তালেবানের কারাগার থেকে ফিরে

যুদ্ধসাংবাদিক ইভন রিডলে - সংগ্রহ

  • শাহ মুহাম্মদ মোশাহিদ
  • ২৬ মে ২০২০, ২২:৪৭

ইভন রিডলে, একজন যুদ্ধসাংবাদিক। যুদ্ধ কাভার করার আগে তার দিন কাটছিলো অন্য আট-দশজন সাংবাদিকের মতোই। সংবাদের খোঁজ, তদন্ত এবং সংবাদ তৈরি করা। তারপর হেডকোয়ার্টারে জমা দেওয়া। কখনো কখনো সোর্সদের সঙ্গে অভিনয় করতে হয়েছে। রেস্তোরায় যেতে হয়েছে বারবনিতা সেজেও।

এ নিয়ে রিডলির মায়ের অভিযোগের শেষ নেই। তিনি চাইতেন তার কন্যা এমন কোনো কাজ করুক, যার মাধ্যমে সম্মান ধরে রাখা যায়। কিন্তু সাংবাদিকতার নেশা একবার যাকে ধরেছে, তা ছাড়িয়ে নেওয়া কঠিন।

রিডলিও ছাড়াতে পারতেন না। চেষ্টাই করেননি। আসলে এমন রোমাঞ্চকর জীবন তিনি উপভোগ করেন।
সাংবাদিকতা জীবন শুরু করার আগে তিনি স্থানীয় প্রতিরক্ষা বিভাগে কাজ করেছেন কিছুদিন। সেই জীবনটাও ছিলো রোমাঞ্চকর। মূলত ছোটবেলা থেকেই রোমাঞ্চের সঙ্গেই ছিলেন এই নারী।

যে যেভাবে জীবন কাটাতে চায়, তার জীবন সেভাবেই কাটে। প্রচলিত এই কথাটি অক্ষরে অক্ষরে সত্য হয়েছে রিডলের বেলায়।

হুম, একটা দিন ঘুরিয়ে দিলো তার জীবন। রিডলির সামনে এসে দাঁড়ালো মহা রোমাঞ্চকর এক সময়। দিনটা ছিলো ১১ সেপ্টেম্বর, ২০০১। সারা পৃথিবীর রাজনীতি উলট-পালট হয়েছিলো এই দিনে। নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে আঘাত হেনেছিলো দুইটি বিমান। দেখতে দেখতেই ধুলির মতো গড়িয়ে পড়লো সব। দ্রুত বদলে গেলো নিউ ইয়র্কের চেহারা। বদলাতে শুরু করলো পুরো পৃথিবী। বেলা সোয়া দুইটার মধ্যেই সব সড়ক আর সুড়ঙ্গ বন্ধ করে দেওয়া হলো। প্রেসিডেন্ট বুশ এক বার্তায় জানালেন, আমেরিকার মাটিতে জঘন্য হামলা হয়েছে। কেউ একজন হামলা করেছেন।

ব্যস, এতটুকুই যথেষ্ট। আফগানিস্তানে হামলা করতে তোড়জোর শুরু করলেন প্রেসিডেন্ট বুশ। সেইসঙ্গে ব্যস্ততা শুরু হলো গণমাধ্যমের। যুদ্ধ কাভার করতে ছুটলেন যুদ্ধসাংবাদিকেরা।

ইভন রিডলে প্রথমে গেলেন পাকিস্তান। সেখান থেকে সীমানা পেরিয়ে আফগানিস্তান। রণক্ষেত্র থেকে সংবাদ পাঠানোর দুঃসাহস দেখালেন এই বৃটিশ সাংবাদিক। কিন্তু টিকে থাকতে পারেননি। তালেবানের হাতে বন্দী হন রিডলে।
সারা পৃথিবীতে তাকে নিয়ে বইতে থাকে ঝড়। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হতে থাকে তালেবানদের নৃশংসতার কথা! সভ্য বিশ্বের অনেকেই ধারণা করেন, এতোদিনে হয় রিডলেকে খুন করা হয়েছে। নয় তাকে বানানো হয়েছে যৌনদাসি।

কিন্তু আদতে কী ঘটেছিলো?
যা ঘটেছিলো সেটা জানিয়েছেন রিডলি নিজেই, দশদিন পর তালেবানদের বন্দিশালা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর।
আফগানিস্তান থেকে মুক্ত হয়ে তিনি যখন দেশে ফিরলেন। সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখে ফেললেন একটি বই। এতে জানিয়েছেন, দুর্ধর্ষ আফগানিস্তানের বুনো প্রকৃতি তার হৃদয় চুরি করেছে।

মূলত বন্দিশালা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই পাল্টে গিয়েছিলো তার হৃদয়। এর কিছুদিন পরে এই সাংবাদিক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।
এর পেছনের কারণ কী?
ইভন রিডলে জানালেন, কেবল আফগানিস্তান নয়, সেখানকার মানুষের ধর্মও তার হৃদয় চুরি করেছে।
রিডলে তার বই ‘ইন দি হ্যান্ডস অব দি তালেবান’-এ জানান, আফগানিস্তান থেকে তার মুগ্ধতা নিয়ে ফেরার কথা।
বইটি তিনি শুরু করেন তার সাংবাদিকতা জীবনের অন্য আট-দশটা এসাইনমেন্টের কিছু অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে। সেইসঙ্গে জানিয়েছেন নিজের পরিচয়ও। বইয়ের ফ্ল্যাপে দেওয়া তথ্য বলছে, তার জন্ম ১৯৫৮ সালের ২৩ এপ্রিল। তিন বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। ইংল্যান্ডের ডারহামের স্ট্যানলিতে বড় হয়েছেন রিডলি। স্ট্যানলি নিউজ নামের একটি স্থানীয় সংবাদপত্রে চাকরি শুরু করেন তিনি। লন্ডন কলেজ অব প্রিন্টিংয়ে পড়াশোনা করেন। পরে কাজ করেন দ্য সানডে টাইমস, দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট, অন সানডে, দ্য অবজারভার, ডেইলি মিরর এবং নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড-এর মতো ডাকসাইটে সংবাদমাধ্যমে। তাছাড়া তার ছিলো সৈনিকের প্রশিক্ষণও।

রিডলির লেখা বই। ইন্টারনেট  সাংবাদিকতার নেশা একবার যাকে ধরেছে, তা ছাড়িয়ে নেওয়া কঠিন। রিডলিও ছাড়াতে পারতেন না। চেষ্টাই করেননি। আসলে এমন রোমাঞ্চকর জীবন তিনি উপভোগ করেন। সাংবাদিকতা জীবন শুরু করার আগে তিনি স্থানীয় প্রতিরক্ষা বিভাগে কাজ করেছেন কিছুদিন। সেই জীবনটাও ছিলো রোমাঞ্চকর। মূলত ছোটবেলা থেকেই রোমাঞ্চের সঙ্গেই ছিলেন এই নারী।   যুদ্ধসাংবাদিক ইভন রিডলে   তালেবানের কারাগার থেকে ফিরে এক যুদ্ধসাংবাদিক :  শাহ মুহাম্মদ মোশাহিদ ইভন রিডলে, একজন যুদ্ধসাংবাদিক। যুদ্ধ কাভার করার আগে তার দিন কাটছিলো অন্য আট-দশজন সাংবাদিকের মতোই। সংবাদের খোঁজ, তদন্ত এবং সংবাদ তৈরি করা। তারপর হেডকোয়ার্টারে জমা দেওয়া। কখনো কখনো সোর্সদের সঙ্গে অভিনয় করতে হয়েছে। রেস্তোরায় যেতে হয়েছে বারবনিতা সেজেও।  এ নিয়ে রিডলির মায়ের অভিযোগের শেষ নেই। তিনি চাইতেন তার কন্যা এমন কোনো কাজ করুক, যার মাধ্যমে সম্মান ধরে রাখা যায়। কিন্তু সাংবাদিকতার নেশা একবার যাকে ধরেছে, তা ছাড়িয়ে নেওয়া কঠিন।  রিডলিও ছাড়াতে পারতেন না। চেষ্টাই করেননি। আসলে এমন রোমাঞ্চকর জীবন তিনি উপভোগ করেন। সাংবাদিকতা জীবন শুরু করার আগে তিনি স্থানীয় প্রতিরক্ষা বিভাগে কাজ করেছেন কিছুদিন। সেই জীবনটাও ছিলো রোমাঞ্চকর। মূলত ছোটবেলা থেকেই রোমাঞ্চের সঙ্গেই ছিলেন এই নারী।  যে যেভাবে জীবন কাটাতে চায়, তার জীবন সেভাবেই কাটে। প্রচলিত এই কথাটি অক্ষরে অক্ষরে সত্য হয়েছে রিডলের বেলায়।  হুম, একটা দিন ঘুরিয়ে দিলো তার জীবন। রিডলির সামনে এসে দাঁড়ালো মহা রোমাঞ্চকর এক সময়। দিনটা ছিলো ১১ সেপ্টেম্বর, ২০০১। সারা পৃথিবীর রাজনীতি উলট-পালট হয়েছিলো এই দিনে। নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে আঘাত হেনেছিলো দুইটি বিমান। দেখতে দেখতেই ধুলির মতো গড়িয়ে পড়লো সব। দ্রুত বদলে গেলো নিউ ইয়র্কের চেহারা। বদলাতে শুরু করলো পুরো পৃথিবী। বেলা সোয়া দুইটার মধ্যেই সব সড়ক আর সুড়ঙ্গ বন্ধ করে দেওয়া হলো। প্রেসিডেন্ট বুশ এক বার্তায় জানালেন, আমেরিকার মাটিতে জঘন্য হামলা হয়েছে। কেউ একজন হামলা করেছেন।  ব্যস, এতটুকুই যথেষ্ট। আফগানিস্তানে হামলা করতে তোড়জোর শুরু করলেন প্রেসিডেন্ট বুশ। সেইসঙ্গে ব্যস্ততা শুরু হলো গণমাধ্যমের। যুদ্ধ কাভার করতে ছুটলেন যুদ্ধসাংবাদিকেরা।  ইভন রিডলে প্রথমে গেলেন পাকিস্তান। সেখান থেকে সীমানা পেরিয়ে আফগানিস্তান। রণক্ষেত্র থেকে সংবাদ পাঠানোর দুঃসাহস দেখালেন এই বৃটিশ সাংবাদিক। কিন্তু টিকে থাকতে পারেননি। তালেবানের হাতে বন্দী হন রিডলে। সারা পৃথিবীতে তাকে নিয়ে বইতে থাকে ঝড়। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হতে থাকে তালেবানদের নৃশংসতার কথা! সভ্য বিশ্বের অনেকেই ধারণা করেন, এতোদিনে হয় রিডলেকে খুন করা হয়েছে। নয় তাকে বানানো হয়েছে যৌনদাসি।  কিন্তু আদতে কী ঘটেছিলো? যা ঘটেছিলো সেটা জানিয়েছেন রিডলি নিজেই, দশদিন পর তালেবানদের বন্দিশালা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর। আফগানিস্তান থেকে মুক্ত হয়ে তিনি যখন দেশে ফিরলেন। সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখে ফেললেন একটি বই। এতে জানিয়েছেন, দুর্ধর্ষ আফগানিস্তানের বুনো প্রকৃতি তার হৃদয় চুরি করেছে।   মূলত বন্দিশালা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই পাল্টে গিয়েছিলো তার হৃদয়। এর কিছুদিন পরে এই সাংবাদিক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। এর পেছনের কারণ কী? ইভন রিডলে জানালেন, কেবল আফগানিস্তান নয়, সেখানকার মানুষের ধর্মও তার হৃদয় চুরি করেছে। রিডলে তার বই ‘ইন দি হ্যান্ডস অব দি তালেবান’-এ জানান, আফগানিস্তান থেকে তার মুগ্ধতা নিয়ে ফেরার কথা। বইটি তিনি শুরু করেন তার সাংবাদিকতা জীবনের অন্য আট-দশটা এসাইনমেন্টের কিছু অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে। সেইসঙ্গে জানিয়েছেন নিজের পরিচয়ও। বইয়ের ফ্ল্যাপে দেওয়া তথ্য বলছে, তার জন্ম ১৯৫৮ সালের ২৩ এপ্রিল। তিন বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। ইংল্যান্ডের ডারহামের স্ট্যানলিতে বড় হয়েছেন রিডলি। স্ট্যানলি নিউজ নামের একটি স্থানীয় সংবাদপত্রে চাকরি শুরু করেন তিনি। লন্ডন কলেজ অব প্রিন্টিংয়ে পড়াশোনা করেন। পরে কাজ করেন দ্য সানডে টাইমস, দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট, অন সানডে, দ্য অবজারভার, ডেইলি মিরর এবং নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড-এর মতো ডাকসাইটে সংবাদমাধ্যমে। তাছাড়া তার ছিলো সৈনিকের প্রশিক্ষণও।  যুদ্ধক্ষেত্রে সৈনিকের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এক সাংবাদিকের চাইতে যুৎসই সংবাদ আর কেই বা সংগ্রহ করতে পারবে? ইভন রিডলে প্রবেশ করলেন আফগানিস্তানে। সঙ্গে কয়েকজন গাইড। তবে এদের ওপর কতটা নির্ভর করা যায়! রিডলের সামনে অচেনা দুনিয়া। আর পদে পদে মৃত্যুর ঝুঁকি।  এইসব ঝুঁকি মাথায় নিয়েই তিনি ঘুরতে চেয়েছিলেন আফগানিস্তানের পথে-প্রান্তরে। কিন্তু অভিনয়ের সামান্য আনাড়িপনায় ধরা পড়েন তালেবানের হাতে।  রিডলি যাচ্ছিলেন গাধার পিঠে চড়ে। গায়ে বোরখা। বাইরে থেকে ঠাহর করার উপায় নেই, তিনি এক বিদেশিনী। এই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছিলেন তিনি। বোরখার আড়াল থেকে বের করে আনেন ক্যামেরা। কিন্তু গাধার দুলকি-চাল বাধ সাধে। ঝাঁকুনিতে ক্যামেরার ফিতেটা নেমে আসে। তখনি এর ওপর চোখ পড়ে এক তালেবান যোদ্ধার।  ধরা পড়েন এই সাংবাদিক। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় গাড়িতে করে। ওই গাড়িটি পুরো শহর ঘুরে তাকে প্রদর্শন করে। পরে বন্দি করে কারাগারের কামরায়।  ধারণা ছিলো, রিডলির ওপর নেমে আসবে বর্বর নির্যাতন। কিন্তু না। রিডলিকে অবাক করে দেয় তালেবানের আচরণ। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে এক বক্তৃতায় তিনি তার জীবনের গল্প শুনিয়েছেন। এতে জানান, প্রথম দিকে বন্দি করার প্রতিবাদে হাঙ্গার স্ট্রাইক করেছিলেন রিডলি। কিন্তু তালেবানদের জোরাজুড়িতে স্ট্রাইক ভাঙতে বাধ্য হন। পরে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য তালেবানের কাছে একটি টেলিফোন চান রিডিলি। তবে শুরুতে তাকে সন্দেহ করা হয়। ভেবে নেওয়া হয় তিনি মার্কিন চর। তবে তার সঙ্গে কোনোরকম দুর্ব্যবহার করেননি কোনো তালেবান সদস্য। নিজেকে সাংবাদিক দাবি করার পর স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে তাকে যোগাযোগ করিয়ে দেয় তালেবান।   এর মধ্যে ঘটে যায় আরেক অভ’তপূর্ব ঘটনা। আচমকা জানানো হয়, তার সঙ্গে কথা বলতে আসবেন এক মাওলানা। দাড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে মাওলানা কামরায় প্রবেশ করেন। তারপর জানতে চান রিডলির ধর্ম কী? ইভন রিডলি জানান, তিনি খৃস্টান। কোন গোত্রের রিডলি জানান, তিনি প্রটোস্ট্যান্ট। এবার মাওলানার চেহারায় ফুটে উঠে ক্রুর হাসি।  তারপরই ইসলাম গ্রহণের প্রস্তাব দেন তিনি। এই প্রস্তাবে হ্যাঁ বলবেন নাকি ফিরিয়ে দেবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না তিনি। হ্যাঁ বললেও বিপদ হতে পারে। ফিরিয়ে দিলেও হতে পারে মৃত্যুদন্ড।  তাই রিডলি জানালেন, তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হলে বিষয়টি নিয়ে তিনি ভাববেন। ফিরে গিয়ে ইসলাম নিয়ে পড়াশুনা করবেন। তখন যদি ভালো মনে হয়, তবে ইসলাম গ্রহণ করবেন।  জবাব শুনে হাসলেন মাওলানা। হাসতে হাসতেই বেরিয়ে গেলেন কামরা থেকে। এরপর শুরু হলো রিডলির সুখের দিন। ঘোষণা এলো, তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। মুক্ত হয়ে রিডলি তার কথা রেখেছিলেন। তিনি ইসলাম নিয়ে পড়াশুনা করেছেন। এবং ২০০৩ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণও করেন।  মুসলমান রিডলি হয়ে উঠেন ইসলামের পক্ষের বক্তা। তিনি বিভিন্ন সভায় তার আফগানিস্তানের অভিজ্ঞতার কথা জানান। তালেবানের ভালো ব্যবহারের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। মানুষকে জানান কুখ্যাত মার্কিন বন্দিশালা ‘গুয়ানতানামো বে’ এবং ‘আবু গারিব’-এর নির্যাতনের কথা। তুলনামূলক বিচার করেন। রিডলি বলেন, ‘ওইসব বন্দিশালায় মানুষকে কীভাবে নির্যাতন করা হয়, তা সবারই জানা। অন্যদিকে আফগানিস্তানের বন্দিশালার অবস্থা আমি দেখে এসেছি। এরা পৃথিবীর কাছে অসভ্য জাতি হিসেবে পরিচিত। অথচ এই অসভ্যদের কাছে আমি পেয়েছি সভ্য আচরণ।’  ইসলাম গ্রহণের পর রিডলি নানা বিষয় নিয়ে সরব থাকেন। কখনো ইসলামে নারীর অধিকার নিয়ে স্পষ্ট ভাষণ দেন। কখনো সন্ত্রাসবাদ নিয়ে বলেন। কখনো ফিলিস্তিনীদের আন্দোলনের পক্ষে জোর সমর্থন জানান। এসব বিষয় নিয়ে ইভন রিডলির আরেক বই ‘টিকেট টু প্যারাডাইস’। এর প্রচ্ছদ করা হয়েছে হামাস যোদ্ধাদের ছবি দিয়ে। এ কারণে বইটি ইসরাইলে নিষিদ্ধ।  ইভন রিডলি এখনো লিখে যাচ্ছেন। করে যাচ্ছেন সাংবাদিকতাও। বিশ্ব তোলপাড় করা সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাসহ বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত আছেন তিনি।
রিডলির লেখা বই। ইন্টারনেট থেকে ছবিটি নেওয়া

 

যুদ্ধক্ষেত্রে সৈনিকের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এক সাংবাদিকের চাইতে যুৎসই সংবাদ আর কেই বা সংগ্রহ করতে পারবে?
ইভন রিডলে প্রবেশ করলেন আফগানিস্তানে। সঙ্গে কয়েকজন গাইড। তবে এদের ওপর কতটা নির্ভর করা যায়! রিডলের সামনে অচেনা দুনিয়া। আর পদে পদে মৃত্যুর ঝুঁকি।

এইসব ঝুঁকি মাথায় নিয়েই তিনি ঘুরতে চেয়েছিলেন আফগানিস্তানের পথে-প্রান্তরে। কিন্তু অভিনয়ের সামান্য আনাড়িপনায় ধরা পড়েন তালেবানের হাতে।

রিডলি যাচ্ছিলেন গাধার পিঠে চড়ে। গায়ে বোরখা। বাইরে থেকে ঠাহর করার উপায় নেই, তিনি এক বিদেশিনী। এই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছিলেন তিনি। বোরখার আড়াল থেকে বের করে আনেন ক্যামেরা। কিন্তু গাধার দুলকি-চাল বাধ সাধে। ঝাঁকুনিতে ক্যামেরার ফিতেটা নেমে আসে। তখনি এর ওপর চোখ পড়ে এক তালেবান যোদ্ধার।

ধরা পড়েন এই সাংবাদিক। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় গাড়িতে করে। ওই গাড়িটি পুরো শহর ঘুরে তাকে প্রদর্শন করে। পরে বন্দি করে কারাগারের কামরায়।

ধারণা ছিলো, রিডলির ওপর নেমে আসবে বর্বর নির্যাতন। কিন্তু না। রিডলিকে অবাক করে দেয় তালেবানের আচরণ।
মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে এক বক্তৃতায় তিনি তার জীবনের গল্প শুনিয়েছেন। এতে জানান, প্রথম দিকে বন্দি করার প্রতিবাদে হাঙ্গার স্ট্রাইক করেছিলেন রিডলি। কিন্তু তালেবানদের জোরাজুড়িতে স্ট্রাইক ভাঙতে বাধ্য হন। পরে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য তালেবানের কাছে একটি টেলিফোন চান রিডিলি। তবে শুরুতে তাকে সন্দেহ করা হয়। ভেবে নেওয়া হয় তিনি মার্কিন চর। তবে তার সঙ্গে কোনোরকম দুর্ব্যবহার করেননি কোনো তালেবান সদস্য। নিজেকে সাংবাদিক দাবি করার পর স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে তাকে যোগাযোগ করিয়ে দেয় তালেবান।

এর মধ্যে ঘটে যায় আরেক অভ’তপূর্ব ঘটনা। আচমকা জানানো হয়, তার সঙ্গে কথা বলতে আসবেন এক মাওলানা। দাড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে মাওলানা কামরায় প্রবেশ করেন। তারপর জানতে চান রিডলির ধর্ম কী?
ইভন রিডলি জানান, তিনি খৃস্টান।
কোন গোত্রের
রিডলি জানান, তিনি প্রটোস্ট্যান্ট।
এবার মাওলানার চেহারায় ফুটে উঠে ক্রুর হাসি।

তারপরই ইসলাম গ্রহণের প্রস্তাব দেন তিনি। এই প্রস্তাবে হ্যাঁ বলবেন নাকি ফিরিয়ে দেবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না তিনি। হ্যাঁ বললেও বিপদ হতে পারে। ফিরিয়ে দিলেও হতে পারে মৃত্যুদন্ড।

তাই রিডলি জানালেন, তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হলে বিষয়টি নিয়ে তিনি ভাববেন। ফিরে গিয়ে ইসলাম নিয়ে পড়াশুনা করবেন। তখন যদি ভালো মনে হয়, তবে ইসলাম গ্রহণ করবেন।

জবাব শুনে হাসলেন মাওলানা। হাসতে হাসতেই বেরিয়ে গেলেন কামরা থেকে।
এরপর শুরু হলো রিডলির সুখের দিন। ঘোষণা এলো, তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। মুক্ত হয়ে রিডলি তার কথা রেখেছিলেন। তিনি ইসলাম নিয়ে পড়াশুনা করেছেন। এবং ২০০৩ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণও করেন।

মুসলমান রিডলি হয়ে উঠেন ইসলামের পক্ষের বক্তা। তিনি বিভিন্ন সভায় তার আফগানিস্তানের অভিজ্ঞতার কথা জানান। তালেবানের ভালো ব্যবহারের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। মানুষকে জানান কুখ্যাত মার্কিন বন্দিশালা ‘গুয়ানতানামো বে’ এবং ‘আবু গারিব’-এর নির্যাতনের কথা। তুলনামূলক বিচার করেন। রিডলি বলেন, ‘ওইসব বন্দিশালায় মানুষকে কীভাবে নির্যাতন করা হয়, তা সবারই জানা। অন্যদিকে আফগানিস্তানের বন্দিশালার অবস্থা আমি দেখে এসেছি। এরা পৃথিবীর কাছে অসভ্য জাতি হিসেবে পরিচিত। অথচ এই অসভ্যদের কাছে আমি পেয়েছি সভ্য আচরণ।’

ইসলাম গ্রহণের পর রিডলি নানা বিষয় নিয়ে সরব থাকেন। কখনো ইসলামে নারীর অধিকার নিয়ে স্পষ্ট ভাষণ দেন। কখনো সন্ত্রাসবাদ নিয়ে বলেন। কখনো ফিলিস্তিনীদের আন্দোলনের পক্ষে জোর সমর্থন জানান। এসব বিষয় নিয়ে ইভন রিডলির আরেক বই ‘টিকেট টু প্যারাডাইস’। এর প্রচ্ছদ করা হয়েছে হামাস যোদ্ধাদের ছবি দিয়ে। এ কারণে বইটি ইসরাইলে নিষিদ্ধ।

ইভন রিডলি এখনো লিখে যাচ্ছেন। করে যাচ্ছেন সাংবাদিকতাও। বিশ্ব তোলপাড় করা সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাসহ বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত আছেন তিনি।

প্রতিবেদনটির ভিডিও দেখুন

বিডিভিউজ-এ প্রকাশিত লেখার স্বত্ব সংরক্ষিত। তবে শিক্ষা এবং গবেষণার কাজে সূত্র উল্লেখ করে ব্যবহার করা যাবে