ন হলো প্রশান্ত মহাসাগারের এ গুয়াম দ্বীপ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গেলো কেমন করে।

প্রায় সাড়ে তিনশ বছর এ দ্বীপ ছিল স্পেনের দখলে। ১৮৯৮ সালে স্পেন-আমেরিকা যুদ্ধে স্পেনের পরাজয়ের ফলে এ দ্বীপ দখল করে যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে গুয়াম দ্বীপের দখল নেয় জাপান। এ যুদ্ধে জাপানের পরাজয়ের পর আবার গুয়াম দ্বীপের দখল নেয় যুক্তরাষ্ট্র। এভাবে মাঝখানে জাপানের আড়াই বছর ছাড়া গত একশ বছরের বেশি সময় ধরে গুরুত্বপূর্ণ এ গুয়াম দ্বীপ যুক্তরাষ্ট্রের দখলে রয়েছে।

আলোচিত দ্বীপ গুয়াম -ইন্টারনেট
আলোচিত দ্বীপ গুয়াম -ইন্টারনেট

 

প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিমে মাইক্রোনেশিয়ার একটি দ্বীপ গুয়াম। দ্বীপটির আয়তন ২১০ বর্গমাইল। জনসংখ্যা ১ লাখ ৬৮ হাজার প্রায়। গুয়ামের রাজধানী হাগান্তা। গুয়াম দ্বীপে সবচেয়ে বেশি মানুষ বাস করে দাদেদো শহরে। গুয়ামের অধিবাসীদের বলা হয় গুয়ামানিয়ান। জন্মসূত্রে এরা আমেরিকান নাগরিক । গুয়ামের আদিবাসীরা চামেরো। চামেরো আদিবাসীদের বসবাস গুয়ামসহ পাশের মেরিনা আইল্যান্ডে। এরা মূলত অস্ট্রোনেশিয়ান তথা পূর্ব ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, তাইওয়ান এবং দক্ষিন-পূর্ব এশিয়া দ্বীপের সাথে সম্পর্কিত লোকজন। গুয়ামের চামেরো আদিবাসীরা প্রায় ৪ হাজার বছর আগে এখানে বসতি স্থাপন করে।

মাইক্রোনেশিয়া এবং ওশেনিয়ার সবচেয়ে বড় দ্বীপ হলো গুয়াম। এর অবস্থান মেরিনা আইল্যান্ডের সর্ব দক্ষিণে । এটি মেরিনা চেইনের অংশ।

গুয়ামে আগমনকারী প্রথম ইউরোপীয়ান হলেন বিশ্বখ্যাত নাবিক ফার্ডিনান্ড মেগালান। তিনি পর্তুগীজ নাবিক। স্পেনের ইস্ট ইন্ডিজ অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন নাবিক ফার্ডিনান্ড। ইষ্ট ইন্ডিজ অভিযানের সময় তিনি ১৫২১ সালের ৬ মার্চ গুয়ামে আসেন। স্পেনের রাজার অনুরোধে নাবিক ফার্ডিনাল্ড স্পেনের হয়ে বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করেছেন।

ফার্ডিনাল্ড ১৫২১ সালে স্পেনে আসলেও স্পেন একে নিজের দ্বীপ হিসেবে ঘোষণা দিতে কিছুটা সময় নেয়। ১৫৬৫ সালে স্পেন একে তাদের দ্বীপ হিসেবে ঘোষণা দেয়। ১৬৬৮ সালে গুয়াম স্পেনের কলোনীতে পরিণত হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের নেভাল বেস- ইন্টারনেট
যুক্তরাষ্ট্রের নেভাল বেস- ইন্টারনেট

 

স্পেন এ দ্বীপকে কলোনী করার পর ১৬৯৫ সালের মধ্যে দ্বীপের জনসংখ্যা ৫০ হাজার থেকে মাত্র ৫ হাজারে নেমে আসে। বলা হয় আদীবাসীদের মধ্যে সংঘাত, টাইফুন এবং স্মল পক্সের কারনে মারা যায় তারা।

অপর দিকে স্পেন গুয়াম দ্বীপকে কলোনীতে পরিণত করার পর এখানে স্প্যানিশদের বসতি শুরু হয়। এসময় এখানে আসেন দিয়েগো লুইস দি সান ভিটোরিস । তিনি একজন ক্যাথলিক জেসুইট মিশনারী। গুয়ামে তিনি স্থাপন করেন প্রথম ক্যাথলিক চার্চ। মেরিনা আইল্যান্ডেও খিস্ট্রান ধর্ম সম্প্রসারিত হয় তার কারনে। গুয়াম দ্বীপে আগ্রাসী উপায়ে খ্রিস্টান ধর্ম প্রচার এবং আদীবাসীদের ব্যাপকভাবে খ্রিস্টান বানানো নিয়ে দিয়েগো লুইসের সাথে সংর্ঘষ হয় আদিবাসী নেতা মাতাপাংয়ের সাথে। এতে নিহত হয় দিয়েগো লুইস দি সান ভিটোরিস এবং তার অপর শক্তিশালী সহযোগী পেড্রো কালনসর।

পরবর্তীতে আত্মপোগনে চলে যায় গুয়ামের আদিবাসী নেতা মাতাপাং ও তার সহযোগীরা। স্পেন সরকার তাদের খুঁজে বের করার জন্য সেখানে অভিযান চালায় এবং তাতে মাতাপাং নিহত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

১৬ থেকে ১৮ শতক পর্যন্ত গুয়াম দ্বীপ ছিল স্প্যানিশদের মেনিলা গ্যালিয়নস বানিজ্য জাহাজের অন্যতম যাত্রা বিরতি স্থল।

১৮৯৮ সালে কিউবাকে কেন্দ্র করে স্পেন-আমেরিকা যুদ্ধ শুরু হয়। এ যুদ্ধের সময় ১৮৯৮ সালের ২১ জুন গুয়াম দ্বীপ স্পেনের কাছ থেকে দখল করে যুক্তরাষ্ট্র। স্পেন আমেরিকা যুদ্ধে স্পেনের পরাজয়ের মাধ্যমে স্পেন প্রশান্ত মহাসগারে তাদের সব দ্বীপের মালিকানা হারায়।

গুয়ামের সৈকতে পর্যটক -এপি
গুয়ামের সৈকতে পর্যটক -এপি

 

১৮৯৮ সালের ১০ ডিসেম্বর স্পেন-আমেরিকা স্বাক্ষর করে প্যারিস চুক্তি। এ চুক্তির ফলে শেষ হয় স্পেন আমেরিকা যুদ্ধ। চুক্তি অনুযায়ী স্পেন কিউবার ওপর থেকে তাদের সার্বভৌমত্বের দাবি পুরোপুরি ত্যাগ করে। এমন কি পুয়ের্তো রিকো, গুয়াম এবং ফিলিপাইনকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করে। এ চুক্তি কার্যকর হয় ১৮৯৯ সালের ১১ এপ্রিল সভপহ এবং তখন থেকে গুয়াম দ্বীপ আন্ষ্ঠুানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে বুঝিয়ে দেয়া হয়।

স্পেন-আমেরিকা যুদ্ধ আর প্যারিস চুক্তির ফলে অবসান হয় স্প্যানিশ বা হিসপ্যানিক সাম্রাজ্যের। বিশ্বের অন্যতম বড় আর শক্তিশালী সাম্রাজ্য ছিল ক্যাথলিক স্প্যানিশ বা হিসপ্যানিক সাম্রাজ্য। ১৫ শতকের শেষ দিক থেকে ১৯ শতকের শুরু পর্যন্ত বর্হিবিশ্বের বিরাট অংশ তাদের দখলে ছিল। ফিলিপাইন থেকে শুরু করে ওশেনিডা, আফ্রিকা এবং ইউরোপের অনেক এলাকা তাদের দখলে ছিল। ১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যুদ্ধে তাদের পরাজয়ের মাধ্যমে অবসান হয় স্পেনের এ প্রভাবশালী সা¤্রাজ্যের। বিশ্বে শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে নতুন এক ওয়ার্ল্ড অর্ডার।

ইতিহাসে স্পেন-আমেরিকার এ যুদ্ধ তাই খুবই সুদুর প্রসারী হিসেবে পরিচিত। স্পেন-আমেরিকার এ যুদ্ধ এবং প্যারিস চুক্তি শেষ পর্যন্ত গড়ায় ফিলিপাইন -আমেরিকা যুদ্ধে যা অব্যাহত থাকে ১৯০২ সাল পর্যন্ত। স্পে-আমেরিকা যুদ্ধে স্পেনের পরাজয়ের পর ফিলিপাইন, গুয়ামসহ প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে স্পেনের দখলে থাকা সব এলাকা চলে যায় যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগ পর্যন্ত প্রশান্ত মহাসাগরের ৫টি অঞ্চল যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে ছিল। এগুলো হলো আজকের ফিলিপাইন, মাইক্রোনেশিয়ার গুয়াম এবং ওয়েক আইল্যান্ড, পলি নেশিয়ার সামোয়া এবং হাওয়াই।

১৯৪১ সালের ৭ ডিসেম্বর হাওয়াদ্বীপের হনুলুলুতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাটি পার্ল হারবারের আক্রমন চালায় জাপান। পরের দিন ৮ ডিসেম্বর জাপান দখল করে গুয়াম দ্বীপ। আড়াই বর্ছ জাপানের দখলে থাকে গুয়াম দ্বীপ। এসময় জাপান আর্মি গুয়ামের অধিবাসীদের ওপর হত্যা, ধর্ষন, দাসত্বসহ ব্যাপক নিষ্ঠুরতা পরিচালনা করে। গুয়ামে তখন ২০ হাজারের মত অধিবাসী ছিল। জাপান আর্মি ১ হাজারের বেশি গুয়াম অধিবাসী হত্যা করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় গুয়াম দ্বীপ জাপান দখলের পর ম্যারিনা আইল্যান্ড থেকে অনেক চামেরো আদীবাসীদের আনা হয় গুয়াম দ্বীপে জাপান আর্মির সুবিধার জন্য। এর ফলেও সেখানে দ্ব›দ্ব সংঘাত সৃষ্টি হয়।

১৯৪৪ সালের ২১ জুলাই যুক্তরাষ্ট্র আবার দখল করে গুয়াম দ্বীপ। এ দখল যুদ্ধে ১৮ হাজার জাপানি আর্মি নিহত হয় গুয়াম দ্বীপে। ১৯৭২ সাল পর্যন্ত এখানে লুকিয়ে ছিল একজন জাপানি আর্মি। ১৯৭২ সালে সইসি ইয়োকই নামে সর্বশেষ একজন জাপানি সার্জেন্ট আত্মসমর্ণ করে। গুয়াম দ্বীপ দখলের সময় যুক্তরাষ্ট্র গুয়ামের কাছে নর্দার্ন মেরিনা আইল্যান্ডও দখল করে। মেরিনা আইল্যান্ড স্পেনের কাছ থেকে ক্রয় করেছিল জার্মানি।

১৯২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম একটি সি প্লেন ইউনিট পাঠায় প্রশান্ত মহাসগারের গুয়াম দ্বীপে। যাত্রীবাহী বিমান চলাচল সংস্থা প্যান আমেরিকান ওয়ার্ল্ড এয়ারওয়েজ এসময় গুয়ামে একটি সি প্লেন ঘাটি নির্মান করে তাদের সানফ্রান্সিসকো-ম্যানিলা এবং হংকং রুটে বিমান চলাচলের সুবিধার্থে।

১৯৪৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র এখানে স্থাপন করে এন্ডারসন বিমান ঘাটি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র গুয়ামী অধিবাসীদের আমেরিকান সিটিজেন হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

ভিয়েতনাম যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে গুয়াম দ্বীপ। এসময় এখানকার আর্মি ইউনিটকে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৬তম ইউনিট হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

বর্তমানে গুয়াম দ্বীপের ২৯ ভাগ এলাকা যুক্তরাষ্ট্রের আর্মির অধীন। মানে গুয়াম দ্বীপের ২৯ ভাগ এলাকা নিয়ে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাটি ও বিভিন্ন স্থাপনা।

এখানে যুক্তরাষ্ট্র আর্মির যেসব স্থাপনা রয়েছে তার মধ্যে রয়েছে -গুয়াম নৌ ঘাটি, এন্ডারসন বিমান ঘাটি, কোস্ট গার্ড সেক্টর, অপরা বন্দর, অর্ডন্যান্স এনেক্স, নেভল কম্পিউটার এন্ড টেলিকমিউনিকেশন্সস স্টেশন, জয়েন্ট ফোর্স হেডকোর্য়াটার্স, গুয়াম ন্যাশনাল গার্ড প্রভৃতি। এছাড়া রয়েছে সাবমেরিন স্কোয়াড্রন ১৫, নেভল স্পেশাল ওয়ারফেয়ার ইউনিট ওয়ান। যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক কমান্ড, প্যাসিফিক নৌ বহর, সপ্তম নৌ বহর এবং ৩০ তম নেভল কনস্ট্রাকশন রেজিমেন্টের ভিত্তি বর্তমানে গুয়াম দ্বীপ। টানা ১৬ বছর এখানে মোতায়েন ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে শক্তিশালী বোমারু বিমান বি-৫২, বি-১ এবং বি-২ স্পিরিট। এখনো মোতায়েন রয়েছে বি-১ ল্যান্সার। এখানে মোতায়েন রয়েছে পরমানু শক্তিচালিত সাবমেরিন এবং শক্তিশালী রণতরী ইউএসএস ফ্রাঙ্ক কেবল। সম্প্রতি করোনা ছড়িয়ে পড়ার পর এ দ্বীপে ডক করা হয় বিমানবাহী রণতরী রুজভেল্ট।

উত্তর কোরিয়ার হুমকির পর ২০১৭ সালের এবিসি নিউজের খবরে বলা হয় গুয়াম দ্বীপে পরমানু শক্তিচালিত ৪টি ফাস্ট এটাক সাবমেরিন ও দুটি সাবমেরিন টেন্ডার রণতরী রয়েছে। গুয়াম দ্বীপে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য সংখ্যা সাত হাজারের উপরে । এদের প্রায় সবাই নৌ এবং বিমান বাহিনীর।

২০১৭ সালে উত্তর কোরিয়া ঘোষণা দেয় তাদের মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপনাস্ত্র গুয়ামী সীমানায় হামলা পরিচালনা করতে সক্ষম। তা ছাড়া পুরো গুয়াম দ্বীপ বর্তমানে চীনের বিভিন্ন ধরনের ক্ষেপনাস্ত্রের আওতায় রয়েছে।

যেহেতু প্রায় সাড়ে তিনশ বছর এখানে স্পেনের শাসন ছিল তাই গুয়াম দ্বীপে রয়েছে শত শত বছরের অনেক ঐতিহাসিক স্থাপনা। এর অনেকগুলোর বয়স ৫শ বছরের বেশি। ১৯৭৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ১২৪টি এরকম ঐতিহাসিক স্থাপনা তালিকাভুক্ত করে।

গুয়ামে ১৯৭৫ সালে ১ লাখ ভিয়েতনামি এবং ১৯৯৬ সালে ৬ হাজার কুর্দি উদ্বাস্তুদের সাময়িক আশ্রয় দেয়া হয়।
গুয়াম অধিবাসীদের ৯৪ ভাগ বর্তমানে খ্রিস্টান। খ্রিস্টানদের ৭৫ ভাগ ক্যাথলিক।

গুয়ামে রয়েছে নির্বাচনকেন্দিক সরকার ব্যবস্থা। যুক্তরাষ্ট্রের হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভে গুয়াম থেকে একজন প্রার্থী মনোনয়নের ব্যবস্থা রয়েছে।

গুয়াম দ্বীপের অর্থনীতি পর্যটন আর যুক্তরাষ্ট্র আর্মির ওপর নির্ভরশীল।

গুয়ামে যেমন রয়েছে অনেক ঐতিহাসিক স্থাপনা তেমনি রয়েছে নয়ানাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এক কথায় চোখ ধাধানো। সমুদ্র ঘেরা দ্বীপে রয়েছে অনেক মনোহর সৈকত, উচু নিচু পাহাড়, ঝর্ণা। রয়েছে বিলাসবহুল পর্যটন অবকাঠামো।

যুক্তরাষ্ট্র বিমান বাহিনীর যে কয়টি সবচেযে সুন্দর ঘাটি রয়েছে তার মধ্যে গুয়াম ঘাটি স্বর্গ হিসেবে পরিচিত।
গুয়ামে রয়েছে অনেক উচু একটি পাহাড়। এর নাম মাউন্ট লামলাম। এর উচ্চতা সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১ হাজার ৩৩২ ফিট।
ফিলিপাইনসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের ভাষা চালু রয়েছে গুয়াম দ্বীপে। তবে সরকারি ভাষা ইংরেজি এবং আদিবাসী চামেরো। গুয়াম দ্বীপের অধিবাসীদের ৩৭ ভাগ আদিবাসী চামেরো। ফিলিপিনোদের সংখ্যা ২৬ ভাগ।

এখানে রয়েছে ইউনিভার্সিটি অব গুয়াম এবং প্যাসিফিক আইল্যান্ডস ইউনিভার্সিটিসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

প্রতিবেদনটির ভিডিও দেখুন

বিডিভিউজ-এ প্রকাশিত লেখার স্বত্ব সংরক্ষিত। তবে শিক্ষা এবং গবেষণার কাজে সূত্র উল্লেখ করে ব্যবহার করা যাবে