বদলে যাচ্ছে প্রাচ্যের প্রাচীন শহর বেইজিং

পাখির চোখে বেইজিং - ইন্টারনেট

  • শাহ মুহাম্মদ মোশাহিদ
  • ২৬ জুন ২০২০, ২২:৩২

পাখির চোখে তাকালে মনে হতে পারে বিশাল এক ড্রাগন, লেজ বিছিয়ে আগলে রেখেছে প্রাচ্যের এই জনপদ। জনপদের নাম চীন। আর ওই ড্রাগনটা চীনের মহাপ্রাচীর। মঙ্গোলিয়ান যাযাবরদের উৎপাৎ থেকে চীনকে রক্ষা করতেই তৈরি করা হয়েছিলো আশ্চর্য্য এই প্রাচীর।

প্রাচীরের একপাশে যাযাবর, অন্যপাশে সভ্যতা। এই সভ্যতা একদিনে গড়ে উঠেনি। তখন চীন ছিলো টুকরো টুকরো। সামন্ত শাসকেরা শাসন করতেন। একটা সময় সবটা এলাকা নিয়ে গড়ে উঠে সাম্রাজ্য। তার পর থেকে টুকরো দেয়ালগুলোও জোড়া লাগতে শুরু করে। দাঁড়িয়ে যায় মহাপ্রাচীর। যা সম্রাটদের সুরক্ষার প্রতীক হয়ে আজও টিকে আছে।

দীর্ঘ প্রাচীরের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ বাদালিং এলাকায়। বাদালিং থেকে মাইল পঞ্চাশেক দূরেই প্রাচীন নগরী বেইজিং। শহরটি এখন গোটা চীনের রাজধানী। পৃথিবীর ক্ষমতাধর একটি রাষ্ট্রের সকল সিদ্ধান্ত এই শহর থেকেই নেওয়া হয়। তিন হাজার বছরেরও পুরনো শহর বেইজিং। উত্তর ও পশ্চিমে ইয়ানশান ও সিশান পর্বতমালা। এর পাশেই ত্রিভুজ আকৃতির সমতল বসতি। এই বসতির সবটাজুড়েই ইতিহাস। ধারণা করা হয় খৃস্টের জন্মের ১০৪৫ বছর আগে চীনের চৌ রাজবংশ এই শহরটির প্রতিষ্ঠা করেন।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই শহরটি রাজনীতির কেন্দ্র হয়ে উঠে। বেশ কয়েকবার রাজধানী সরে গেছে বেইজিং থেকে। ফিরেও এসেছে বারবার। ইতিহাসের সেই গান এখনো গাইছে বেইজিং। তবে সময়কে অস্বীকার করে নয়। ২০০৮ সালে অলিম্পিক আয়োজনকে কেন্দ্র করে দ্রুত খোল-নলচে পাল্টে ফেলেছে শহরটি। এখন বেইজিংজুড়ে পাশ্চাত্যের চাকচিক্য দেখা যায়। ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মিশেলে বেইজিং এক মোহনীয় নগরী।

আধুনিকতায় উতলা হলেও সমৃদ্ধ ইতিহাসকে যত্নে রেখেছে বেইজিং। এই শহরের ভেতর আছে আরো একটি প্রাচীন শহর, যার নাম নিষিদ্ধ শহর। যেখান থেকে চীনের সম্রাটরা সাম্রাজ্য পরিচালনা করতেন। বড় এলাকা নিয়ে নির্মিত এই শহরে কেবল সম্রাট এবং তার অনুমোদিত লোকেরা যাতায়াত করতে পারতেন। বাকি সবার জন্য ছিলো নিষিদ্ধ। এ কারণেই এলাকাটিকে ডাকা হয় ‘নিষিদ্ধ শহর’ নামে। সমাজতান্ত্রিক সরকার আসার পর নিষিদ্ধ শহর পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু তারপরও কয়েকটি গোপন কামরা নিষিদ্ধই রয়ে যায়। এই কামরাগুলো নিয়ে এখনো রয়ে গেছে রহস্য।
নিষিদ্ধ শহরটি সবার কাছে পরিচিত ‘ফরবিডেন সিটি’ হিসেবে। এই এলাকার আয়তন ১৮০ একর। মিং রাজবংশের ইয়ংলি সম্রাট ১৪০৬ সালে এ শহরের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। মূল কাজ শেষ করতে সময় লাগে ১৪ বছর। এরপর, প্রায় ৫০০ বছর এটিই ছিলো চীনের রাজধানী। এ সময়ে এই ‘নিষিদ্ধ’ শহরটিতে থেকেছেন ২৪ জন সম্রাট।

এই শহরে রয়েছে ৯৮০টি বাড়ি। ধারণা করা হয়, এসব বাড়িতে রয়েছে ৯, ৯৯৯টি কক্ষ। তবে কক্ষের প্রকৃত সংখ্যা নিয়েও রয়েছে রহস্য। কাঠ দিয়ে তৈরি হওয়া এ বাড়িগুলোর নির্মাণ কৌশল নিয়েও রহস্য রয়েছে। গত ৫০০ বছরে চীনে ঘটে যাওয়া ছোট-বড় সব ভূমিকম্পকে ঠেকিয়ে দিয়ে মাথা উঁচু করে রয়েছে এই বাড়িগুলো।

ধারণা করা হতো, মিং রাজবংশের শিল্পী কুয়াই জিয়ঙ এই শহরের নকশাকার। কিন্তু, সাম্প্রতিক তথ্যে বলা হচ্ছে, এর প্রকৃত নকশাকার হলেন কাই জিন নামের অন্য একজন।

শহরটির বাড়ি ও আঙিনার মাপগুলো অবাক করছে গবেষকদের। বাড়িগুলো যত বড় বা ছোটই হোক না কেন এর দৈর্ঘ্য-প্রস্তের মাপের হার ৬:১১। আঙিনাগুলোর মাপও এমনই। এছাড়াও, বাড়িগুলোর ছাদে, দেয়ালে ও বিভিন্নস্থানে ব্যবহৃত ফিনিক্স, ড্রাগন ও অন্যান্য পৌরাণিক জীব-জন্তুর প্রতিকৃতি বা ভাস্কর্য নিয়েও রহস্য রয়েছে। এগুলো ব্যবহার করা হয়েছে প্রতীক হিসেবে। প্রাচীন চীনে প্রতীকের ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসব প্রতীকের মধ্যে অনেক দিক-নির্দেশনা দেওয়া থাকে।

১৯১২ সালে চীনে রাজবংশের পতনের পর শহরটিকে জাদুঘর হিসেবে ঘোষণা করা হয় ১৯২৫ সালে। সমৃদ্ধ ইতিহাসের এই ‘নিষিদ্ধ শহর’-টি এখন ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য।

বেইজিং পৃথিবীর ব্যস্ততম শহর হিসেবেও পরিচিত। প্রতিদিন ঘড়ি দেখে কাজে যাওয়া, আবার ঘড়ি দেখে বাড়ি ফিরতে অভ্যস্ত বাসিন্দারা। নিয়মানুবর্তিতায় চীন দেশের সুনাম আছে। দেশটির রাজধানী বেইজিংয়ের লোকেরাও এর বাইরে নন।
বেইজিংকে তারা ডাকেন ‘পেইচিং’ বলে। ‘পেইচিং’ মানে উত্তরের রাজধানী। গোটা চীনকে উত্তর ও দক্ষিণ, দুই ভাগে আলাদা করা হয়। মাঝখানে ইয়াংশ নদী। এই নদীর উত্তর দিকটার রাজধানীই ছিলো বেইজিং। এখন গোটা চীন দেশের রাজধানী।

বেইজিং শহরটিকে চীনের একটি প্রদেশের মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে প্রশাসনিকভাবে এই প্রদেশটি নিয়ন্ত্রণ করে কেন্দ্রীয় সরকার। স্থানীয় পৌরসভার প্রশাসক ও ক্ষমতাসীন দলের শহরপ্রধান বেইজিংকে দেখভাল করেন।

বেইজিং মহানগরীর ভেতরেও আছে গ্রাম। সবটা শহর নয়, আবার সবটা গ্রামও নয়। গ্রামে আছে আলাদা কৃষিব্যবস্থা। এই প্রদেশের গ্রামগুলোতে কৃষক যেসব ফসল ফলায়, সেগুলোই শহরের চাহিদা মেটায়। মহানগরীর মধ্য দিয়ে কয়েকটি নদী বয়ে গেছে। এসবের মধ্যে ছাওপাই ও ইউংতিং বড় দুটি নদী। প্রাদেশিক মর্যাদায় বেইজিং মহানগরী ১৬টি শহুরে, উপশহুরে এবং গ্রামীণ জেলা নিয়ে গঠিত। এদের মধ্যে চারটি শহুরে, চারটি উপশহুরে এবং আটটি গ্রামীণ জেলা। উপশহরগুলি এখন ঝকমকে হয়ে উঠার পাল্লা দিচ্ছে।

মূল বেইজিং শহরের আয়তন ৪৫৬৭ বর্গকিলোমিটার। মহানগর এলাকার আয়তন ১৬৪১১ বর্গকিলোমিটার। আয়তনের দিক থেকে এটি চীনের ৪র্থ বৃহত্তম মহানগর এলাকা। বিশ্বের রাজধানী শহরগুলির মধ্যে এটিই সবচেয় জনবহুল শহর। ২০১৭ সালের হিসাবে বেইজিং মহানগরে বাসিন্দার সংখ্যা ২ কোটি ১৭ লাখ। শহরের প্রায় ৯৫ শতাংশ লোক হান চীনা জাতিভুক্ত। এই শহরের ৮৭ শতাংশ বাসিন্দা চৈনিক লোকধর্মে বিশ্বাসী। এছাড়া ১০ শতাংশ বাসিন্দা বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাসী।

বেইজিংয়ের জনজীবন ঘড়ির কাঁটার সাথে বাঁধা। কাজ আর কাজের মধ্যেই ডুবে থাকেন বাসিন্দারা। তবে এই কাজের জন্য, আর বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করতে হয় আবহাওয়ার সাথে।

মোটা দাগে বেইজিং দুই ঋতুর শহর। একটি শীত, অন্যটি গ্রীষ্ম। শীত মানে কনকনে শীত। গাছের পাতা ঝরে যায়, প্রকৃতি ধূসর হয়। জনজীবনে নেমে আসে বিভীষিকা। তাপমাত্রা কখনো মাইনাস ডিগ্রিতেও নেমে যায়। কখনো উত্তর থেকে বয়ে যায় হিম বাতাস, ধূলিঝড়। বাতাসের ঢেউয়ে পাতাঝড়া গাছে করুন শব্দ বাজে, মনে ভর করে বিষণ্নতা। শীতে ঘরের বাইরে বের হতে হলে লড়াই করতে হয় বাসিন্দাদের। তবে ঘরের ভেতরে থাকে হিটারের ব্যবস্থা। সরকারিভাবেই এই ব্যবস্থা করা হয়। ঘরে উম, বাইরে কনকনে শীত। ঘর ছেড়ে বেরুতে হলে গায়ে দিতে হয় পরতের পর পরত পোশাক।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী মার্চের পনেরো তারিখে হিটিং বন্ধ হয়ে যায়, তখন মাসখানেক সময় অস্বস্তিতে কাটাতে হয়, কখনো কখনো মার্চ মাসেও তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্রিতে নেমে আসে। তবে এই দুঃসময় বেশিদিন থাকে না।

বেইজিং থাকে এপ্রিলের অপেক্ষায়। এপ্রিল এলেই চেহারা পাল্টে ফেলে এই শহর। হয়ে উঠে উচ্ছ্বল। গাছে গাছে গজাতে থাকে সবুজ পাতা। প্রকৃতি উষ্ণ হয়। ফুল ফুটে। আর বেইজিংজুড়ে শুরু হয় বসন্তের উৎসব। উৎসবটা শুরু হয়ে যায় শীতের মধ্যেই, অনেকটা জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির দিকে। তবে প্রকৃত বসন্ত আসে এপ্রিলেই। শীত-আর গরমের মাঝামাঝি আবহাওয়ায় বেইজংয়ে ফুটে চেরি ফুল। হ্রদগুলো সাজে পদ্ম দিয়ে। মানুষের মুখে হাসি খুলতে থাকে। ট্রেনে, সড়কে, বাসে দেখা যায় জীবনের গতি। শহরের লেকগুলোর বরফ গলতে থাকে। প্রবাহিত হয় স্বচ্ছ ধারায়।

প্রাচ্যের প্রাচীন শহর বেইজিং বদলে যাচ্ছে দ্রুত। প্রাচীন চিহ্নগুলোকে ধরে রাখলেও পাশ্চাত্যের আধুনিকতা শহরটিকে পাল্টে দিচ্ছে। বিশেষ করে অলিম্পিক আয়োজন উপলক্ষ্যে শহরটির চাকচিক্য বাড়তে থাকে। ২০০৮ সালে বেইজিংয়ে আয়োজন হয় গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ অলিম্পিক।

একটা সময় বেইজংজুড়ে ছিলো বাইসাইকেলের ছড়াছড়ি। এখনো আছে, তবে দামি গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। সমাজতান্ত্রিক এই দেশটির অর্থনীতিকে বলা হয় সমাজতান্ত্রিক বাজার অর্থনীতি। একে অন্যভাবে বলা যায়, ‘পুঁজিবাদের ঘুড়ি যত উপরেই উঠুক সেটা নিয়ন্ত্রিত হবে সমাজতান্ত্রিক লাটাইয়ে’। পুঁজিবাদের স্পর্শে এসে পাল্টে যাচ্ছে সমাজতান্ত্রিক বেইজিংয়ের চিত্র। এই নগরে এখন চকচকে দালান আর বড় বড় বিপণি বিতান। কিছু কিছু বিতানে মার্সিডিজ গাড়ি থেকে শুরু করে আলপিন পর্যন্ত পাওয়া যায়।

চীনের গ্রেট ওয়াল- ইন্টারনেট
চীনের গ্রেট ওয়াল- ইন্টারনেট

 

বেইজিংয়ের বড় বিপণী পল্লী ওয়াং ফু চিং। পল্লীর সামনে প্রশস্ত সড়ক, আধুনিক দোকানপাট। একটা সময় এখানে গাছের ছায়াও ছিলো। তবে পাশ্চাত্যের চাকচিক্যের সাথে পাল্লা দিয়ে গাছগুলো টিকতে পারেনি। নতুন করে গাছ লাগানো হয়েছে, কিন্তু এখনো ছায়া তৈরি হয়নি।

ওয়াং ফু চিং সড়কের একটু দূরেই ঐতিহাসিক ‘থিয়েন আন মেন চত্বর’। বিশাল প্রান্তর, এটি পৃথিবীর বৃহত্তম চত্বরগুলোর একটি। এখানে প্রতি সকালে সামরিক কুচকাওয়াজের তালে লাল পতাকা তোলা হয়। আবার সন্ধ্যায় কুচকাওয়াজের মধ্য দিয়েই পাতাকা নেমে যায়। এই দৃশ্য দেখার জন্য সমাগম হয় অনেক লোকের।

একশ পঞ্চাশ কোটি লোকের রাজধানী বেইজিং। রাজধানীতে বাস করছে দুই কোটিরও বেশি মানুষ। শহরজুড়ে ছড়িয়ে আছে নানা প্রাচীন স্থাপনা। আবার আধুনিক যুগেও গড়ে উঠেছে নয়নাভিরাম স্থাপত্যকর্ম। সুপ্রাচীন রাজপ্রাসাদ ‘নিষিদ্ধ শহর’ ছাড়াও এখানে আছে ‘সামার প্যালেস’, ‘টেম্পল অব হ্যাভেন’। এর পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে পাখির নীড় স্টেডিয়াম (বার্ড নেস্ট), ন্যাশনাল গ্র্যান্ড থিয়েটার, সিসিটিভি টাওয়ার; এছাড়া পুরনো আমলের কলোনিগুলো ভেঙে সব অত্যাধুনিক অ্যাপার্টমেন্ট গড়ে উঠেছে নগরজুড়ে। তবে প্রাচীন দর্শনীয় স্থাপনাগুলোও রক্ষা পেয়েছে। এর একটি হলো হুটং পাড়া।

বেইজিংয়ের হুটং পাড়াকে অনেকটা পুরান ঢাকার সঙ্গে তুলনা করা যায়। আধুনিক শহরের ভেতর প্রাচীন এক শহর ‘হুটং পাড়া’। শুধু স্থাপত্য নয়, চাল-চলন ও সংস্কৃতিতেও পুরনো ধাঁচ ধরে রেখেছে এই পাড়াটি।

‘হুটং’ শব্দটি চীনা ভাষার নয়। এসেছে মঙ্গোলীয় ‘হোটগ’ শব্দ থেকে। এর অর্থ পানির কূপ। প্রায় সাতশ বছর আগে মঙ্গোলিয় যোদ্ধা চেঙ্গিস খানের নাতি সামরিক বাহিনীর প্রধান কুবলাই খান চীন দখল করেন। ১২৭১ থেকে ১৩৬৮ সাল পর্যন্ত তিনি নিজেকে সম্রাট দাবি করে রাজবংশ কায়েম করেন। তখন বাড়ি তৈরি করার জন্য কুবলাই খান তার আশপাশের গণ্যমান্য, বিশিষ্ট ব্যক্তি ও সামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তঅদের জমি বরাদ্ধ করেন। তারা এখানে পানির ক’প তৈরি করেন। ক’পের চারদিকে চারকোনো জায়গায় আঙিনাসহ বাড়ি তৈরি করেন। একেকটি বাড়িতে এক চিলতে উঠানের চারপাশে চারটি ঘর তৈরি করা হয়। বাড়ির অন্দরের এই উঠানের ঐতিহ্য কিছুটা আমাদের দেশের গ্রাম এলাকার বাড়ির মতো।

হুটং পাড়ার কলেবর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। পরে চিং রাজতন্ত্রের পতনের পর থেকে ১৯৪৯ সালের শুরু পর্যন্ত এই পাড়ায় তিন হাজার হুটং ছিল। গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার পর বেইজিং শহরের আয়তন বাড়ানোর সময় এর সংখ্যা দাঁড়ায় ছয় হাজারে। পরে আধুনিকতার চাপে হুটংয়ের সংখ্যা কমতে থাকে। গত শতকের নব্বইয়ের দশকে বেইজিংয়ে জনসংখ্যার চাপ মেটাতে অনেক হুটং বাড়ি নষ্ট করা হয়েছে। যারা এখনো টিকে আছেন, তারা ভিটেছাড়া হওয়ার আতঙ্ক বয়ে বেড়াচ্ছেন।

হুটং পাড়ায় যেতে হলে পায়ে হেঁটে অথবা বাই সাইকেল কিংবা রিকশায় যেতে হবে, বড় গাড়িতে করে যাওয়ার সুযোগ নেই। অনেকটা পুরান ঢাকার গলি-ঘুঁপচির মতো। পুরনো, মলিন বাড়িগুলো একেকটি আঙিনা ঘিরে সাজানো। কিছু কিছু বাড়িতে নীল রঙের বোতাম আঁকা থাকে। যার বাড়ির সামনে যত বেশি বোতাম থাকবে, বুঝে নিতে হবে তিনি তত বেশি প্রতাপশালী। নীল রঙের এই বোতমাগুলো মর্যাদার প্রতীক।

এই পাড়ার লোকেরা বেইজিংয়ে থেকেও অনেকটা আলাদা সম্প্রদায়। বয়স্করা পাড়া ছেড়ে বাইরে যেতে চান না। আধুনিকতা থেকে দূরে থাকতেই পছন্দ করেন। তবে বাইরে থেকে অনেক পর্যটক তাদের কাছে আসেন। পর্যটকদের আসা-যাওয়ায় তাদের অর্থনীতির চাকায় গতি এসেছে।

শিল্পকলাতেও সমৃদ্ধ শহর বেইজিং। শহরের অনেক পরিত্যক্ত কারখানাকে সাজিয়ে গুছিয়ে একেকটি ‘আর্ট জোন’ বানানো হয়ে। এই জোনগুলোই শিল্পকলার প্রাণ। আছে প্রচুর গ্যালারিও। বেইজিং গীতিনাট্য সারা বিশ্বে চীনকে তুলে ধরছে।

বিডিভিউজ-এ প্রকাশিত লেখার স্বত্ব সংরক্ষিত। তবে শিক্ষা এবং গবেষণার কাজে সূত্র উল্লেখ করে ব্যবহার করা যাবে