খ্রিস্টান নেত্রী যেভাবে হয়ে উঠলেন মুসলিমবান্ধব


  • ইলিয়াস হোসেন
  • ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৬:১৭

জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মেরকেল একজন খ্রিস্টান ধর্মগুরুর সন্তান। মেরকেল নিজেও একটি খ্রিস্টান দলের নেতা। তবে ইউরোপের অন্যান্য সরকারপ্রধানের মতো তিনি ইসলাম আতঙ্কে ভোগেননি। সিরিয়ার লাখ লাখ মুসলিমকে তিনি তার দেশে সম্মানের সঙ্গে আশ্রয় দিয়েছেন। বিপদে পাশে দাঁড়িয়েছেন তুরস্কের। ট্রাম্পের মুসলিম নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করে তিনি বলেছেন, সন্ত্রাসবাদ আর ইসলাম এক নয়।

গত ১৫ বছরে বিশে^র অনেক রাজনীতিক, বিশেষ করে পুরুষ শাসকরা একটি কঠিন শিক্ষা পেয়েছেন। আর তা হলো- অ্যাঞ্জেলা মেরকেলকে খাটো করে দেখো না। জার্মান চ্যান্সেলর চলতি বছরের শেষ দিকে ক্ষমতা ছেড়ে দিচ্ছেন। তবে বহু আগেই তিনি বিশে^ও অন্যতম সফলতম রাজনৈতিক নেতার মর্যাদায় ভূষিত হয়েছেন।

মেরকেল চ্যান্সেলর হিসেবে পাঁচজন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী, চারজন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এবং ইতালিতে সাতজন প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতায় দেখেছেন। স্থিতিশীল সরকারের দেশ যুক্তরাষ্ট্রেও চারজন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কাজ করেছেন মেরকেল।

বিশে^র চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জার্মানিকে সাফল্যের সঙ্গে নেতৃত্ব দিলেও মেরকেলকে প্রতিনিয়ত পরীক্ষা দিতে হয়েছে। অনেক নেতাই তাকে হিসেবের মধ্যে ধরতে চাননি। অনেক সরকারপ্রধান তো তাকে অপমানও করেছেন।

রাশিয়ার নেতা ভøাদিমির পুতিন একবার মেরকেলের সঙ্গে বৈঠকে ল্যাভরেডর কুকুর নিয়ে এসেছিলে। পুতিন জানতেন, মেরকেল কুকুরকে খুব ভয় পান। ইতালির সিলভিও বার্লুসকনি একবার তাকে ১৫ মিনিট বসিয়ে রেখে অন্যের সঙ্গে ফোনে খোশগল্প করেন। আর ডোনাল্ড ট্রাম্প তো তাকে মুখের ওপর স্টুপিড বলে গালি দেন।

২০০৫ সালে তিনি যখন জার্মানির প্রথম নারী চ্যান্সেলর হন তখন তাকে অনেকেই অনভিজ্ঞ ও অনাকর্ষণীয় বলে মনে করতেন। জার্মানির সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক বিল্ড তখন প্রথম পৃষ্ঠায় শিরোনাম করেছিল ‘মিস জার্মানি’। এমনকি তার দলেও তাকে ডাস মাডচেন বা জার্মান বালিকা বলে কটাক্ষ করা হতো।

তবে বিশ^ দেখেছে, অন্য দেশগুলোতে নেতারা আসছেন আর যাচ্ছেন কিন্তু মেরকেল ক্ষমতায় থেকে গেছেন। সেটা নির্বাচনে কোনো কারচুপি করে নয়, ঈর্ষণীয় জনপ্রিয়তার ওপর ভর করে। ডাস মাডচেন পরে পরিণত হন ডাই মুত্তি বা জাতির মাতা হিসেবে। তিনি জার্মানির স্থিতিশীল, সমৃদ্ধি ও শৌর্যবীর্যের প্রতীকে পরিণত হন।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জয়েস মুশাবেন বলেন, মেরকেল যখন প্রথম ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন বা সিডিইউ দলের নেতা নির্বাচিত হন তখন তাকে ক্ষণস্থায়ী বলে মনে করা হতো। তার অনেক পুরুষ প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করতেন কিছুদিন পরই তারা মারকেলকে বাদ দিয়ে একজন ভালো নেতা বেছে নেবেন। তারা মেরকেলের যোগ্যতাকে খাটো করে দেখেছিলেন।

সেই মেরকেল টানা ১৮ বছর সিডিইউর নেতৃত্ব দিয়ে স্বেচ্ছায় পদ ছেড়ে দিয়েছেন। তার পরে যিনি দলীয় প্রধান হন তিনি মাত্র একবছর তার পদে থাকতে পেরেছিলেন। সম্প্রতি আবার একজন নতুন নেতা নির্বাচন করেছে তার দল।

মেরকেলের জীবনীকার ও ইউনিভার্সিটি অফ মিসৌরি সেন্ট লুইসের তুলনামূলক রাজনীতির অধ্যাপক মুশাবেন বলেন, মেরকেলের সাফল্যের মূলে রয়েছে তার অনুপম অতীত ও তার যোগ্যতা। কমিউনিস্ট ইস্ট জার্মানিতে তিনি বেড়ে উঠেছিলেন একজন যাজক কন্যা হিসেবে। আবার তিনি কোয়ান্টাম কেমিস্ট্রিতে ডক্টরেট ডিগ্রিধারী বিজ্ঞানী। তাই তার সিদ্ধান্ত গ্রহণে থাকে ধর্মীয় নমনীয়তা আর জটিল হিসাবনিকাশ। জনগণ দেখেছে তিনি একজন সৎ রাজনীতিক। তিনি শুধু অহেতুক মাইক দখল করে কথার তুবড়ি ছোড়েন না। বরং তিনি তখনই থা বলেন যখন সত্যিই কথা বলার মোক্ষম সময় আসে। তিনি সেই সময় পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকেন।

ব্রাসেলসে গবেষণা প্রতিষ্ঠান জার্মান মার্শাল ফান্ডের সিনিয়র ফেলো করিনা হোর্স্ট বলেন, মেরকেল নতুন ধরনের একজন নেতা ছিলেন। তিনি ছিলেন সহানুভূতিশীল, স্থিতিশীল ও নির্ভরতার স্থল। জনগণ কোনো নেতার মধ্যে এসব গুণই দেখতে চান।

মেরকেল একজন অতুলনীয় বৈশি^ক ক্রাইসিস ম্যানেজার। এমনকি তার কট্টর সমালোচকরাও স্বীকার করেন যে সংকট সমাধানের ক্ষেত্রে মেরকেলের রয়েছে বিশেষ ক্ষমতা। তিনি এক দশক আগে বৈশি^ক অর্থনৈতিক মন্দার সময় জার্মানিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

ইউরোজোনের ঋণ সংকটের সময়ও তিনি ছিলেন অগ্রণী ভূমিকায়। এরপর এবার করোনাভাইরাসের সময়ও তিনি অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি একজন দক্ষ ডিল মেকার। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা তাকে শান্ত, প্রাজ্ঞ, কূটনৈতিক হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

মানুষ নারীদেরকে ইমোশনাল বা আবেগপ্রবণ মনে করে থাকে। কিন্তু মেরকেল তা নয়। বরং বরিস জনসন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প আবেগপ্রবণ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। মেরকেল মাঝে থেকে নেতৃত্ব দেন। তিনি সমঝোতায় বিশ^াসী। একজন বিজ্ঞানী হিসেবে তিনি বৈশি^ক জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে অনেক কঠোর পরিশ্রম করেছেন। তার প্রচেষ্টায় জলবায়ু চুক্তিতে সাক্ষর করেছে ধনী দেশগুলো।

মেরকেল সমঝোতার মাধ্যমে কাজ করতে চাইলেও মাঝে মাঝে কিন্তু একক সিদ্ধান্তও নিয়েছেন। আর এক্ষেত্রে প্রমাণিত হয়েছে তার সিদ্ধান্তই সঠিক ।

মেরকেল তার সব সহকর্মীর বিরুদ্ধে গিয়ে এককভাবে সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্তটি নিয়েছিলেন ২০১৫ সালে। তিনি সিরিয়া এবং বিশে^র অন্যান্য প্রান্তের শরণার্থীদের জন্য জার্মানির সীমান্ত খুলে দিয়েছিলেন।

মেরকেল বলেছিলেন, রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের অন্যদেশে আশ্রয় চাওয়ার অধিকার রয়েছেন। জার্মানবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, যেসব লোক যুদ্ধ থেকে বাঁচতে আমাদের কাছে আশ্রয় চায় আমরা তাদের ঠাই দিয়ে মানবতার পক্ষে গর্বিত হতে পারি। জার্মানি একটি শক্তিশালী দেশ। আমরা অনেক কিছু অর্জন করেছি। এখন আমরা তাদেরকে আশ্রয় দিতে পারি। আমরা যদি ব্যাংক রক্ষা করতে পারি তবে অসহায় মানুষকেও রক্ষা করতে পারব।

মুশাবেন বলেন, মেরকেলের ওই সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করেন মন্ত্রিসভার সদস্য ও পুলিশ কর্মকর্তারাও। কিন্তু তিনি কারও কথা শোনেনি। সীমান্ত খুলে দেওয়ার পর জার্মানিতে ৮-৯ লাখ সিরীয় মুসলিম আশ্রয় নেয়।

মেরকেলের রাজনৈতিক জীবনে এটা ছিল একটি সুদূরপ্রসারী সিদ্ধান্ত। করিনা হোর্স্ট বলেন, এটা ছিল সঠিক মানবিক কাজ। যেসব জার্মান নাগরিক শরণার্থীদের ভালোবাসেন তিনি তাদের হাতকেই শক্তিশালী করেন। অনেকে নিজ বাড়িতেও শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়। দেড় বছরের মধ্যে জার্মানিতে আশ্রয় পায় ১২ লাখ শরণার্থী। স্মরণকালের মধ্যে কোনো ধনী দেশ এতো অল্প সময়ের মধ্যে এতো বিপুল সংখ্যক শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়নি।

এতে অবশ্য মেরকেলকে সমালোচনাও কম শুনতে হয়নি। দেশটিতে হঠাৎ করে এতো বিপুল শরণার্থী ঢুকে পড়ায় শুরুতে কিছুটা সমস্যাও তৈরি হয়। উগ্র ডানপন্থী অভিবাসন বিরোধী রাজনৈতিক দল একে পুঁজি করে শক্তি সঞ্চার করে। এক পর্যায়ে মেরকেলের রাজনৈতিক জীবনও ঝুঁকিতে পড়ে। কিন্তু তিনি পিছু হটেননি।

আরও বিস্ময়ের ব্যাপার হলো সেই শরণার্থীদের প্রায় অর্ধেককে জার্মানিতে ফুলটাইম চাকরি দেওয়া হয়েছে। অন্যদের সরকারি ভাতা দিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বাকিরা পড়াশুনা করছে। শরণার্থীদের জার্মান সমাজের সঙ্গে অঙ্গীভূত করার জন্য তাদের ৮৫ শতাংশকে জার্মান ভাষা শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। অনেকে মাতৃত্ব ও পিতৃত্বকালীন ছুটি ভোগ করছেন।

মুশাবেন বলেন, ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়ার পর মেরকেল ভবিষ্যতে আর কোনো বড় দায়িত্বে যেতে চান না। তিনি রান্নাবান্নাসহ সাংসারিক কাজ করে বাকি জীবন কাটাতে চান।

মেরকেল শুধু জার্মানির নেতাই ছিলেন না, ছিলেন পুরো ইউরোপের। ইউরোপের বহু জটিল সংকটে তিনি ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। জার্মানিকে তিনি বিশে^র একটি বড় শক্তিতে পরিণত করেছেন। দ্বিতীয় বিশে^র পর এমন সুসময় আর জার্মানরা দেখেননি।

অক্সফোর্ড বিশ^বিদ্যালয়ের ইউরোপিয়ান হিস্ট্রির অধ্যাপক টিমোথি গার্টন অ্যাশ বলেন, মেরেকেলের বিদায়ে জার্মান ইতিহাসের একটি অত্যন্ত সু সময়ের সমাপ্তি ঘটবে।

সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৭ সালে ক্ষমতায় বসেই কয়েকটি মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিলে মেরকেল তার সমালোচনা করেন। তিনি বলেছিলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম, সন্ত্রাসের উৎস নয়। তিনি ওই নিষেধাজ্ঞায় ক্ষতিগ্রস্তদের তার দেশে আশ্রয়ের প্রস্তাব দেন।

ইউরোপের নেতারা যখন ইসলামকে শত্রুজ্ঞান করেন সেখানে মেরকেল স্পষ্ট করেই বলেছেন, ইসলাম জার্মানির অংশ। একথা বলে তিনি অনেক জার্মান নাগরিক ও রাজনীতিকদেও বিরাগভাজন হয়েছেন।

উদীয়মান শক্তি তুরস্কের বিরুদ্ধে ইউরোপের বেশিরভাগ খ্রিস্টানপ্রধান দেশ একাট্টা হলেও মেরকেল কিন্তু সেপথে হাটেননি। বস্তুত ইউরোপীয় ইউনিয়ন তুরস্কের বিরুদ্ধে অনেক পদক্ষেপ নিতে চেয়েও ব্যর্থ হয়েছে তার প্রচেষ্টায়। বিশ্লেষকরা বলছেন , জার্মানি তুরস্কের উত্থানকে বাস্তবতা বলে স্বীকার করে নিয়েছে।

গত কয়েক বছরে ট্রাম্প বিশে^র স্বৈরশাসকদের প্রধান মদতদাতা হয়ে উঠেছিলেন। সে সময় মেরকেল ছিলেন ব্যতিক্রম। তিনি মিশরের স্বৈরশাসক আবদেল ফাত্তাহ আল সিসিসহ কোনো স্বৈরাচারের সঙ্গেই মাখামাখি করেননি। তাদের কাউকে জার্মানিতে সফরেরও আমন্ত্রণ জানাননি। অথত গণতন্ত্রের জন্য মুখে ফেনা তোলা ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ সিসিসহ স্বৈরাচারদের বড় পৃষ্টপোষক হয়ে উঠেছেন। একই অবস্থা ব্রিটেনসহ ই্উরোপের অন্যান্য দেশের।

মেরকেলের বিশেষত্ব হলো গত ১৫ বছরে তার বিরুদ্ধে একটিও অনৈতিক কাজের অভিযোগ ওঠেনি। একটিও স্বজন পোষণের অভিযোগ নেই। এই আঠারো বছরে তিনি একবারের জন্যও টিভিতে বা কোনো জনসভায় নিজের কৃতিত্ব দাবি করেননি।

ক্ষমতার শিখরে থেকেও তার জীবন অনাড়ম্বরই ছিল। একটি সাধারণ নিজস্ব গাড়ি ছাড়া তার ব্যক্তিগত প্লেন, ইয়ট এমনকি বিলাসবহুল কোনো এপার্টমেন্ট বা বাড়ি নেই। তিনি একটি অতি সাধারন এপার্টমেন্টে থাকেন। অবিশ্বাস্য শোনালেও মার্কেলকে মানুষ একই পোশাকে আঠারো বছর ধরে দেখে এসেছে।

একটি সংবাদ সম্মেলনে একজন মহিলা সাংবাদিক জানতে চেয়েছিলেন, তার কি অন্য স্যুট নেই। মার্কেল উত্তরে বলেন, তিনি রাজনীতিবিদ, মডেল নন।

অন্য একটি সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক জানতে চান, তিনি এত ব্যস্ত, তার বাড়ির কাজ কে করেন? তার বাড়িতে কাজের লোক, রান্নার লোক আছে কি না। উত্তরে মার্কেল জানান, তার বাড়িতে একজন মহিলা এবং একজন পুরুষ কাজের লোক আছে। মহিলাটি তিনি নিজে এবং পুরুষটি তার স্বামী।

সাংবাদিকেরা জানতে চান, তাদের জামা কাপড় কে ধোয়? তিনি না তার স্বামী? মার্কেল জানান, তিনি জামা কাপড় ওয়াশিং মেশিনে ঢোকান, সাবানের গুড়ো ঢেলে দেন। তার স্বামী মেশিন চালান। তারা রাতে ওয়াশিং মেশিন চালান, কারন এই সময় বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকে। এ সময় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, এ সব অবান্তর প্রশ্ন না করে সংবাদ মাধ্যম যেন তার সরকারের সাফল্য এবং ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন করে।

চলতি বছর শেষেই অন্তরালে চলে যাবেন বিশ^নন্দিত রাষ্ট্রনায়ক মেরকেল। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ^কে তিনি বহুকাল প্রভাবিত করতে থাকবেন।