ডিফেন্স বুলেটিন

পারমানবিক বোমা বহনকারী রাশিয়ার কৌশলগত বোমারু বিমান টিইউ-৯৫ - মিলিটারিফ্যাক্টরি ডটকম

  • মেহেদী হাসান
  • ২১ জুন ২০২০, ২৩:১২

এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুইবার যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কার কাছে অভিযান পরিচালনা করেছে পারমানবিক বোমা বহনকারী রাশিয়ার কৌশলগত বোমারু বিমান টিইউ-৯৫। এসময় এন কাউন্টারে লিপ্ত হয় যুক্তরাষ্ট্রের এফ-২২ র‌্যপটর যুদ্ধ বিমান। বিশ্বব্যাপী পারমানবিক বোমা মজুদের পরিমান কমেছে ২০১৯ সালে। তবে পারমানবিক বোমার মজুদ বেড়েছে ইসরাইলের। বিডি ভিউজ ইনফোটেইনমেন্টে স্বাগত জানাচ্ছি আমি তাসনিম হোসাইন। আজ আমরা প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বেশ কিছু খবর ও বিশ্লেষন জানাবো।

এক সপ্তাহের মধ্যে দুইবার যুক্তরাষ্ট্রের আকাশ সীমার কাছাকাছি অভিযান পরিচালনা করেছে রাশিয়ার টুপোলেভ টিইউ-৯৫ বোমারু বিমান। এ অভিযান পরিচালনার সময় যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী এফ-২২ র‌্যাপটর অতি কাছাকাছি উড়ে অভিযান পরিচালনায় বাধা দেয়ার চেষ্টা করে।

সর্বশেষ ১৬ জুন রাশিয়ার কৌশলগত পারমানবিক বোমা বহনে সক্ষম টিইউ-৯৫ বমার আলাস্কা থেকে ৩২ নটিক্যাল মাইল দূরে আন্তর্জাতিক আকাশ সীমায় অভিযান পরিচালনা করে। কয়েকটি টি টিইউ-৯৫ বমারের সাথে এসময় রাশিয়ার আরো কয়েকটি শক্তিশালী যুদ্ধ বিমান এসইউ-৩৫ এবং এ-৫০ বিমান অংশ নেয়। নর্থ আমেরিকা এরোস্পেস ডিফেন্স কমান্ড এ তথ্য জানিয়েছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয় এ অভিযানের ভিডিও প্রকাশ করেছে। ভিডিওতে দেখা যায় রাশিয়ার বিমানের অতি কাছাকাছি এসে যুক্তরাষ্ট্রের এফ-২২ র‌্যাপ্টর এনকাউন্টারে অংশ নেয়।

এর আগে ১০ জুন রাশিয়ার ৪টি টিইউ-৯৫ বমারের সাথে আলাস্কার কাছে অভিযান পরিচালনা করে আরো কয়েকটি যুদ্ধ বিমান। ১৫ জুন রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয় প্রকাশিত আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায় বাল্টিক সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের বি-৫২ বমার মহড়া পরিচালনার সময় তাতে রাশিয়ার এসইউ-২৭ বাল্টিক এনকাউন্টার করে। সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন , যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার এ মহড়া ও এনকাউন্টার রুটিন কাজের অংশ হলেও দুই দেশ একে অপরের হুমিক মোকাবেলায় প্রস্তুত সেটাই প্রদর্শন করা হলো।

বিশ্বব্যাপী ২০১৯ সালে কমেছে পারমানবিক বোমার মজুদের পরিমান কিন্তু বেড়েছে ইসরাইলের পারমানবিক বোমার সংখ্যা। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্স ইনস্টিটিউট গত ১৫ জুন প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাপী পারমানবিক বোমা বিষয়ে তাদের বার্ষিক প্রতিবেদন। আসুন আমরা জেনে নেই এই প্রতিবেদনে পারমানবিক বোমা সংক্রান্ত কী ধরনের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্স ইনস্টিটিউটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ২০১৯ সালের শেষে ৯টি দেশের কাছে ১৩ হাজার ৪০০ পারমানবিক বোমা মজুদ রয়েছে। এ সংস্থার আগের প্রতিবেদনে এ সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছিল ১৩ হাজার ৮৬৫টি।

বর্তমানে মজুদ ১৩ হাজার ৪০০ বোমার মধ্যে ৫ হাজার ৫২০টি পারমানবিক বোমা মোতায়েন অবস্থায় রয়েছে। মোতায়েনকৃত বোমার মধ্যে হাই অপারেশন এলার্ট অবস্থায় রয়েছে। এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ২০১৯ সালে পারমানবিক বোমার মজুদের পরিমান কমলেও শীঘ্রই বিশ্বব্যাপী এ বোমার মজুদের পরিমান ব্যাপক আকারে বেড়ে যাচ্ছে। কারন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ পারমানবিক বোমার মজুদ বৃদ্ধি এবং আধুনিকায়নের ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করেছে।

গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদনের সূত্র উল্লেখ করে মিডল ইস্ট আইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে পারমানবিক বোমার মজুদ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করেছে ইসরাইল। গত ১ বছরে তারা ১০টি নতুন পারমানবিক বোমা তৈরি করেছে। ২০১৯ সালে ইসরাইলের কাছে ৮০ট পারমানবিক বোমা মজুদ ছিল। বর্তমানে তাদের এ বোমা মজুদের পরিমান ৯০টি হয়ে থাকতে পারে।

স্টকহোম পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউটের প্রতিবেদনে ইসরাইলকে বিশ্বের নবম পারমানবিক বোমার দেশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ইসরাইলের কাছে ৯০টি পারমানবিক বোমা থাকতে পারে। তবে প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে।

ইসরাইল সরকারিভাবে তাদের পারমানবিক বোমার কথা জানায় না। ইসরাইল তাদের কাছে পারমানবিক বোমা থাকার কথা সরকারিভাবে স্বীকার করে না। আবার বোমা থাকার কথা অস্বীকারও করে না। এছাড়া ইসরাইলের কাছে ৩০টি পারমানবিক বোমা রয়েছে যা এফ-১৬১ যুদ্ধ বিমান থেকে নিক্ষেপ করা সম্ভব। ৫০টি পারমানবিক বোমা রয়েছে যা ভ‚মি থেকে ব্যালিস্টিক মিসাইল থেকে ছোড়া সম্ভব। আর এর পাল্লা ৫ হাজার ৫শ কিলোমিটার। ইসরাইলের কিছু এফ-১৫ বিমান থেকেও এ বোমা নিক্ষেপ করা সম্ভব । তবে এ তথ্যের সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি বলে জানায় গবেষনা প্রতিষ্টানটি। ইসরাইলের এ পারমানবিক অস্ত্র কোথায় রাখা হয়েছে তাও অজানা।

যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইলের প্রকাশিত তথ্য অনুসারে ইসরাইল ১৯৬০ এর দশকের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় পারমানবিক বোমা তৈরির কর্মসূচী গ্রহণ করে বলে উল্লেখ করেছে স্টকহোম পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউট। অনেকের মতে ইসরাইলের কাছে এই প্রতেবদেন প্রকাশিত সংখ্যার চেয়ে বেশি পারমানবিক বোমা রয়েছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর সায়েন্স এন্ড ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটির ২০১৫ সালে জানায় ইসরাইল কমপক্ষে ১১৫টি পারমানবিক বোমা তৈরি করেছে।

স্টকহোম পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী পারমানবিক বোমা মজুদের সংখ্যা কমার কারন হলো যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া তাদের কিছু বোমা অকার্যকর করেছে। একই সাথে এ দেশ দুটি তাদের পুরনো অকার্যকর করা বোমার জায়গায় নতুন বোমা তৈরি এবং আধুনিকায়নের কর্মসূচী নিয়েছে।

স্টকহোম পিস রিসার্চ ইন্সটিউিটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে চীন ভারত পাকিস্তানও পারমানবিক বোমা বৃদ্ধির কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে শীঘ্রই বিশ্বব্যাপী বেড়ে যাবে পারমানবিক বোমা মজুদের পরিমান। শক্তিশালী দেশগুলোর ব্যাপকভিত্তিক পারমানবিক বোমার মজুদ বৃদ্ধি ও আধুনিকায়ন কর্মসূচীর ফলে অকার্যকর হয়ে যাবে পারমানিবক অস্ত্র হ্রাস চুক্তি।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র পারমানবিক অস্ত্র আধুনিকায়ন এবং সম্প্রসারন কর্মসূচী ঘোষণা দিয়েছে। নতুন একটি পারমানবিক বোমা তৈরিও করেছে দেশটি। নতুন এ বোমা এ বছরের শুরুতে সাবমেরিনে মোতায়েন করেছে । এরপর যুক্তরাজ্য সম্প্রতি তাদের পারমানবিক কর্মসূচী আধুনিকায়নের ঘোষণা দিয়েছে। স্টকহোম পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাছে যে পরিমান পারমানবিক বোমা রয়েছে তার ৯০ ভাগ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার কাছে।

এই গবেষণা সংস্থার তথ্য অনুসারে রাশিয়ার কাছে সবচেয়ে বেশি তথা ৬ হাজার ৭৩৫টি পারমানবিক বোমা রয়েছে। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের কাছে রয়েছে ৫ হাজার ৮০০টি পারমানবিক বোমা। রাশিয়ার ১ হাজার ৫৭০ টি পারমানবিক বোমা মোতায়েন অবস্থায় রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মোতায়েনকৃত পারমানবিক বোমার সংখ্যা ১ হাজার ৭৫০টি।

এ ছাড়া চীনের কাছে ৩২০টি, ফ্রান্সের কাছে ২৯০টি, যুক্তরাজ্যের কাছে ২৫০টি, পাকিস্তানের কাছে ১৬০টি, ভারতের কাছে ১৫০টি এবং উত্তর কোরিয়ার কাছে ৩০ থেকে ৪০টি পারমানবিক বোমা থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

লকডাউনে ভারতের প্রতিরক্ষা কোম্পানী হারিয়েছে ৩ বিলিয়ন ইউএস ডলার। ২৪ মার্চ থেকে ৩১ মে সময়কালে ভারতের বিভিন্ন প্রতিরক্ষা কোম্পানি এ ক্ষতির শিকার হয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের একজন কর্মকর্তার বরাতে এ তথ্য প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ডিফেন্স নিউজ অনলাইন।

লকডাউনের কারনে ভারতের বিভিন্ন প্রতিরক্ষা শিল্পে বিদেশী মালামালের যোগান বন্ধ হয়ে গেছে। করোনার কারনে আরো প্রায় এক বছর বিদেশী মালামালের এ যোগান বন্ধ থাকতে পারে। ফলে আরো বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে ভারতের প্রতিরক্ষা কোম্পানীগুলো। ভারতের তৈরি প্রতিটি অস্ত্রের ১০ থেকে ২০ ভাগ মালামাল আসে বিদেশ থেকে।

লকডাউনের কারনে ভারতে ১০০ বড় এবং প্রায় ৪ হাজার মাঝারি ও ছোট প্রতিরক্ষা ব্যবসা ক্ষতির মুখে পড়েছে। ভারতে বেসরকারি সমরাস্ত্র শিল্প তেমন শক্তিশালী নয়। তবে সম্প্রতি বেসরকারি সমরাস্ত্র খাত খাত উন্নয়নে গুরুত্ব দেয়া হলেও করোনার কারনে তা বড় ধরনের বাধার মুখে পড়েছে।

করোনার সময়ে ভারত বড় আকারের প্রতিরক্ষা হুমকির মুখে পড়েছে। চীন-ভারত সীমান্তে দুই দেশের সৈন্যদের সংঘর্ষে ২৩ জন সেনা প্রান হারিয়েছে। এরপর থেকে চীনকে মোকাবিলায় ভারতের আভ্যন্তরিন চাপ বাড়ছে। করোনার সময়ে ভারতের এই প্রতিরক্ষা হুমকি দেশটিকে নাজুক অবস্থায় ফেলেছে। এছাড়া করোনার কারনে দেশটির অর্থনীতি বড় ধরনের চাপের মুখে রয়েছে।

প্রতিবেদনটির ভিডিও দেখুন

বিডিভিউজ-এ প্রকাশিত লেখার স্বত্ব সংরক্ষিত। তবে শিক্ষা এবং গবেষণার কাজে সূত্র উল্লেখ করে ব্যবহার করা যাবে